রেল দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে

6

বাংলাদেশ রেল বিভাগ একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। তার জন্য একটি মন্ত্রণালয় কাজ করে। ইংরেজ আমল থেকে দেশে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হয়। ইংরেজদের বিদায়ের পর আরো ২৪টি বছর অতিবাহিত হয় কিন্তু দেশের রেল ব্যবস্থার তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। এরপর ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হবার পরও অনেক সময় গড়িয়েছে। রেল যোগাযোগ ও যাত্রী সেবা তেমন উন্নত হতে দেখা যায়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়নে কাজ শুরু করেন। রেলে সংযোজিত হয় নতুন নতুন বগি, রেল লাইনের আধুনিকায়ন করা হয়। পুরনো রেললাইনের উন্নয়নের পাশাপাশি কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেল লাইন সম্প্রসারণ করা হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা হতে চট্টগ্রাম হয়ে রেল যাত্রীরা চলে যাচ্ছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সাথে রেল যোগাযোগ স্থাপন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর একটি অপূর্ব অবদান। বর্তমান সরকার রেলের অনলাইন টিকেট প্রবর্তন, মেট্রোরেল চালু, যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধিসহ বহু উন্নয়ন কর্মকাÐে অবদান রাখতে সক্ষম হয়।
যাত্রী সাধারণের জন্য রেল ভ্রমণ খুবই আনন্দের ভ্রমণ। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যাত্রা বিষয়ে দেশের মানুষ রেল ভ্রমণে বেশি আগ্রহী। তার কারণে দ্রুত ও নিশ্চিত যাতায়াতের ক্ষেত্রে রেলের প্রতি মানুষের বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। দ্রæত ও নিরাপদ ভ্রমণের পাশাপাশি রেলের যাত্রায় মানুষের খরচও অপেক্ষাকৃত কম। সড়ক ও নৌপথের দুর্ঘটনা হতে বাঁচতে সচেতন যাত্রীরা রেলের মাধ্যমে গন্তব্যে পৌঁছতে বেশি আগ্রহী। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় রেল যোগাযোগ একটি বৃহত্তম ও স্বাধীন সরকারি প্রতিষ্ঠান। রেল যাত্রার প্রতি যাত্রী সাধারণের আগ্রহ বিবেচনা করে সরকার যাত্রী সেবা বৃদ্ধি এবং রেলের বহু সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসেছে। কিন্তু দঃখের বিষয় রেলওয়ে বিভাগের কর্মচারী এবং কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে দেশে বহু রেল দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে। যা জাতি কখনো কামনা করে না বাংলাদেশ রেলওয়ের রেললাইনের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের কাজ হলেও রেলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দায়বদ্ধতা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি রেল মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষ। কর্মচারী এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অবহেলার কারণে রেলে বহু দুর্ঘটনা ঘটছে। রেল একটি পরিকল্পিত, সুচারু এবং নিশ্চিত যাত্রার ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান। রেল চলাচল নিরাপদ ও অব্যবস্থাপনা মুক্ত রাখা খুবই জরুরি। কিন্তু রেলের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং অব্যবস্থাপনার কারণে বহু দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। যার সম্প্রতি উদাহরণ হলো চট্টগ্রাম থেকে জামালপুরগামী বিজয় এক্সপ্রেসের ৯টি বগি লাইনচ্যুত হওয়া। আহত-১৫ এবং তাতে ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ রাখতে হয়েছে দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা। এতে হাজার হাজার রেল পথ যাত্রীর অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। ৪ ট্রেনের যাত্রা বাতিল করে কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। দেশে অতীতে বড় বড় দুর্ঘটনার জন্য বহু তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে কিন্তু এর কোন সুফল সাধারণ যাত্রীরা পেতে দেখা যায়নি।
চলন্ত অবস্থায় একটি ট্রেন হঠাৎ লাইনচ্যুত হওয়া কত মারাত্মক তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রেলের লাইনে কোন সমস্যা আছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য রেলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ কাজ করে থাকে। কোন রাজনৈতিক নাশকতা ছাড়া স্বাভাবিক সময়ে রেল লাইনে সমস্যা দেখা দেয় এবং তৎজনিত কারণে রেলের ৯টি বগি লাইনচ্যুত হওয়া কারো কাম্য হতে পারে না। এ ঘটনার দায় কাউকে না কাউকে নিতেই হবে। তদন্ত কমিটি এ রেল দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তির ব্যবস্থার পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেন এমন আকস্মিক দুর্ঘটনা না হয় তা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা কর্তপক্ষের কর্তব্য। বাংলাদেশ রেল কর্তপক্ষের উচিত, যে কোন পরিস্থিতিতে রেলকে যাত্রী সেবার মাধ্যমে যাত্রীদের আস্থায় রাখা। রেল কর্তৃপক্ষ রেলের তাবৎ অব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে রেল একটি দেশের অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। আমরা চাই রেলের দায়বদ্ধতা জবাবদিহিতা এবং দুর্নীতিমুক্ত স্বাভাবিক যাত্রী অব্যবহৃত থাকুক। রেলকে নিরাপদ, যাত্রীবান্ধব করতে রেল কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের নিষ্ঠার সাথে কাজ করা প্রয়োজন মনে করে দেশের সর্বস্তরের যাত্রী সাধারণ।