সাপের রূপে জ্বীন এসে মানুষকে কামড়াচ্ছে!

16

পূর্বদেশ ডেস্ক

সাপ দেখেনি কেউ। কিন্তু দংশনের শিকার হয়েছেন মেহেরপুরের উজলপুর গ্রামের অর্ধশতাধিক মানুষ। ওঝা বলেছেন, এটি জ্বীন সাপ। সাপের রূপে জ্বীন এসে মানুষকে কামড়াচ্ছে। ব্যাস!! রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে মেহেরপুরের উজুলপুর গ্রামের নারী পুরুষ, বৃদ্ধ বনিতার। আতঙ্কে অনেকেই ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
উজলপুর গ্রামটি মেহেরপুর সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। জ্বীন সাপ থেকে বাঁচতে গ্রামের বাসিন্দারা ওঝা ও সাপুড়েদের কাছে দৌড়াচ্ছেন। ঝাড়-ফুঁক নিচ্ছেন কবিরাজের কাছ থেকে। শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই আছেন এ লাইনে। জ্বীন সাপে আতঙ্কের সুযোগ নিয়েছেন স্থানীয় ওঝা, সাপুড়ে, কবিরাজরাও। জ্বীন সাপে দংশিত হচ্ছে মানুষ- এমন আতঙ্ক ছড়িয়ে তারা লুটে নিচ্ছে জনসাধারণের অর্থ।
প্রকৃতি ঘেরা শান্ত গ্রামটির অধিকাংশ মানুষ কৃষি ও ক্ষুদ্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ঘটনার শুরু হয় গত ১৩ মে সকালে। স্থানীয়রা জানতে পারেন উজলপুর গ্রামের কুঠিপাড়ার কৃষক কামাল হোসেনের ছেলে মুরসালিন সাপের কামড়ে মারা গেছে। সাপে কাটার পর তাকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভোরের দিকে মৃত্যু হয় মুরসালিনের।
১৪ মে সন্ধ্যায় গ্রামের স্টুডিও ব্যবসায়ী রুবেল আহমেদ টয়লেট থেকে বের হওয়ার সময় হাতে সাপের কামড় অনুভব করেন। তিনি জানান, তার হাতে সাপ দংশন করায় পার্শ্ববর্তী শোলমারী গ্রামের ওঝা রতন হোসেনকে কল দেন। তিনি দোয়া পড়ে হাতে ফুঁ দিতে বলেন। সে মোতাবেক দোয়া পড়ে হাতে ফুঁ দিতেই জ্বালাপোড়া শেষ হয়ে যায় বলেও তিনি জানান।
এক গৃহবধূ জানান, তার বাঁ হাতের কনুইয়ের উপর জ্বালাপোড়া শুরু হয়। তার স্বামী ও পরিবারের লোকজন পাশের গ্রামে রতন ওঝার কাছে নিয়ে যায়। ওঝা তাকে ঝাড়ফুঁক দিয়ে গলায় কাঁড় পরিয়ে দেন। এর কিছুক্ষণ পর তার জ্বালাপোড়া বন্ধ হয়ে যায়। খবর বাংলানিউজ’র
নুর আলী নামে এক কৃষকও সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানান। জ্বীন সাপ তার বুকে কামড়ায়। পরে গ্রামের ওঝা আবুল হাসেমের কাছে গিয়ে ঝাড়ফুঁক নিয়ে সুস্থ হন। সাপে কামড়ানো রোগীর শরীরে বিষ থাকলে ওঝাদের ৫০০ টাকা ফি দিতে হয়। বিষ না থাকলে দিতে হয় তিনশ টাকা।
গ্রামের বেশ কয়েকজন জানান, সাপে কাটার কথা শোনা গেলেও কেউ এখনও সে সাপ দেখেননি। কবিরাজ-ওঝারা বলছেন, এটি জ্বীন সাপ। গ্রামের সাধারণ মানুষ তা বিশ্বাসও করছেন।
মেহেরপুর সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. অলোক কুমার দাশ বলেন, এটা শুধুমাত্র গুজব। ঘটনাটি জানার পর স্বাস্থ্য বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উজলপুর গ্রাম পরিদর্শন করা হয়েছে। একটি চক্র আতঙ্ক ছড়িয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে।