রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সিআইসি’র বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ

62

উখিয়া উপজেলা আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় ইউএনও নিকারুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি ইউপি সদস্য মৌলভী বখতিয়ার আহমদ বলেন, কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের (সিআইসি) ক্যাম্প ইনচার্জ রেজাউল করিম বদলি হওয়ার পর খলিলুর রহমান খাঁন নতুন সিআইসি হিসেবে যোগদান করেন। তিনি যোগদান করার পর থেকে স্থানীয় লোকজনকে বিভিন্নভাবে হয়রানি, বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ আতঙ্ক সৃষ্টি করেছেন। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি কখনো রোহিঙ্গাদের পক্ষ হয়ে স্থানীয় লোকজনের দীর্ঘদিনের ফসলি জমি দখল করে এনজিওদের ভাড়া দিতে পারেন না। কিন্তু তিনি এ ধরনের বিতর্কিত কাজ করে যাচ্ছেন।
উপজেলা পরিষদের হলরুমে আয়োজিত সভায় এই ইউপি সদস্য আরো বলেন, শুধু তাই নয়, তিনি রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ধরনের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার কারণে রোহিঙ্গারা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এনিয়ে স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে বড় ধরনের সংঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা করছি।
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা পালংখালী ইউপির চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রোহিঙ্গাদের সহায়তায় নিয়োজিত এনজিও, আইএনজিওগুলোর কারণে পালংখালী ইউনিয়নের দৈনন্দিন কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আর ক্যাম্পের অভ্যন্তরে যে সমস্ত স্থানীয় লোকজন রয়েছে তারা ক্যাম্প প্রশাসনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ক্যাম্পে দায়িত্বরত সিআইসি’রা রোহিঙ্গার পক্ষ হয়ে কাজ করছে। তাদের কাছে স্থানীয়দের কোনো মূল্য নেই। তাই রোহিঙ্গারা নানান অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। তিনি এসব বিতর্কিত সিআইসিদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
একমত পোষণ করে আইনশৃঙ্খলা কমিটির উপদেষ্টা উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে যে সমস্ত স্থানীয় লোকজন রয়েছে তারা চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ক্যাম্প ইনচার্জের (সিআইসি) কাছে তারা শরণাপন্ন হলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে লোকজন আমাদের জানিয়েছেন।
সভায় অন্যান্য বক্তারা উখিয়া উপজেলার কোটবাজারে সংস্কারকৃত সড়কের উপর যত্রতত্র গাড়ির গ্যারেজ ও গাড়ি রাখার ফলে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি, যানজটের ফলে মানুষের কষ্ট, স্টেশন এলাকায় রাস্তা বড় হলেও তার কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া সীমান্তে চোরাচালান, ইয়াবা ও মাদক বন্ধে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বক্তারা। তারা বলেন, উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র টমটম বিক্রির হচ্ছে। সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে, এর সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।
সভার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, যারা টমটমের শো রুম করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আগামি এক সপ্তাহের মধ্যে এগুলো বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যত্রতত্রভাবে গাড়ির গ্যারেজ ও গাড়ি রাখার ফলে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধেও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন ইউএনও। তবে ক্যাম্প ইনচার্জের (সিআইসি) বিরুদ্ধে যেসব মৌখিক অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে তা লিখিত আকারে পেশ করলে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের বরাবরে প্রেরণ করা হবে। তিনি মাদক ও মানবপাচার প্রতিরোধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিমুল এহসান খান, উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মর্জিনা আকতার মরজু, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার বড়ুয়া, ভাইস চেয়ারম্যান জাহাংগীর আলম, পালংখালী ইউনিয়নের গফুর উদ্দিন চৌধুরী, জালিয়াপালং ইউনিয়নের নুরুল আমিন চৌধুরী, হলদিয়া পালং ইউনিয়নের অধ্যক্ষ শাহ আলম, রত্নাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী, উখিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি সরওয়ার আলম শাহীনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।