সব এলাকায় এক সাথে কাজ নয়

36

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, চট্টগ্রাম অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। ওয়াসার পানির ক্ষেত্রেও আমরা পিছিয়ে। চট্টগ্রাম শহরে দিন দিন মানুষ বাড়ছে। ৭০ লক্ষ মানুষের বসবাস এখন। ৩০ বছর আগের চেয়ে অনেক তফাৎ। পরিকল্পিতভাবে যদি শহরকে গড়া না হয় তাহলে এটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে। এই শহরে অনেকে এখনো নদী থেকে পানি এনে ফুটিয়ে পান করেন। এমন শহরে আমরা আছি।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্লুতে চট্টগ্রাম ওয়াসা আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন। চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্প (১ম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের বিষয়ে নগরবাসীর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ওয়াসা। পয়ঃবর্জ্য নিষ্কাশনের উদ্যোগ নেওয়ায় ওয়াসাকে ধন্যবাদ জানান মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, সরকারের প্রতিনিধিত্বের জন্য এটি হচ্ছে। ২০ লক্ষ লোক এটির সুবিধা ভোগ করবে। ২৮ হাজার সুয়্যারেজ সংযোগ দিতে গেলে কি হবে? রাস্তা কাটতে হবে। একটু দুর্ভোগ হলে সেটির জন্য সিটি কর্পোরেশনকে কথা শুনতে হবে। রাস্তা কাটার পর সেখানে প্যাচ ওয়ার্ক করতে হবে, কার্পেটিং করতে হবে। সিটি কর্পোরেশন কার্পেটিং করতে গেলে ওয়াসা বলবে সেখানে কাজ করতে হবে। টেস্ট করতে হবে, লিকেজ হচ্ছে কিনা সেটা দেখতে হবে। আমরা সামান্য কষ্ট হলে হৈ চৈ শুরু করি। যে এলাকাগুলোতে সুয়্যারেজ প্রকল্প হবে সেখানে একসাথে কাজ হলে দুর্ভোগের শেষ হবে না।
ওয়াসা পাইপ বোরিং করে নিয়ে গেলে দুর্ভোগ কমে যাবে জানিয়ে মেয়র বলেন, আমার প্রস্তাব হচ্ছে, সবগুলো এলাকায় একসাথে কাজ না করে একটি এলাকার কাজ শেষ হলে আরেকটি এলাকার কাজ করা। এতে দুর্ভোগ অনেকটা কমবে। ওয়াসা রাস্তার গভীরে কাজ করলেও রাস্তা ধসে যাবে। পোর্ট থেকে যে বড় বড় লরি আসে, এমনে রাস্তা ধসে যায়।রাস্তা ধসে গেলে এলাকায় বিপর্যয় নেমে আসবে।
তিনি বলেন, আগে জলাধার ছিলো, সেই জলাধার জলাবদ্ধতা থেকেও আমাদের রক্ষা করতো। মাস্টারপ্ল্যানেও জলাধারের কথা বলা হয়েছে। যদি বহুতল ভবনের উপরে সুইমিং পুল না করে জলাধার করা যায়, তাহলে পানির অভাব থেকে অনেকাংশে উপকার আসবে। বৃষ্টির পানি সে জলাধারে জমা হবে। আগে টিউবওয়েল বসালে পানি পাওয়া যেতো, এখন ডিপটিউবওয়েলেও পানি নেই। সমন্বিতভাবে এ ব্যাপারে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে।
মতবিনিময় সভায় গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক। একুশে পদক প্রাপ্তিতে তাঁকে চট্টগ্রাম ওয়াসার পক্ষ থেকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
বক্তব্যে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, পানির অপর নাম জীবন। ওয়াসা যতটুকু সম্ভব সুপেয় পানি সরবরাহের চেষ্টা করছে। আমাদের আনন্দ, অবশেষে ওয়াসার সুয়্যারেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অনেক পিছিয়ে। ঢাকার বেশিরভাগ এলাকা সুয়্যারেজের আওতায় আসলেও চট্টগ্রাম এতোদিন অন্ধকারে ছিল। এতে নদী ও খাল দূষিত হচ্ছে। স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা করতে হবে। সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। আমাদের এখানে সমস্যা হচ্ছে, আরম্ভ হয় শেষ হয় না। ওয়াসার কোন প্রকল্প দেরি হতে দেখি নাই। সুয়্যারেজ প্রকল্পও আশা করি ঠিক সময়ে সম্পন্ন হবে।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সুপেয় পানির জন্য আমাদের কর্ণফুলী ও হালদাকে দূষণ থেকে বাঁচাতে হবে। আমাদের এই দুটি নদী দূষণ হচ্ছে পয়ঃবর্জ্য ও খালের দূর্ষিত পানিতে। সুয়্যারেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই বর্জ্য অপসারিত হবে। এই দুটি নদী বাঁচলেই চট্টগ্রাম বাঁচবে।
স্বাগত বক্তব্যে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, দীর্ঘ ৬০ বছর পর স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ বসবাস যোগ্য শহর গড়তে সুয়্যারেজ প্রকল্প নেয়া হয়। বর্তমানে পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই। এসব বর্জ্য সরবাসরি নালা ও খাল হয়ে হালদা ও কর্ণফুলীতে পড়বে। দৈনিক ২৮৮ কোটি লিটার বর্জ্য বর্তমানে নালা-খালে পড়ছে। সুয়্যারেজ এ প্রকল্প ছাড়াও আরো পাঁচটি প্রকল্পের সমীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা।
মতবিনিময় সভায় সুয়্যারেজ প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি তাদের মতামত তুলে ধরেন।
মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, সুয়্যারেজে প্রকল্প প্রথম পর্যায়ে দৈনিক ১০ কোটি লিটার ক্ষমতার পরিশোধন প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হবে। বাসাবাড়ির তরলবর্জ্য সংগ্রহ ও পরিবহনের জন্য ২০০ কিলোমিটার পয়ঃপাইপ লাইন ও প্রায় ২৮ হাজারটি বাসাবাড়িতে সংযোগ প্রদান করা হবে। দৈনিক ৩০০টিন সেপটিক ¯øাজ পরিশোধন প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হবে। প্রকল্প চলাকালিন সময়ে বাসাবাড়ির সংযোগ বিনামূল্যে প্রদান করা হবে। তবে প্রকল্পের কাজের সময় সংযোগ না নিলে পরবর্তীতে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে সংযোগ নিতে হবে।