সাংবাদিক হেনস্থাসহ পৃথক ৬ ঘটনায় চবিতে বহিষ্কৃত ১৮ জনের ১৭ জনই ছাত্রলীগকর্মী

18

চবি প্রতিনিধি

সাংবাদিককে মারধরের হুমকি ও ক্যাম্পাসে সংঘর্ষসহ পৃথক ৬ ঘটনায় মোট ১৮ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রশাসন। এর মধ্যে ১৭ জনই শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রæপ-উপগ্রæপের নেতাকর্মী। তাদের কয়েকজন শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদেও আছেন। গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরিণ আখতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত চবি বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিন-এর সভায় তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। গতকাল বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বোর্ড অব রেসিডেন্স হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সদস্য সচিব ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া।
জানা গেছে, সভার ১ম সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত বছরের ১১ আগস্ট দিবাগত রাতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হলে সংগঠিত ঘটনায় ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ও শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক তাসফিয়া জাসারাত নোলককে ১ বছর ৬ মাসের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
২য় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে আরবি বিভাগের ২০১৯- ২০২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও দৈনিক নয়া শতাব্দী পত্রিকা ও ঢাকা মেইল অনলাইন পোর্টালের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি (বর্তমান দৈনিক কালবেলার প্রতিনিধি) রেদুয়ান আহমেদকে এ এফ রহমান হলে নিজ কক্ষে অবস্থানকালীন ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিতের ঘটনায় লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আরশিল আজিম নিলয় ও নৃবিজ্ঞান বিভাগ একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শোয়েব মোহাম্মদ আতিককে ১ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
৩য় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত বছরের ৮ অক্টোবর আলাওল হলের প্রভোস্ট অফিস কক্ষ ভাঙচুর, প্রভোস্টকে টেলিফোনে হুমকি প্রদান ও কর্তব্যরত কর্মচারীদের লাঞ্ছিতের ঘটনায় সমাজতত্ত¡ বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের উপ-শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক হাসান মাহমুদকে ১ বছর বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়াও একই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট হলের ছাত্র না হয়েও ঘটনায় সরাসরি অংশগ্রহণ, জোরপূর্বক উক্ত হলে অবস্থান ও শিক্ষকের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের ঘটনায় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলামকে ২ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
৪র্থ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত বছরের ২ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে এ এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের দুই উপগ্রæপ ভিএক্স ও বিজয়ের মধ্যকার সংঘর্ষ, হল ভাঙচুর, কর্তব্যরত প্রক্টরিয়াল বডির সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও কর্তব্যরত সাংবাদিকদের উপর হামলার হুমকির ঘটনায় মোট ৬ জন ছাত্রলীগকর্মীকে ১ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা হলেন সংস্কৃত বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক অনিক অনিক দাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের তনয় কান্তি সরকার, একই বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের নাহিদুল ইসলাম, অর্থনীতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের লাবিব সাইদ ফাইয়াজ, ইতিহাস বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সিফাতুল ইসলাম, একই বিভাগের ২০২০-২১ বিভাগের মো. মোবারক হোসেন।
৫ম সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত ৫ ও ৬ জানুয়ারি গভীর রাত পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী হল ও শাহজালাল হল সংলগ্ন এলাকায় ছাত্রলীগের দুই গ্রæপ সিক্সটি নাইন ও ভি এক্সে মধ্যকার সংঘর্ষ, দোকানপাট ভাঙচুর, ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি, আইন-শৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ ইত্যাদি ঘটনায় মোট ৬ ছাত্রলীগকর্মীকে ১ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা হলেন ফাইন্যান্স বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের উপ-তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আমিরুল হক চৌধুরী, বাংলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মাহমুদুল হাসান ইলিয়াস, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-১৯ শিক্ষাবর্ষের মোহাম্মদ ফাহিম, ইতিহাস বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সদস্য মো. ইকরামুল হক, দর্শন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের নয়ন দেব নাথ।
৬ষ্ট সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত বছরের ২৪ আগস্ট মুঠোফোন ও ব্যবহৃত নোটবুকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাটল ট্রেনে নাশকতার পরিকল্পনা ও ভয়াল সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত থাকার একাধিক প্রমাণ পাওয়া ও নিজের স্বীকারোক্তির প্রেক্ষিতে আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মী মো. জোবায়ের হোসেনকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. শহিদুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন সময় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাÐে জড়িত থাকার দায়ে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে মোট ১৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে। ভবিষ্যতে কেউ যদি এ ধরনের কর্মকাÐে জড়িত হয় তার বিরুদ্ধেও প্রশাসন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিবে।
পরীক্ষা দিচ্ছেন বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী : এদিকে বহিষ্কৃত হয়েও তৃতীয় বর্ষের সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান ইলিয়াস। গতকাল বুধবার দুপুর দেড়টায় বিভাগটির ৪২০ নম্বর কক্ষে তাকে পরীক্ষা দিতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ড. মোহাম্মদ বশির আহাম্মদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার বহিষ্কারের ব্যাপারে আমাদের এখনও কোনো চিঠি বা নোটিশ দেয়নি। তাই আমরা তাকে পরীক্ষা দিতে দিয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বোর্ড অব রেসিডেন্স হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সদস্য সচিব রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, গতকাল দিবাগত রাত ১২টার দিকে আমরা লিখিত আদেশ তৈরি করে সাংবাদিকদের জানিয়েছি। কিছু কাজ এখনও বাকি রয়েছে। তাই সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে জানানো হয়নি।