সকলকে আপন করে নেয়ার মোহনীয় ক্ষমতা ছিল মহিউদ্দিন চৌধুরীর : হানিফ

18

নিজস্ব প্রতিবেদক

অত্যন্ত পরিশ্রমী ও আন্দোলন সংগ্রামে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী কঠোর ছিলেন উল্লেখ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, মহিউদ্দিন ভাই আমাদের কাছে অনুকরণীয়। আমরা যারা ঢাকায় বসে রাজনীতি করছি, আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে মহিউদ্দিন ভাইয়ের আন্দোলন সংগ্রাম ছিল অনুকরণীয়। বিশেষ করে ১৯৯৬ সালে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এবং ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল সেসময় তাদের বিরুদ্ধে মহিউদ্দিন ভাইয়ের তীব্র আন্দোলন সারাদেশকে অনুপ্রাণিত করেছে। চট্টগ্রাম থেকে মহিউদ্দিন ভাইয়ের আন্দোলনের সূত্রধরেই সারাদেশের আন্দোলন চাঙ্গা হয়েছিল।
নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের এই সাংসদ বলেন,মহিউদ্দিন চৌধুরীর কাছে গরিব, ধনী, কামার, মুচি ভেদাভেদ ছিল না। সকলকেই তিনি সমানভাবে দেখতেন। সকলকে আপন করে নেয়ার মোহনীয় ক্ষমতা ছিল তার। হজ্ব কাফেলার মাধ্যমে মানবকল্যাণে জড়িত ছিলেন। বয়স্ক মানুষকে সেখানে সহযোগিতা করতেন। মহিউদ্দিন ভাই মানবিক নেতা ছিলেন। ১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ে কাজ করেছেন। বিএনপি ক্ষমতায় ছিল তখন, লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছিল, অথচ বিএনপি সরকার ছিল নিষ্ক্রিয়। দায়সারা বিবৃতি ও কিছু ত্রাণ পাঠিয়ে তাদের কার্যক্রম শেষ। হাজার হাজার মানুষের লাশ মহিউদ্দিন ভাই দাফন-সৎকার করেছেন। সেসময় মহিউদ্দিন চৌধুরী দায়িত্ব নিয়ে মানুষের মৃতদেহ দাফন-সৎকার করেছিলেন। মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখেছিলেন।
বিএনপির সমালোচনা করে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি-জামায়াত যখন আগুন সন্ত্রাস করে, দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করে তখন মহিউদ্দিন ভাইয়ের কথা বারবার মনে পড়ে। তাদের মতো বীর সেনানী ছিলেন বলেই জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার এতদিন নিরবচ্ছিন্নভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সবসময় ষড়যন্ত্র ছিল। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়েও ষড়যন্ত্র ছিল। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার মধ্যদিয়ে ঘৃন্যতম ষড়যন্ত্র করেছিল। ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতি হয়েছে। রণাঙ্গনের স্লোগান জয়বাংলা নিষিদ্ধ হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ নিষিদ্ধ করেছিল। এখনো ইতিহাস বিকৃতি হচ্ছে।
তিনি বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী জাতীয় নেতা হতে পারতেন, মন্ত্রী হতে পারতেন, এমপি হতে পারতেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা মহিউদ্দিন ভাইকে ঢাকায় এনে কেন্দ্রীয় পদ-পদবী দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সম্মানের সাথে বলেছিলেন- চট্টগ্রাম আমার প্রেম, চট্টগ্রাম আমার ভালবাসা, এই নগরীর ধূলিকণার সাথে থেকে আমি বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে চাই।
বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের জের টেনে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি নতুন ইস্যু নিয়ে মাঠে নেমেছে। তাদের নেত্রীকে বিদেশে পাঠাতে হবে। প্রতিদিন বিদেশে পাঠানোর চিৎকার করে যাচ্ছে। কিন্তু কোন যুক্তি কোন আইনের বলে বিদেশে পাঠাতে বলছেন সে ব্যাখ্যা দিন। আবার মানবতার কথাও বলছেন। বাংলাদেশ সরকার নাকি মানবিক না। মানবিকতার কথা বললে আপনাদের লজ্জা থাকা উচিত। আপনার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়ে এক এগারোর সময় মামলা হয়েছিল। সেই মামলা ১০ বছর ধরে চলেছে। আপনাদের বড় বড় ব্যারিস্টার, আইনজীবীরা লড়াই করে বেগম জিয়াকে নির্দোষ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ তিনি দুর্নীতি করেছেন এবং তা প্রমাণিত। এমন দুর্নীতিবাজের জন্য মানবিকতার কথা বলছেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী ও প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সুযোগ্য সন্তান ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি বলেন, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী যে সাংগঠনিক অবস্থান বা অবকাঠামো রেখে গেছেন সেই অবকাঠামো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কাজে লাগছে। সকলের সহযোগিতা ও সম্মেলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদের দলকে এগিয়ে যাচ্ছে। নেতৃবন্দ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সেটা আমরা নানান কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রমাণ পাচ্ছি। অবশ্যই আলোচনা সমালোচনা দলের মধ্যে থাকবেই। যখন আমার বাবা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী জীবিত ছিলেন তখনো অনেক প্রতিযোগিতা ছিলো। দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা না থাকলে সাংগঠনিক কার্যক্রম বেগবান হয় না। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। এই প্রতিযোগিতা আমাদের মধ্যে আছে। সবার মধ্যে আছে। এরপরেও আমাদের মধ্যে একটা চেতনা কাজ করে। শেখ হাসিনা সরকারকে সমুন্নত রাখতে হবে। নয়তো বাংলাদেশের অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যাবে। বিপন্ন হয়ে যাবে। আমরা নিজেদের মধ্যে যাই প্রেতিযোগিতা করিনা কেন এই শিক্ষাটাই আমাদের প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী জননেতা এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী আমাদের দিয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদ পুরনো খেলায় মেতে উঠেছে। আমাদের পুলিশ বাহিনীর ৭ জন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ভুল অভিযোগ ও তথ্যের ভিত্তিতে তাদের দেশে সফরের যে নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে, তা নিন্দনীয়। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত দÐপ্রাপ্ত ফাঁসির আসামিরা আশ্রয় নিয়েছে। এতেই প্রমাণিত হয়, বর্তমান সরকারের উন্নয়ন অভিযাত্রায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ’৭১ ও ’৭৫ এর ঘাতক চক্র এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের অপকৌশলের অংশ হিসেবে তারা এ কাজ করছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ব্যক্তি নয়, প্রতিষ্ঠান। তিনি আমাদেরকে আমৃত্যু সাহস যুগিয়েছেন অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে। তিনি চট্টগ্রামকে নিয়ে অনেক অনেক স্বপ্ন দেখতেন। সেই স্বপ্নগুলো ধাপে ধাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন। তাই মহিউদ্দিন ভাই আমাদের স্বপ্ন, আশা-আকাক্সক্ষা ও প্রেরণার উৎস। তিনি আরো বলেন, মহিউদ্দিন ভাই কখনো রাজপথ ছাড়েননি, আমরাও রাজপথ ছাড়বো না। এই চট্টগ্রামে তিনি একজন প্রকৃত অর্থেই ভূমিপুত্র। তিনি চট্টগ্রামে যে উন্নয়নের দ্বীপশিখা জ্বালিয়েছেন, সে শিখাকে অনির্বাণ রাখতে হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আলহাজ শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও রাউজান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, উপদেষ্টা আলহাজ শফর আলী, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী, জালাল উদ্দিন ইকবাল, নির্বাহী সদস্য সৈয়দ আমিনুল হক, বখতেয়ার উদ্দিন খান, মো. জাবেদ, থানা আওয়ামী লীগের আলহাজ ফিরোজ আহমেদ ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের মো. গিয়াস উদ্দিন। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের অন্যতম সহ-সভাপতি এড. সুনীল কুমার সরকার, এড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলহাজ খোরশেদ আলম সুজন, এম. জহিরুল আলম দোভাষ, আলহাজ আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, কোষাধ্যক্ষ আলহাজ আবদুচ ছালাম, এড. শেখ ইফতেখার সায়মুল চৌধুরী, সাবেক এমপি সাবিহা নাহার মুছা, হাজী জহুর আহমেদ, হাজী মোহাম্মদ হোসেন, দিদারুল আলম চৌধুরী, জোবায়েরা নার্গিস খান, আব্দুল আহাদ, আবু তাহের, শহিদুল আলম, নির্বাহী সদস্য মো. আবুল মনছুর, জাফর আলম চৌধুরী, গাজী সফিউল আজিম, এড. কামাল উদ্দিন আহেমদ, অমল মিত্র, সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, মোহব্বত আলী খান, ড. নেছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, হাজী বেলাল আহমেদ, মোরশেদ আকতার চৌধুরী প্রমুখ।
পরে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কবরে শ্রদ্ধানিবেদন ও বিশেষ মুনাজাত শেষে মরহুমের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেন।
এদিকে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সকাল ৯টায় শেখ ফরিদ চশমা মসজিদে খতমে কোরআন, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।