শিক্ষার্থীদের উপর চাপ কমাতে প্রাথমিকে এক শিফটের ক্লাস

24

আসহাব আরমান

চলতি মাস থেকে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক শিফটে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। স্কুলের পড়া স্কুলেই শেষ করা এবং শিক্ষার্থীদের উপর চাপ কমাতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ধাপে ধাপে সব বিদ্যালয়ে এক শিফটে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মাস থেকে এক শিফটের ক্লাস চালু হবে। শিক্ষার্থীর বিদ্যালয় কেন্দ্রিক লেখাপড়া বিদ্যালয়েই শেষ করা হবে। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে বেশি সময় অবস্থান করে দিনের পাঠ দিনেই শেষ করবে। বাড়িতে গিয়ে বিদ্যালয়ের পড়ার চাপ থাকবে না। ফলে শিশুরা বাড়িতে সবার সঙ্গে আনন্দ করে সময় কাটাতে পারবে। এ লক্ষ্যে ডাবল শিফট বাদ দিয়ে প্রতিটি বিদ্যালয়ে সিঙ্গেল শিফট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষক থাকা স্কুলগুলোকে এক শিফটে চালানোর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের।
যেসব স্কুলে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ এবং শিক্ষক নেই কিংবা উভয়ক্ষেত্রেই ঘাটতি রয়েছে; এমন কাছাকাছি (সর্বোচ্চ ১ কিলোমিটার দূরত্বের) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে পাঠদানের ক্ষেত্রে সমন্বিত কার্যক্রম চালু করতে হবে। এক্ষেত্রে নির্ধারিত দূরত্বের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষকের সংখ্যা এবং ব্যবহারযোগ্য শ্রেণিকক্ষের তথ্য বিশ্লেষণ করে পাশাপাশি দুইটি স্কুলকে দুভাগ করে একক শিফটে পাঠদান পরিচালনা করতে হবে।
দুটি স্কুলের মাঝে শ্রেণি বিভাজনের ক্ষেত্রে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত একটি প্রতিষ্ঠান এবং অন্যটিতে তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা নেবে।
এক্ষেত্রে সরেজমিনে পরিদর্শন করে সিঙ্গেল শিফট চালুর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে স্থানীয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের লোকজন। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নেবে তারা।
তবে এক শিফটের ক্লাস সম্পর্কে প্রাথমিকের শিক্ষকদের ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কয়েকজন শিক্ষকের কাছে এক শিফটের ক্লাস কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, সকল বিদ্যালয়ে এক শিফটের ক্লাস চালু করা সম্ভব নয়। অনেক স্কুলে পর্যপ্ত শিক্ষক ও ক্লাসরুম নেই। গ্রামের বেশিরভাগ স্কুলের মধ্যে দূরত্ব বেশি। ফলে এসব স্কুলের শিক্ষার্থীরা এক শিফটের ক্লাস করতে গিয়ে বিপাকে পড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, পর্যাপ্ত ক্লাসরুম ও শিক্ষক না থাকা দুটি স্কুলকে একীভূত করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করলে দেখা যাবে কোনো বিদ্যালয় ৩টা ১৫ মিনিটে ছুটি দিবে চলে যাবে। অন্যটি ৪ টার সময় ছুটি দিবে। এতে অনেকে মন খারাপ করবে। অনেক স্কুলে শিক্ষক আছে ২ থেকে ৩ জন। তাই পর্যাপ্ত শিক্ষক ও একই সময়ে বিদ্যালয় ছুটির বিষয়টি বিবেচনা করেই এই কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শহীদুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, চলতি মাস থেকে এক শিফটে ক্লাস চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে শিক্ষক ও ক্লাসরুম সংকট থাকায় সব স্কুলে একসাথে চালু করা সম্ভব নয়। এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বাছাই করে আমরা ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছি। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত যেসব প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত ক্লাসরুম ও শিক্ষক রয়েছে সেগুলোতে এক শিফটের কার্যক্রম চালু করা হবে। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক শিফটের ক্লাস কার্যক্রম চালু করা হবে।
এর আগে গত ১৫ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সব স্কুল এক শিফটে চালানোর নির্দেশ দেয়া হয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, যেসব বিদ্যালয়ে বর্তমানে পর্যাপ্ত সংখ্যক ব্যবহারযোগ্য শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষক রয়েছেন, সেসব বিদ্যালয়ে অবিলম্বে সিঙ্গেল শিফটে পাঠদান পরিচালনার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।