যে পথে গাড়ি নেই

100

নিলয়ের জন্ম গ্রামে, বয়স ৬ বছর। নিলয় গাড়ি দেখলে খুব ভয় পেতো। তাদের বাড়ির পাশ দিয়ে যখন কোন গাড়ি যেতো সে গাড়ির আওয়াজ শুনলেই দৌড়ে পালাতো। গাড়ি তার কাছে খুব ভয়ঙ্কর লাগতো। সে রিক্সা ছাড়া কখনো অন্য কোনো গাড়িতে উঠেনি। বেবিট্যাক্সি অথবা মোটর সাইকেলের আওয়াজ শুনলেই ভয়ে নিলয় দৌড়ে মায়ের কাছে চলে যেতো। নিলয়কে স্কুলে ভর্তি করানো হলো। তার স্কুলের ভবন দোতলা বিল্ডিং। নিলয় বিল্ডিং দেখলেও খুব ভয় পেতো। নিলয় কান্নাকাটি শুরু করে দিলো সে স্কুলে যাবে না তার মা জিজ্ঞেস করলো কেনো যাবিনা তুই? নিলয় বললো বিল্ডিংটা আমার মাথার উপর ভেঙ্গে পড়বে আমি স্কুলে যাবো না। তার কথা শুনে সবাই হাসতে লাগলো। অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে তাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া হলো। স্কুলের ভবনের কাছে যেতেই সে কান্না শুরু করে দিলো। কোন ভাবেই সে স্কুলের ভিতরে ঢুকবে না তার মাথায় নাকি বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়বে। নিলয়ের বড় ভাই তাকে জোর করে টেনে নিয়ে গেলো স্কুলের ভিতরে। নিলয় ভয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো। কান্না করতে করতে মাটিতে লুটিয়ে গেলো। তারপর যখন দেখলো বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়ছে না আস্তে আস্তে তার ভয় কেটে গেলো।
তারপর থেকে সে আর ভয় পাইনি নিয়মিত স্কুলে যাওয়া শুরু করলো।
নিলয়ের খালার বাড়ি শহরে । নিলয়ের বাবা-মা ঠিক করলো নিলয়ের পরীক্ষা শেষ হলে তাকে নিয়ে শহরে তার খালার বাড়ি বেড়াতে যাবেন। ছোটবেলা থেকে নিলয়ের কোথাও যাওয়া হয়নি।
তাই এই প্রথমবার সে গ্রাম থেকে শহরে যাবে। কিন্তু একটা সমস্যা সামনে এসে গেলো আবার। সে তার মা বাবাকে বললো আমরা যে শহরে যাবো, আমরা কি গাড়িতে করে যেতে হবে? তার বাবা বললো হ্যা বাবা আমরা গাড়িতে করে শহরে যাবো। নিলয় বললো তাহলে আমি যাবোনা। তার মা বললো কেনো যাবেনা বাবা? তখন নিলয় উত্তর দিলো, আমি গাড়িতে উঠতে পারবো না। আর যদি যাই যে পথে গাড়ি নেই সেই পথে যাবো। সবাই হাসতে লাগলো
তার কথা শুনে।
তার বাবা বললেন, আচ্ছা বাবা ঠিক আছে আমরা যে পথে গাড়ি নেই,সেই পথে যাবো। নিলয় খুব খুশি জীবনের প্রথম শহরে যাবে। তারপর দিন তারা বাড়ি থেকে রিকশায় করে স্টেশনে গেলো। বড় বড় গাড়ি দেখে নিলয় ভয়ে তার মায়ের বুকের সাথে চোখ বন্ধ করে রাখলো। আর বলতে লাগলো তোমরা বলেছো যে পথে গাড়ি নেই সেই পথে যাবে। এখন এতো গাড়ি দেখছি কেনো? সে কিছুতেই গাড়িতে উঠবেনা, জোরে জোরে কান্না করতে লাগলো। তার বাবা কোলে করে তাকে গাড়িতে তুললো। তারা সিটে গিয়ে বসলো, নিলয় ভয়ে মাথা নিচের দিকে দিয়ে মায়ের কোলে বসে থাকলো। কিছুতেই চোখ তুলতে পারছেনা সে। গাড়ি ছুটে চললো,সে কিছুই বুঝতে পারলো না। অনেক দূর যাওয়ার পর আস্তে আস্তে নিলয় চোখ খুললো। এবার মাকে জিজ্ঞেস করলো মা গাড়ি চলছেনা কেনো? তার মা বললো বাবা আমরাতো শহরের কাছে চলে এসেছি। তুমি বাইরের দিকে তাকাও, নিলয় আস্তে আস্তে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। সে অবাক হয়ে গেলো গাছগুলো কেমন দ্রæত বেগে পিছনে চলে যাচ্ছে। অনেক দূরে বাড়ি ঘর দেখা যাচ্ছে। আস্তে আস্তে নিলয়ের মন থেকে গাড়ির ভয়ও চলে গেলো। এখন আর নিলয় গাড়ি দেখলে ভয় পায়না। সকল বাচ্চাদের মনেই অনেক কিছু নিয়ে ভয় থাকে স্বাভাবিক ভাবেই কোন এক সময় তা কেটে যায়।