রাঙামাটিতে সড়কধসে যোগাযোগ বন্ধের শঙ্কা

29

ভারি বর্ষণে রাঙামাটি জেলার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়কধসে যে কোন সময়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে সড়কধস ঠেকাতে জেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ভারি যান চলাচলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, খাগড়াছড়ি সড়কের রাঙামাটি (মানিকছড়ি) বিসিক সংলগ্ন, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের সমাজ কল্যাণের পরে ২২ কিলোমিটার, ঘাগড়া কলাবাগান ও বান্দরবান কাপ্তাই সড়কের ২/৩ স্থানে সড়ক ধসের আশঙ্কা রয়েছে। এসব সড়কের ধসরোধে কাজ করছে সড়ক ও জনপথ এবং এলজিইডি বিভাগ।
রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের যাত্রী রেজাউল করিম বলেন, বর্ষা এলে সড়কের কাজ করা হয়। এ কারণে কাজ মজবুত হয় না। আর এ কাজে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ২০১৭ সালে ৪০ কোটি টাকার মত অপচয় করা হয়।
২০১৭ সালের ১৩ জুন ভয়াবহ পাহাড় ধসের দুই বছর অতিক্রান্ত হলেও পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারেনি রাঙামাটি। ওই ঘটনায় ৫ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। পরের বছর জেলার নানিয়ারচরে পাহাড় ধসে ফের ১৩ জনের প্রাণহানি ঘটে। ফলে এ বর্ষায়ও পাহাড় ধসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা করছে মানুষ।
রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের বেশ কয়েক স্থানে ধসে যাওয়া অংশ সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কের ভাঙনে গাছের খুঁটি দিয়ে পাইলিং দেয়া হয়েছে। বস্তায় মাটি ভরে বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। এসব বস্তা আর খুঁটিকে সড়কের বিপরীত পাশ থেকে লোহার দড়ি দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়েছে। কিন্তু গত বর্ষায় পানির প্রবাহে এসব মেরামত ধসে গেছে।
রাঙামাটি বাস মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, বর্ষার আগেই সড়কগুলো ঝুঁকিমুক্ত করা দরকার ছিল।
এদিকে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত রাঙামাটি-চট্টগ্রামসহ জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো আজও পড়ে আছে বেহাল অবস্থায়। সদরসহ জেলার ৭ উপজেলা এবং পাশের দুই জেলা খাগড়াছড়ি ও বান্দবানের অন্তত ১০ লাখ মানুষ এসব সড়কের ওপর নির্ভরশীল। সড়কগুলো গাছের খুঁটি আর মাটি ভরাট করে কেবল সাময়িক সংস্কার করা হয়েছে। এসব কাজে ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ১১ কোটি টাকা। অথচ এসব টাকা খরচ করেও ঝুঁকি এড়ানো যায়নি- এমন মত অনেকের।
স্থানীয়রা বলছেন, দুই বছরেও ঝুঁকিমুক্ত হয়নি রাঙামাটির পাহাড়ধসে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো। বর্ষার শুরুর আগেই পাহাড়ধসে ভেঙে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলোর মেরামত ও সংস্কারকাজ দ্রæত শেষ করার তাগিদ দিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ।
রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, গত জুনের আগেই রাঙামাটি-চট্টগ্রামসহ জেলার ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের ১২৮টি স্থানে স্থায়ী মেরামত ও পুনঃনির্মাণ করতে মন্ত্রণালয়ে ডিপিপি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তা ছাড় না পাওয়ায় কাজ সম্পন্ন করার সম্ভাবনা নেই। সড়কগুলোর স্থায়ী মেরামত ও পুনঃনির্মাণে ১৭০ কোটি টাকার ডিপিপি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়।
এদিকে রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্য মতে, রাঙামাটি শহরে ৩৩, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে ৫৬, রাঙামাটি-বান্দরবান সড়কে ২৬, বাঙ্গালহালিয়া-রাজস্থলী সড়কে ৫ এবং বগাছড়ি-নানিয়ারচর-লংগদু সড়কে ৩ স্থানসহ ১২৮টি স্থানে সড়ক ধসে গেছে। এসব স্থানে স্থায়ী কাজের প্রস্তাবনা পাঠানো হয় মন্ত্রণালয়ে।
এর আগে পাহাড়ধসের পর এসব সড়কের ১১৩ স্থানে ভাঙন ও গর্তের সাময়িক সংস্কার কাজ করা হয়। এতে ব্যয় হয়েছে সাড়ে আট কোটি টাকারও বেশি। এছাড়া রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের সাপছড়ি শালবাগান এলাকায় ধসে যাওয়া মূল সড়কের ওপর অস্থায়ীভাবে যান চলাচলের জন্য নির্মিত হয় একটি বেইলি সেতু।