লোডশেডিং আরও প্রকট

10

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগের তুলনায় গত কয়েকদিনে নগরীসহ সারাদেশে বিদ্যুতের লোডশেডিং প্রকট হয়ে উঠেছে। সকাল-দুপুর এমনকি শেষ রাতেও চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। দুই ঘণ্টার জায়গায় ছয় থেকে সাত ঘণ্টাও লোডশেডিং হচ্ছে। আর এই লোডশেডিং আপাতত কমছে না। কবে নাগাদ কমবে, তাও নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারছেন না।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম পূর্বদেশকে বলেন, বর্তমানে প্রচÐ গরমের কারণে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের চাহিদা বেড়েছে। তবে সামনে তা কমে আসবে। চট্টগ্রামে সাড়ে ১২০০ থেকে সাড়ে ১৩০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা থাকে। তা আবার গ্রাহকের ব্যবহারের উপর কম-বেশি হয়। এরপরও দেশে বিদ্যুৎ খাতে যেমন ঘাটতি নেই, তেমনি চট্টগ্রামেও বিদ্যুৎ সরবরাহে আমাদের কোনো কৃপণতা নেই। কিন্তু জাতীয়ভাবে বিদ্যুতের সংকট থাকায় গত দুই দিনে নগরীতে আড়াইশ থেকে তিনশো মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকা স্বত্বেও সরবরাহ করতে পারিনি। এতে এক ফিডার বন্ধ রেখে অন্য ফিডারে সরবরাহ করতে হচ্ছে। তবে দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় চট্টগ্রাম অনেক ভাল অবস্থানে আছে।
লোডশেডিং নিরসন নিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানায় গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে বিদ্যুতে। যে কারণে বাধ্য হয়ে বাড়াতে হচ্ছে লোডশেডিং। তবে আগামী নভেম্বর মাসে এই পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রতিমন্ত্রী।
এদিকে, বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় গত জুলাই মাসে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়ে লোডশেডিং করে বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘোষণা দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। কথা ছিলো দিনে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না। আশা করা হয়েছিলো অক্টোবর থেকে এই লোডশেডিং তুলে নিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ আগের মতো করা হবে। কিন্তু পরিস্থিতি দেখা দিলো ভিন্ন। দিন দিন বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ছে লোডশেডিংয়ের মাত্রা।
এর মধ্যে গত ৪ অক্টোবর জাতীয় গ্রিডের পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক বিপর্যয় দেখা দিলে ঢাকাসহ দেশের চার বিভাগের একটা বড় অংশ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। ওই ঘটনার পর থেকে রাজধানী ঢাকাতে কয়েকগুণ বেড়ে যায় লোডশেডিং। যদিও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এটাকে দায়ী করছেন না। তিনি বলছেন, জ্বালানি সংকটের কারণেই লোডশেডিং বাড়ছে। আপাতত লোডশেডিং থেকে মুক্তি মিলছে না, আরও ২ মাস অপেক্ষা করতে হবে।
নসরুল হামিদ বলেন, দিনের বেলায় কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে, আবার রাতের বেলা চালাতে হচ্ছে। দিনের বেলা যেগুলো বন্ধ রাখা হচ্ছে সেগুলো রাতে চালানো হচ্ছে। এ কারণে লোডশেডিংয়ের সময়টা বড় হয়ে গেছে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা চাচ্ছিলাম অক্টোবর থেকেই লোডশেডিং তুলে দেবো। সেটা পারলাম না। কারণ আমরা গ্যাস আনতে পারলাম না। গ্যাস যা পাচ্ছি তা শিল্প কারখানাকে দিতে হচ্ছে। সাময়িক বললেও তা হচ্ছে না, কারণ বৈশ্বিক পরিস্থিতি অন্যরকম করে দিয়েছে। আবারও গ্রাহকদের ধৈর্য ধরার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা বলছি একটু ধৈর্য ধরেন, আর একটু কষ্ট করতে হবে। নভেম্বর নাগাদ পরিস্থিতি আরেকটু ভালো হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বর্তমানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে প্রয়োজন ১১০০ থেকে সাড়ে ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এই ঘাটতির প্রভাবেও লোডশেডিং বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, জ্বালানি সংকটের পাশাপাশি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ আর কারিগরি ত্রুটির কারণে ৩০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র এখন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এছাড়া আংশিক বন্ধ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কিনছে না সরকার।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা শিল্প কারখানায় গ্যাসটা দিতে চাচ্ছি। রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানায় চাহিদা বেড়ে গেছে। সেখানে গ্যাস দিতে হচ্ছে, সে কারণে বিদ্যুতে গ্যাস কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার সার কারখানাগুলো সচল রাখতে হচ্ছে। সেজন্য তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ৮ ঘণ্টার বেশি চালাতে পারি না। এসব বিষয়গুলো সব একসঙ্গে যোগ হয়েছে।