রোগীদের পকেট কাটছে ন্যায্যমূল্যের ফার্মেসি

39

ফারুক আবদুল্লাহ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেইন গেইট ও পূর্ব গেইট এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য ন্যায্যমূল্যের ফার্মেসি। এসব ফার্মেসির সাথে হাসপাতালের দালালদের রয়েছে সখ্যতা। তারা কম দামে ওষুধ কিনে দেওয়ার কথা বলে রোগীর স্বজনদের এসব ফার্মেসিতে নিয়ে যায়। তারপর সুযোগ বুঝে ওষুধের দাম দুই থেকে তিনগুণ বেশি নিয়ে পকেট কাটছে রোগীর স্বজনদের। ভুক্তভোগী রোগী ও স্বজনরা সিন্ডিকেটের কারণে অভিযোগের পরেও সুফল পাচ্ছেন না।
সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার যুগান্তকারী উন্নতি হয়েছে। সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় গত ১০ বছরে স্বাস্থ্যখাতে বাজেট ৭ গুণ বেড়েছে। নামমাত্র খরচে চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় সরকারি হাসপাতালে। সিসিইউ, আইসিইউ, অপারেশন ও ডায়ালাইসিস সেবার ক্ষেত্রে নামমাত্র মূল্য নেওয়া হয়। সব সরকারি হাসপাতালে ওষুধ ও অন্যান্য সামগ্রী বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু হাসপাতালের দায়িত্বরত অতি মুনাফা লোভী এক শ্রেণির চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সিন্ডিকেটের কারণে স্বাস্থ্যখাতে সরকারের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, হাসপাতালের মেইন গেইটের উত্তর পাশ আর পূর্ব গেইটের পূর্ব পাশে দেখা যায় অসংখ্য ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান। এসব ফার্মেসিতে ওষুধের মূল্যের শতকরা ১৫ টাকা কমে বিক্রির কথা বলা হয়। তবে বাস্তবে অনিয়মের আখড়া এসব ফার্মেসি। হাসপাতালে সবধরনের ওষুধ সরবরাহ অপ্রতুল। এই সুযোগটি দালালদের কপাল খুলে দেয়। তারা হাসপাতালে সেবা নিতে আসা অস্বচ্ছল গরীব রোগী ও স্বজনদের কম দামে ওষুধ কিনে দেওয়ার কথা বলে ফার্মেসিতে নিয়ে যায়। তারপর রোগী ও তাদের স্বজনদের পকেট কাটতে শুরু করে। এতে তাদের কাছে প্রতারণার স্বীকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে ফিরছেন সেবা নিতে আসা লোকজন।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেবা নিতে আসা লোকজন ওষুধের মূল্যে তালিকা সম্পর্কে না জানায় প্রায় সময় অনিয়মের শিকার হচ্ছেন। অনেক সময় চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক সঠিক ওষুধটি না দিয়ে অন্য একটি কোম্পানির ওষুধ ধরিয়ে দিচ্ছে। যথাযথ ওষুধের মূল্য নিতে গিয়ে ঘটছে হেরফের। একেকজনের কাছ থেকে একেকভাবে ওষুধের মূল্য নিচ্ছে। অনেক সময় চিকিৎসকের দুর্বোধ্য প্রেসক্রিপশন পড়তে না পারায় অনেক কর্মচারির ভুল ওষুধ বিক্রি করার ঘটনাও ঘটছে। সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় রোগী ও স্বজনরা।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে কথা হয় ভুক্তভোগী এক রোগীর স্বজন শাহাবুদ্দীন (ছদ্ম নাম) এর সাথে। তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত আছেন। গত রোববার গুরুতর অসুস্থ ছোট ভাইকে নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসেন। সেখানে চিকিৎসক একটি ওষুধের তালিকা প্রদান করেন। ওষুধগুলো কিনতে একটি ¯িøপ দেওয়া হয়, যেখানে লেখা ছিল ‘ইউনিট ওয়ান’। অর্থাৎ জরুরি বিভাগের সামনে ইউনিট ওয়ান নামে একটি ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান রয়েছে, সেখান থেকে কিনতে হবে। এই দোকানে চিকিৎসক কর্তৃক দেওয়া ওষুধগুলো নিতে প্রায় ২ হাজার ৫০ টাকা মতো লাগবে। কিন্তু জরুরি বিভাগের পূর্ব পাশে একই ধরনের ন্যায্যমূল্যের অসংখ্য দোকান রয়েছে। রোগীর স্বজনকে ভুল বুঝিয়ে দালাল ওই ফার্মেসিগুলোতে নিয়ে যায়। তারপর একই ওষুধের জন্য ৪ হাজার ২০০ টাকা দাবি করে।
একইভাবে হাসপাতালের ২৬ নং ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর স্বজন হেলাল উদ্দিন জানান, ওয়ার্ডে সব ওষুধের সরবরাহ না থাকায় বেশ কয়েকটি ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। এসময় ওয়ার্ডের সামনে এক লোক কম দামে ওষুধ কিনে দেওয়ার কথা বলে উত্তর পাশের গেইটের বাইরে এক ফার্মেসিতে নিয়ে যায়। তিনটি ওষুধ যে দামে নিয়েছি একই ওষুধ পরে অন্য ফার্মেসি থেকে নিতে গিয়ে ২৫০ টাকা মত কম দিতে হয়েছে। এদের মত নিত্যদিন কত রোগী ও তাদের স্বজনরা প্রতারিত হচ্ছেন তা গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ না করলে অনুধাবন করা মুশকিল।
এছাড়া হাসপাতালের পূর্ব গেইট ও মেইন গেইট সহ আশপাশের ফার্মেসিগুলোতে গোপন নজরদারির ভিত্তিতে অনুসন্ধান চালালে প্রায় ফার্মেসিতে পাওয়া যাবে সরকারি ওষুধ। সেই সাথে এসব কাজে জড়িতদের নামও বেরিয়ে আসবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে এসব ফার্মসিতে নজরদারি বাড়ানোর কথা বলেন ভুক্তভোগীরা।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পুলিশ ও আনসারদের মাধ্যমে প্রায় প্রত্যেক দিন হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করছি। এছাড়া হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে সচেতনতা বাড়াতে ব্যানার ও সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছি।