শীত ফিরেছে চেনারূপে

39

পৌষের শেষপক্ষে অনেকটা অসময়েই শীতের রাজ্যে হানা দিয়েছিল হালকা বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। ভোগান্তির সেই বৃষ্টিতে অবশ্য তাপমাত্রার পারদ কয়েক ডিগ্রি চড়ে গিয়ে কমেছিল শীতের দাপট। তিনদিনের ব্যবধানে বৃষ্টি-বাধা সরিয়ে মেঘমুক্ত আকাশে চেনারূপে ফিরেছে শীত। গত রবিবার থেকেই ফের নিম্নমুখি হয়েছে তাপমাত্রার পারদ। আর দু’দিনে অন্তত তিন ডিগ্রি কমে গতকাল সোমবার রাজশাহীতে দেশের সর্বনিম্ন আট দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। উত্তুরে হিমেল হাওয়ার সাথে সাত জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহে ভর করেই এবারের শীত ঋতু দেশজুড়ে ‘তৃতীয় ইনিংস’ শুরু করেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান গতকাল সোমবার পূর্বদেশকে বলেন, আগামী কয়েকদিন প্রত্যন্ত জনপদে শৈত্যপ্রবাহজনিত শীত-কুয়াশার দাপট মোকাবেলা করতে হবে। দেশের উত্তরাঞ্চলের কোথাও কোথাও হালকা বৃষ্টিপাতের আলামত পরিলক্ষিত হলেও আগামী অন্তত পাঁচদিন ধরে রাতের তাপমাত্রা কমতে পারে। পাশাপাশি কয়েক জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলা মৃদু শৈত্যপ্রবাহের বিস্তার ঘটতে পারে।’
অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী চব্বিশ ঘন্টার জন্য প্রচারিত আবহাওয়ার দৃশ্যপটে বলা হয়, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের পশ্চিমাংশে অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আর পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তর-পশ্চিমাংশে এবং নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা. কুড়িগ্রাম, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে বয়ে চলা মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত ও বিস্তার রঅভ করতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
এর আগে বছরের সবচেয়ে শীতলতম মাস হিসেবে পরিচিত চলতি জানুয়ারি মাসের পূর্বাভাসে আবহাওয়া আধিদপ্তর জানিয়েছিল, সারা দেশে মোট তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে অন্তত দুটির ধরন হতে পারে তীব্র। এরমধ্যে জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের শেষদিকে একটি এবং মাসের শেষ সপ্তাহে আরেকটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে। আর মাসের মাঝামাঝি সময়ে একটি মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। শৈত্যপ্রবাহ চলাকালে বিভিন্ন বিভাগের জেলাগুলোতে কনকনে শীত অনুভূত হবে। বিশেষ করে, গ্রামীণ জনপদে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হবে। সারাদেশের মধ্যে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের কিছু অংশ এবং সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে এবার শীতের তীব্রতা বেশি থাকবে। পাশাপাশি রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি ও এর আশেপাশে তীব্র শীত অনুভূত হবে। আর ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের দিকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ থাকতে পারে।
অধিদপ্তরের রেকর্ডকৃত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উত্তুরে হাওয়ায় ডিসেম্বরের শুরু থেকেই তাপমাত্রার পারদের পতন শুরু হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৭ ডিসেম্বর চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মত সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ এক অঙ্কের ঘরে নেমে আসে। ওইদিন দেশের সর্বউত্তরের জনপদ তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পরদিন আরও এক ডিগ্রি কমে তা আটের ঘরে নামে। কিন্তু এরপর থেকেই পারদের উর্ধ্বমুখি পথচলা শুরু হয়। টানা চারদিনে তিন ডিগ্রিরও বেশি চড়ার পর ফের পতন ঘটে পারদের। পারদের এই পতনমুখী প্রবণতার মধ্যেই আবহাওয়াবিদরা সারাদেশে শীত জেঁকে বসার আলামত দেখতে পান। এর জেরে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বইতে শুরু করে মৌসুমের প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সর্বনিম্ম তাপমাত্রা নেমে আসে চুয়াডাঙ্গায় সাত দশমিক নয় ডিগ্রিতে। সর্বশেষ গত ২৯ ডিসেম্বর তেঁতুলিয়ায় চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন চার দশমিক পাচ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এরপর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি নেমে চড়তে থাকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। গতকাল সোমবার দেশের সর্বোচ্চ ২৭ দশমিক এক ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা করা হয়েছে টেকনাফে। অবশ্য চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ থেকে ১৭ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করেছে।
প্রসঙ্গত, বিগত ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি পূর্ববর্তী ৫০ বছরের ইতিহাসের পাতা পাল্টে দিয়ে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন দুই দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর আগে সিলেট বিভাগের শ্রীমঙ্গলে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম দুই দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রূয়ারি। চলতি বছরের জানুয়ারিতেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমেছিল। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে মাঝারি এবং আট ডিগ্রির চেয়ে বেশি থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে হলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে থাকে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।