লামায় দুর্গামন্ডপে সাজসজ্জা চলছে এবার ‘মেঘের গর্জনে’ আকর্ষণ

43

শুরু হয়েছে মহালয়া। আর মাত্র তিন পরেই শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ উৎসবকে ঘিরে বান্দরবানের লামা উপজেলায় নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এবার উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নে একযোগে ৮টি মন্ডপে দুর্গা পূজা পালন করা হবে। বৃহত্তর লামা সনাতনী সমাজের আয়োজনে কেন্দ্রীয় হরি মন্দির মন্ডপের শারদীয় দুর্গোৎসবের মহা ষষ্ঠী ও প্রতিমা প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন পৌরসভা মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম। এদিকে উৎসব যেন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পালন করতে পারেন, সেজন্য মন্ডপগুলোতে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে উপাজেলা প্রশাসন। এ বছর উপজেলার কেন্দ্রীয হরি মন্দির পূজা মন্ডপের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ‘মেঘের গর্জন’ থাকছে বলে জানান কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাবুল দাশ। প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ এখন মন্দিরের সাজসজ্জার আর প্রতিমাকে রং করা ও সাজানোর কাজ চলছে। সব মিলিয়ে উপজেলার মন্ডপে মন্ডপে চলছে সাজ সাজ রব। ৩ অক্টোবর মহা পঞ্চমীর মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে ৮ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ পূজা।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছরের মত এবারও উপজেলায় পূজা মন্ডপের সংখ্যা ৮টি। তম্মধ্যে পৌরসভা এলাকায় দুইটি, লামা সদর ইউনিয়নে একটি, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে চারটি, আজিজনগর ইউনিয়নে একটি মন্ডপে পূর্জা অনুষ্ঠিত হবে। দুর্গা মাকে বরণ করার জন্য উপজেলার প্রতিটি পূজা মন্ডপে প্র¯‘িত প্রায় শেষ পর্যায়ে। পূজামন্ডপগুলো বর্ণিল সাজে সজ্জিত হচ্ছে। কোন পূজামন্ডপ কত বেশি সুন্দর করা যায়, সেই প্রতিযোগিণাও চলছে অনেক এলাকায়। এবার পৌরসভার কেন্দ্রীয় হরি মন্দির মন্ডপ, চাম্পাতলী লোকনাথ মÐপ, মেরাখোলা হরি মন্দির মÐপ সহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে। এ প্রসঙ্গে সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা হরি মন্দিরের দুর্গা পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি সাধন চন্দ্র সেন ও রুপন কান্তি নাথ বলেন, আমরা প্রতিবারের মত এবারও সনাতন ধর্মের নিয়ম অনুসারে প্রতিমা তৈরি করেছি। এখন মন্দিরের সাজসজ্জার আর প্রতিমাকে রং করা ও সাজানোর কাজ বাকি রয়েছে। পূজা শুরুর আগেই বাকী কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দুর্গাপূজা উপলক্ষে মন্ডপে মন্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ। এখন সেগুলোতে রংতুলির আঁচড় দেয়া হবে। আবার কোন কোন মÐপে দেখা গেছে রংতুলির আঁচড় দেয়া হচ্ছে। কেউ কেউ নিয়ে যাচ্ছেন কারিগর বাড়ি থেকে তৈরিকৃত প্রতিমা। প্রতিমা কারিগররা পূজার্থীদের প্রতিমা সঠিক সময়ে বুঝিয়ে দিতে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। পূজাস্থলকে আকর্ষণীয় করে তুলতে শহরের স্বনামধন্য লাইটিং, সাউন্ড, মিউজিশিয়ান প্রতিষ্ঠান, উপজেলার মাইক-সাউন্ড, বাদ্যযন্ত্র, ডেকোরেশন বুকিং করা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে ডিজিটাল ব্যানারও। এবারে মা দুর্গা আসবেন ঘোড়ায় চড়ে, আবার ঘোড়ায় চড়ে যাবেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। কেন্দ্রীয় হরি মন্দির মন্ডপ প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত কক্সবাজারের প্রতিমা শিল্পী বাবুল ভট্টাচার্য্য বলেন, প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ। এখন প্রতিমায় চলছে রং তুলির আঁচড় আর সাজ সজ্জা। আশা করি দু’তিন দিনের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে পারবো।
লামা উপজেলা কেন্দ্রীয় দুর্গা পূজা উদ্যাপন পরিষদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজয় আইচ বলেন, কেন্দ্রীয় হরি মন্দির মÐপে হাজারো মানুষের সমাগম হবে, তাই সব কিছু মাথায় রেখে সুষ্ঠুভাবে উৎসব পালনের জন্য ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এবারে পূজার জন্য ৮ লাখ টাকা বাজেট ধরা হয়েছে। তবে এখনো সরকারিভাবে কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তিনি আরো বলেন, মন্দিরে দরিদ্রদের মাঝে বস্ত্র বিতরণ, প্রসাদ বিতরণ, সংগীত সন্ধ্যা, চন্ডীযোগ্যসহ নানান কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপিকে পূজায় আমন্ত্রণ করেছি। প্রতিবছর তার সার্বিক সহযোগিণায় আমরা শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপন করে থাকি। আশা করি এবারও আমরা সকলে মিলেমিশে এ উৎসব উদ্যাপন করতে পারবো। একই কথা জানালেন, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের গুলিস্তান বাজার, ইয়াংছা, পাগলির আগা, কমিউনিটি সেন্টার, আজিজনগর ইউনিয়নের তেলুনিয়া ও পৌরসভার চম্পাতলী মন্ডপ কমিটির সদস্যরা।
লামা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অপ্পেলা রাজু নাহা বলেন, দুর্গাপূজা মন্ডপগুলোতে পুলিশের পাশাপাশি আনসার ভিডিপি সদস্যও মোতায়েন করা হবে। আশা করি প্রতিবছরের ন্যায় এবারও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদ্যাপন করতে পারবেন সনাতন ধর্মালম্বীরা।
এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও সরকারিভাবে দুর্গা পূজা উৎসব পালনের জন্য বরাদ্দ প্রদান করা হবে। বরাদ্দের জন্য ইতিমধ্যে মন্ডপগুলোর তালিকা ও আবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যে বরাদ্দ চলে আসবে। বরাদ্দ সাপেক্ষে অনুদান প্রদান করা হবে মন্ডপগুলোতে। এছাড়া উৎসব যেন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পালন করতে পারে সেজন্য মন্ডপগুলোতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও আনসার ভিডিপি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান নূর-এ-জান্নাত রুমি।