শিশু ধর্ষণ ও হত্যা নরপিশাচের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হোক

33

কি ধরনের বিকৃত মানসিকতার হলে মাত্র ৭বছরের একটি নিষ্পাপ শিশুকে ধর্ষণ করে নির্মমভাবে হত্যা করা যায়? তাও আবার নগরীর হেলদি সিটি নামে পরিচিত জামালখানে। যে জামালখান নগরীর সৌন্দর্যবর্ধনে অগ্রগামী। ‘চট্টগ্রামকে দেখতে চাইলে জামালখানকে দেখুন’ এমন স্লোগান যে জামালখান বহন করে, সেখানেই ধারাবাহিক অপরাধের পৈশাচিক উৎসব চলছে যেন। সর্বশেষ ঘটল প্রথম শ্রেণির ছাত্রীর উপর পৈশাচিক আচরণ ও শ্বসরোধ করে বর্বর হত্যাকাণ্ডণ্ডের মত ঘটনা! এ বর্বরতা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এধরনের বিকৃত মানসিকতার নরপিশচদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে কোনভাবেই শিশু ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা সম্ভব নয়। সম্প্রতি চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নারী ও শিশু ধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ড আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। অভিভাবকরা তাদের নিষ্পাপ সন্তানদের নিয়ে দুঃচিন্তায় দিন কাটাচ্ছে। অতীতে ৫বছরের শিশুকেও ধর্ষণ করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে এ নগরীতে। আর এসব ঘটনা ঘটছে, মুদির দোকানের কর্মচারি, বিভিন্ন পেশার কারিগর এবং বখাটে ছেলেদের দ্বারা। জামালখানের এ ঘটনাও ঘটিয়েছে একজন মুদির দোকানের কর্মচারি। শুক্রবার পুলিশ সেই কর্মচারিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত সংবাদসূত্রে জানা গেছে, জামালখানের সিকদার হোটেলের পাশে ব্রিজ গলির ভাড়া বাসা থেকে বিস্কুট কিনতে বেরিয়ে নিখোঁজ হওয়ার তিনদিনের মাথায় অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবার মারজানা হক বর্ষা (৭) নামে এক কন্যাশিশুর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। পুলিশ ধারণা করছে, ধর্ষণের পর হত্যা করে ওই শিশুর লাশ বস্তায় ভরে নালায় ফেলে দেয়া হয়েছে। পুলিশের সেই ধারণাও সত্য হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ঘটনার হোতা নরপিশাচ লক্ষণ দাশকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায়। সূত্র জানায়, শিশু মারজান হক বর্ষা নগরীর কুসুমকুমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। তার বাবা আব্দুল হক মারা গেছেন। মা ঝর্ণা বেগম ও সৎ বাবা মোহাম্মদ ইউছুপের সঙ্গে জামালখান সিকদার হোটেলের পাশে ব্রিজ গলির একটি বাসায় থাকত। গত ২৪ অক্টোবর বিকাল পৌনে পাঁচটার দিকে বাসা থেকে বিস্কুট কিনতে বের হয়েছিল ছোট্ট বর্ষা। এরপর থেকে তার আর খোঁজ মিলছিল না। খোঁজাখুঁজির পাশাপাশি তার সন্ধান চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি এবং এলাকায় মাইকিংও করা হয়। এর মধ্যে পরিবারের সদস্যরা গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের পর বাসার পাশের নালায় একটি বস্তা দেখে সন্দেহ হলে সেটা ডাঙায় তুলে আনেন। বস্তার ভেতরে উলঙ্গ অবস্থায় নিখোঁজ মেয়েটির অর্ধগলিত লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ওই এলাকার নৈশপ্রহরীকে থানায় নিয়ে গেছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ বা সিআইডি’র ক্রাইম সিন ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করার পর লাশটি ময়না তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মর্গে পাঠানো হয়েছে। লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে গতকাল শুক্রবার আসামী লক্ষণ দাশকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত আসামীর দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ধর্ষণের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ দেখে মুখ ও নাক চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় প্রথম শ্রেণির ছাত্রী মারজানা হক বর্ষাকে (৭)। হত্যার পরে দোকানের গোডাউনে রাখা টিসিবির সীলযুক্ত প্লাস্টিকের বস্তার ভিতরে বর্ষার মরদেহ ঢুকিয়ে বাইরে এনে গোডাউনের ডান পাশে নালায় ফেলে দেয় হত্যাকারী লক্ষণ দাশ। গ্রেফতার লক্ষণ দাশ (৩০) লোহাগাড়ার উত্তর পদুয়া ৩ নম্বর ওয়ার্ড মনি মিস্ত্রির বাড়ির ফেলোরাম দাশের ছেলে। তিনি নগরের জামালখান গোপাল মুহুরী গলি এ কে এম জামাল উদ্দিনের বিল্ডিংয়ের নিচ তলায় শ্যামল স্টোর নামক দোকানের গোডাউনে বসবাস করতেন। তিনি মুদি দোকানটির কর্মচারী বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, লক্ষণ মুদি দোকানটির মালিক। উপ পুলিশ কমিশনার মো.মোস্তাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে দেয়া বক্তব্যের সূত্রে জানা যায়, লক্ষণ দাশ বর্ষাকে বিভিন্ন সময়ে দোকান থেকে চিপস, চকলেট দিত। ঘটনার দিন বিকেলে ১শ টাকা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে দোকানের গোডাউনে নিয়ে যায়। সেখানে মুখ ও নাক চেপে ধরে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ দেখে শ্বাসরোধে হত্যা করে মরদেহ বস্তায় ভরে নালায় ফেলে দেয়। এর কিছুক্ষণ পর বর্ষার কাপড়চোপড় পেঁয়াজের খোসার বস্তার ভিতর খোসাসহ ঢুকিয়ে বস্তাটি একই জায়গায় নালায় ফেলে দেয়। আরও কিছুক্ষণ পর বর্ষার ব্যবহৃত স্যান্ডেলটি নিয়ে নালায় ফেলে দেয়। লাশ উদ্ধার হওয়ার পর স্বল্পসময়ের ব্যবধানে পুলিশ আসামীতে গ্রেফতার করায় এলাকাবাসী আশ্বাস্থ হয়েছে। আমরা মনে করি, এ ধরণের অপরাধের কোন ছাড় হতে পারে না এরা পাষণ্ড। দ্রুত বিচার আইনে অপরাধিকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, অন্যথায় এজাতীয় পৈশাচিক ঘটনা বন্ধ হবে না।