রাবার বোর্ডে ৩৯ জনবলের ৩১ জনই ‘নাই তালিকায়’

10

রাবার শিল্পের উন্নয়নে গঠিত ‘রাবার বোর্ডে’ জনবল থাকার কথা ৩৯ জন। এর মধ্যে ৩১ জনই নেই। এ তালিকায় বোর্ড চালানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরিচালক নেই দু’জন, সচিবও নেই। পাঁচ উপ-পরিচালকের মধ্যে ‘নাই তালিকায়’ তিনজন। ১০ সহকারি পরিচালকের মধ্যে নেই ৮ জন। এছাড়া উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, সহকারি প্রোগ্রামার, চার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, একান্ত সচিব, কম্পিউটার অপারেটর, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, ভাÐার কর্মকর্তা, সার্ভেয়ার, ল্যাব সহকারি, অফিস সহকারি, গাড়িচালক, অফিস সহায়ক, ডেসপাস রাইডার ও পরিচ্ছন্নকর্মী সবাই ‘নাই তালিকায়’। তবে বনবিভাগ থেকে ৫ জন ধার করে এনে কোন রকমে কাজ চালিয়ে নেয়া হচ্ছে রাবার বোর্ডের।
এদিকে বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) হিসেবে গত বছরের নভেম্বরে যোগ দিয়েছেন সৈয়দা সারওয়ার জাহান। এর বাইরে বর্তমানে রাবার বোর্ডে সাকুল্যে জনবল আছে দু’জন উপ-পরিচালক, দু’জন সহকারি পরিচালক এবং একজন করে ইলেক্ট্রিশিয়ান, বাবুর্চি ও নিরাপত্তা প্রহরী। আড়াই বছর আগে গঠিত পূর্ণাঙ্গ এ রাবার বোর্ডে ৭৯ শতাংশ জনবলই নেই। বোর্ডের অপূর্ণতা সেখানেই। বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে রাবার বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহান বলেন, ‘বোর্ডের কাজের গতি আসছে না জনবল সংকটের কারণে। এটা নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে লিখেছি। আশা করছি সহসাই এ সমস্যার সমাধান হবে। রাবার শিল্পে আসবে আলো।’
তথ্য মতে, রাবার একটি লাভজনক কৃষিভিত্তিক শিল্প। বিশ্বে রাবার থেকে বর্তমানে প্রায় ৪৬ হাজার পণ্য তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশে এ সংখ্যা আরো বেশি। রাবার বাগানগুলো অত্যন্ত শ্রমঘন কৃষিশিল্প হওয়ায় দেশের প্রত্যন্ত পাহাড়ী অঞ্চলের বাগানগুলোতে অশিক্ষিত/অর্ধশিক্ষিত নারী-পুরুষের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও গ্রামীণ জনপদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে এ শিল্পের। কার্বণ শোষণ ও মাটির ক্ষয়রোধের মাধ্যমে রাবার বাগান পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। প্রাকৃতিক কাঁচা রাবার আমদানির ক্ষেত্রে ব্যয়িত কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ও হবে এ শিল্পে ভালভাবে নজর দেয়া গেলে। রাবার গাছ রোপণের পর ৬ বছর পরিচর্যা শেষে ৮ম বছরে উৎপাদনে আসে এবং ২৫ বছর অব্যাহত উৎপাদন দেয়ার পর ৩২-৩৩ বছর বয়সে গাছগুলো অর্থনৈতিক জীবনচক্র হারায়। এসব গাছ কেটে প্রাপ্ত কাঠ প্রক্রিয়াজাতকরণের পর শক্ত ও টেকসই ১ম শ্রেণির পর্যায়ের কাঠ হতে উন্নতমানের আসবাবপত্র এবং কাঠজাত সামগ্রী তৈরি করা হয়। এদিকে শ্রমিকসংকট এবং শ্রমদর বৃদ্ধি পাওয়ায় মালয়েশিয়া পর্যায়ক্রমে রাবার চাষ সংকুচিত করে পামওয়েল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের জন্য এটা সুর্বণ সুযোগ হয়ে উঠতে পারে।
বাংলাদেশে রাবার চাষের প্রাপ্ত তথ্যাবলী বলছে, কোলকাতা বোটানিক্যাল হতে ১৯১০ সালে কিছু চারা এনে চট্টগ্রামে ও সিলেটে চা বাগানে রোপণ করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৫২ সালে বনবিভাগ টাঙ্গাইলের মধুুপুর, চট্টগ্রামের হাজেরীখিল ও পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় পরীক্ষামূলক কিছু গাছ রোপণ করে। রাবার চাষ সম্প্রসারণের লক্ষে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৬২ সালে বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের নিকট বাণিজ্যিকভাবে রাবার চাষের দায়িত্ব পড়ে।
রাবার বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহান বলেন, প্রতিটি রাবার গাছ থেকে গড়ে দৈনিক ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম ল্যাটেক্স সংগ্রহ করা যায়। দেশে এক লাখ তিন হাজার জমিতে রাবার চাষ করা হয়। ৩০ হাজার মেট্রিক টন রাবারের চাহিদা থাকলেও দেশে উৎপাদন হয় ২০ হাজার মেট্রিক টন। ১০ হাজার মেট্রিক টন আমদানি করতে হয়। এতে শতশত কোটি টাকা দেশ থেকে চলে যায়। এ চাহিদা পূরণে উৎপাদন বাড়ানোর উপর মনোনিবেশ করতে চান বোর্ড চেয়ারম্যান।