যৌতুকলোভী স্বামীর হাতে যেভাবে খুন হলো এক নারী

9

হাটহাজারী প্রতিনিধি

মুঠোফোনে পরিচয়। পরিচয় থেকে প্রেম এবং পরে পরিণয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অর্থের লুলুপ দৃষ্টির কাছে কিছুই টিকল না। আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়েও বলি হতে হয়েছে স্বামীরূপী পাষন্ড এক মানবরূপী দানবের কাছে।
ফটিকছড়ির দাঁতমারায় চা-বাগানে পিতার সাথে চাকরি করে পরিবারের হাল ধরতে চেয়েছিল মণি আক্তার (২২)। সেখানেই পরিচয় মো. সুমনের (৩৫) সাথে। পরে তার সাথে বিয়ে হয় মণি আক্তারের। কিন্তু যে সুখের আশায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন সে সুখ তো আসলই না, বরঞ্চ তার হাতেই মৃত্যু হতে হল নির্মমভাবে।
গত বছরের ৩১ অক্টোবর রাতে তাকে পাষন্ড স্বামী সুমন হত্যা করতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালায়। এ ঘটনায় ভুজপুর থানায় মণির বড় ভাই মো. আব্বাস বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা রুজু করে।
ওই মামলার সূত্র ধরে ঘটনার প্রায় ছয় মাস পর র‌্যাব-৭ এর হাটহাজারী ক্যাম্পের সদস্যরা গতকাল শনিবার ভোরে নগরীর বায়োজীদ থানাধীন চন্দ্রনগর এলাকার কলাবাগানস্থ জেডএ আবাসিক এলাকা থেকে সুমনকে গ্রেপ্তার করে। সুমন ভুজপুর থানার বাদুরখিল এলাকার বোছা মিয়ার বাড়ির আবুল কাশেমের পুত্র। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সুমন তার স্ত্রী মণি হত্যার বর্ণনা দেয়।
সুমনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন র‌্যাব-৭ হাটহাজারী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত এসপি মো. মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, সুমন প্রায় আট বছর আগে প্রথম বিয়ে এবং বছর দুয়েক আগে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এদের প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে তাদের বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দিত। এসব তথ্য গোপন করে সুমন বছর দেড়েক আগে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে মণি আক্তারের সাথে প্রেমের সম্পর্ক করে তাকে বিয়ে করে। যদিও বছর না ঘুরতেই যথারীতি সুমন বিভিন্ন সময় যৌতুকের টাকার জন্য মণিকে শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সংসার টিকানোর লক্ষ্যে মণির পরিবারের লোকজন সুমনকে একটি মোটরসাইকেল কিনে দেয় এবং নগদ ৫০ হাজার টাকা দেয়। এছাড়া স্বামীর যৌতুকের চাহিদা মিটানোর জন্য মণি নিজেও চা বাগানে চাকরি করত।
আসামিদের বরাত দিয়ে র‌্যাব জানায়, গত বছরের ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যায় সুমন যৌতুকের জন্য মণি আক্তারের বাবার কর্মস্থলে আসে এবং পুনরায় যৌতুকের দাবিকৃত টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। মণির দরিদ্র পিতা টাকা দিতে না পারায় সুমন ক্ষিপ্ত হয়ে তার স্ত্রীকে নিয়ে বন্ধু টিপুর মোটরসাইকেল যোগে রওনা দেয়। এ সময় কেন যৌতুকের টাকা আনতে পারল না এই নিয়ে মোটর সাইকেলে বসেই সুমন তার স্ত্রী মণির সাথে তর্কাতর্কি ও গালিগালাজ করতে থাকে। একপর্যায়ে তারা ভুজপুর থানাধীন কালিকুঞ্জ নামক স্থানে আসলে বাম চোখ নষ্ঠ করে ফেলে ও দুই হাত দুই পা মুছড় দিয়ে ভেঙে ফেলে এবং ইট দিয়ে মাথায় প্রচন্ড আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে মোটর সাইকেলের গরম সেলেঞ্জার পাইপের সাথে বুক চেপে ধরে পুড়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করার চেষ্টা করে।
পাষন্ড সুমন ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাাহিত করার জন্য মণিকে প্রথমে নাজিরহাট সরকারি হাসপাতালে নেয়। কিন্তু তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে আত্মগোপনে চলে যায়। এরমধ্যে দীর্ঘ ২৬ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে মণি না ফেরার দেশে পাড়ি জমায়।
বর্তমানে গ্রেপ্তারকৃত সুমনকে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অফিসার ইনচার্জ ভুজপুর থানা বরাবরে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।