সবকিছুই যেন ‘স্বাভাবিক’

86

সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই নগরীতে। হাট-বাজার, দোকান, মূল সড়ক, অলি-গলিতে উপচে পড়া ভিড়। চলছে কিছু গণপরিবহনও। ঘরে থাকছেন না বেশিরভাগ মানুষ। স্বাস্থ্যবিধিও মানছেন না। যেন সব আগের মত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। এরই মধ্যে ১০ মে থেকে খুলছে দোকানপাট ও শপিংমল। দেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। সেটাই ছিল অঘোষিত লকডাউন। দু’দফায় তা ৭ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গতকাল এক ঘোষণায় ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয় সাধারণ ছুটি। এরই মধ্যে চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গত রবিবার একদিনেই শনাক্ত হয়েছেন ১৩ জন। এনিয়ে শনাক্ত হলেন ৮৯ জন। মারা গেছেন ৭ জন।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শুধু অলি-গলি নয়, মূল সড়ক এলাকাগুলোতেও মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। আন্দরকিল্লা মোড়, মোমিন রোড, জামালখান, চকবাজার, জিইসি মোড়, নিউ মার্কেট মোড়, পাথরঘাটা, নিউ মার্কেট, মাদারবাড়ি, আগ্রাবাদ, হালিশহর, বড়পোল, বহদ্দারহাট মোড় সহ নগরীর মূল সড়কগুলোতেও মানুষ আর মানুষ। কয়েকদিন ধরে এ সংখ্যা বেড়েই চলেছে। টং দোকানে চা পান, দাঁড়িয়ে গল্প গুজব করা, ফুটপাতে ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে জটলা পাকিয়ে পণ্য কিনতে দেখা যায় মানুষকে। ফার্মেসী, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানসহ খোলা থাকা দোকানগুলোর সামনে অনেকে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছেন।
নগরের মূল সড়ক আন্দরকিল্লা থেকে চেরাগি মোড় পর্যন্ত ভাসমান কাঁচাবাজার বসেছে ৮/১০টি স্থানে। সেসব স্থানে দেখা যায়, প্রতিটি ভ্যানের সামনেই ৫/৭ জন ক্রেতা দাঁড়িয়ে সবজি কিনছেন। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছেন লোকজন। মোড়ে মোড়ে অসংখ্য মানুষ গল্প করছে। চেরাগি মোড়ে আড্ডায় থাকা মাহবুবুল আলম বলেন, ‘ভাই সবসময়তো আর বাইরে থাকছি না। বের হয়ে ঘণ্টাখানেক পরতো আবার বাসায় চলে যাই’।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের অবস্থা আরো খারাপ। সেখানে শত শত লোক সারাদিন কাজ করছে। ট্রাক থেকে মালামাল লোড-আনলোড করছে। একেক ট্রাকের সামনে পেছনে ১৫/২০ জন শ্রমিক মালামাল উঠানো নামানোর কাজ করছে। পুরো এলাকাজুড়ে মানুষ আর মানুষ। কেউ শুনছে না কারো কথা।
ফিরিঙ্গি বাজার নতুন ফিশারী ঘাট মার্কেট লোকে লোকারণ্য। প্রতিদিন সকালে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয় সেখানে। মাছ ব্যবসায়ী, পাইকারি, খুচরা ক্রেতা-বিক্রেতারা সেখানে যান মাছ বিকিকিনি করতে। দেখলে মনে হবে, মানুষের মেলা। পুরো মাঠ মানুষে ভর্তি হয়ে যায়।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শ্যামল কুমার নাথ জানান, লোকজনেক বার বার বলা হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করতে। পুলিশও মাঠে কাজ করছে। পুলিশ সাধ্যমত চেষ্টা করছে যাতে মানুষ সামাজিক দূরত্ব মেনে চলে। সরকারি বিধির বাইরে দোকান খোলা রাখতে দেয়া হয় না। মানুষকেও সচেতন হতে হবে।
এদিকে মূল বাজার থেকে কাঁচা বাজারগুলো সরিয়ে নেয়া হলেও সেখানেও একই অবস্থা। প্রতিটি কাঁচাবাজারে লোকজন ভিড় করে। প্যারেড মাঠে দেখা যায়, ক্রেতারা সামাজিক দূরত্ব মোটেই মানছেন না। ভিড় করেই পণ্যাদি কিনছেন। প্রতিটি পণ্যের দোকানেই ভিড়। দূরত্ব না মেনে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বাজার করছেন। রেল স্টেশনের মার্কেটেও একই দৃশ্য। সেখানেও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। শত শত লোক বাজার করছে।
কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন জানান, পুলিশ বার বার বলছে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে। অনেকে তা শুনতে চাইছে না। নিজেরা সচেতন না হলে পুলিশ কতক্ষণ সচেতন করতে পারে। তারপরও আমরা মাঠে থেকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
আবাসিক এলাকাগুলোতেও লোকজন রাস্তায় নেমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবস্থান করে গল্প করছে। জটলা হয়ে দাঁড়িয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ-যুবকরাই বের হচ্ছে বেশি। সামাজিক দূরত্ব মানার উপর গুরুত্ব দিচ্ছে না। বেশিরভাগ আবাসিক এলাকায় একই দৃশ্য দেখা যায়।
নগরীর বিভিন্ন সড়কে গণপরিবহনও চলাচল করতে দেখা গেছে। মাঝে মধ্যে বাস, টেম্পু চলাচল করছে। টমটম অহরহই চলছে। অবশ্য রাতের দৃশ্য পাল্টে যায়। সড়কে লোকজন থাকে না বললেই চলে। সকল দোকান পাট বন্ধ হয়ে যায়। যানবাহন ও জনশুন্য হয়ে যায় পুরো নগরী। অলিগলিতেও মানুষজন খুব কম থাকে।
আজ মঙ্গলবার থেকে খুলে দেয়া হচ্ছে দোকান পাট, শপিং মল। সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার জন্য নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। তবে কয়েকটি শর্ত দেয়া হলেও তা ক’জন মানবে-সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।