সমুদ্রভিত্তিক শক্তিশালী অর্থনীতি গঠনে বিকল্প নেই নৌবাহিনীর : প্রধানমন্ত্রী

13

পূর্বদেশ ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্র অঞ্চলের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং সমুদ্রভিত্তিক শক্তিশালী অর্থনীতি গঠনের জন্য শক্তিশালী নৌবাহিনীর কোনো বিকল্প নেই। তিনি গতকাল রোববার সকালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এভিয়েশন বহরে দু’টি মেরিটাইম প্যাট্রল এয়ারক্রাফট এমপিএ-৮৩২২ ও এমপিএ-৮৩২৭ সংযোজন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা নেভাল এভিয়েশন হ্যাঙ্গারের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন দুই এমপিএ সংযোজনের মাধ্যমে নেভাল অ্যাভিয়েশনের সক্ষমতা বহুলাংশে বাড়বে এবং এর মাধ্যমে স্বল্প সময়ে দ্রুততার সঙ্গে বাংলাদেশের সুবিশাল সমুদ্রসীমা টহল দেওয়া আরও সহজ হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ফোর্সেস গোল-২০৩০-এর আলোকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে একটি যুগোপযোগী ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নৌবহরে যুদ্ধজাহাজ সংযোজন, জাহাজগুলোর অপারেশনাল সক্ষমতা বাড়ানো এবং অপারেশনাল অ্যাভিয়েশন উইং গঠনসহ বিভিন্ন বাস্তবমুখী পরিকল্পনা নিয়েছে। জাতির পিতার প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। খবর বাসস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শান্তি চাই, যুদ্ধ চাই না। বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষায় আমাদের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে, যাতে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সবসময় ধরে রাখতে পারি। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে (বাহিনীকে) উপযুক্ত করে তৈরী করছি ।
শেখ হাসিনা বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকার দেশের অথনৈতিক ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং দেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। কিন্তু করোনা ভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমাদের উন্নয়নের গতিটা কিছুটা শ্লথ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী উন্নত দেশগুলোও এখন হিমসিম খাচ্ছে। সেই অবস্থার মধ্য দিয়ে আমাদের চলতে হচ্ছে। তবে আমরা আমাদের নিজেদের সম্পদ এবং মাটি ও মানুষ দিয়েই এই দেশকে সুরক্ষিত রাখবো, যার যেখানে যতটুকু সুযোগ আছে আমাদের খাদ্য উৎপানে মনেযোগী হতে হবে।অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রীকে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়। নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
গভীর সমুদ্রে নজরদারী, উদ্ধার অভিযান ও অন্যান্য অপারেশনাল কার্যক্রমে এমপিএ এর কার্যকারিতা অপরিসীম উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, এরই ফলশ্রুতিতে ২০১৩ সালে পর্যায়ক্রমে দু’টি অত্যাধুনিক ডর্নিয়ার ২২৮এনজি মেরিটাইম প্যাট্রল এয়ারক্রাফট বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে সংযোজিত হয়। সূচনালগ্ন থেকে বিশাল এই সমুদ্রসীমা নজরদারির কাজ বাংলাদেশ নেভাল এভিয়েশানের এমপিএ স্কোয়াড্রন সর্বোচ্চ দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে পালন করে আসছে। সমুদ্রসীমায় নজরদারী বৃদ্ধির গুরুত্ব অনুধাবন করে ২০১৭ সালে বর্তমান সরকার অতিরিক্ত দুইটি এমপিএ ক্রয়ের কার্যক্রম গ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় নৌবহরে আজ (রোববার) সংযোজিত হলো আরও দুটি অত্যাধুনিক ডর্নিয়ার ২২৮এনজি মেরিটাইম প্যাট্রল এয়ারক্রাফট।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই ঘোষণা করেছিলেন, ‘ভূ-রাজনৈতিক প্রয়োজনে একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী গঠন করা হবে।’ তারই ধারাবাহিকতায় আমরা ১৯৯৬ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই নৌবাহিনীকে আধুনিক, দক্ষ ও শক্তিশালী বাহিনী হিসাবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন, নৌ-বহরে যুদ্ধ জাহাজ সংগ্রহ এবং বিদ্যমান জাহাজসমূহের অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধি, অপারেশনাল এভিয়েশান উইং গঠনসহ বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করি।
তিনি বলেন, সাবমেরিন ও অন্যান্য যুদ্ধ জাহাজসমূহকে পোতাশ্রয়ে নিরাপদ জেটি সুবিধা প্রদানে কক্সবাজারের পেকুয়াতে আধুনিক বেসিন সুবিধা সম্বলিত স্থায়ী সাবমেরিন ঘাঁটি ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও এভিয়েশান সক্ষমতাসহ বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে উপকূলবর্তী এলাকায় নৌবাহিনীর জাহাজসমূহের অপারেশানাল ও প্রশিক্ষণ সুবিধাসহ ‘বানৌজা শের-ই-বাংলা ঘাঁটি’র নির্মাণ কাজও অনেক দূর এগিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।