মোটরসাইকেল ঝুঁকিপূর্ণ জনপ্রিয় বাহন নিরাপদে চলুক সারাক্ষণ

22

খন রঞ্জন রায়

বর্তমান প্রজন্মের কাছে ভালবাসার বিলক্ষণীয় যান্ত্রিক বাহন ‘মোটরসাইকেল’। ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী তরুণ আরোহীদের তিড়িং বিড়িং করে রাস্তা দাবরিয়ে বেড়ানোর এই যন্ত্রটির আবিষ্কার বেশ পুরুনো। গতলিয়ের ডেইলমার এবং উইলহেম মেব্যাচ ১৮৮৫ সালে জার্মানির ব্যাড ক্যাস্তাতে বসে এর আবিষ্কার করেছিলেন। যন্ত্রচালিত সাইকেলরূপে প্রথম স্বীকৃতি পায়। আবিষ্কার দরবারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে অনিরাপদ যানবাহন হিসাবে বিবেচিত হয়েই এতদিনের পরিক্রমা চলমান রেখেছে। অধিবাস্তবিক এক আবহ নিয়ে অনন্তহীন কৌতূহলের বশবর্তীতে বর্তমান বিশ্বে এই দ্বিচক্রযানের পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি বলে ধারণা করা হয়। জীবন অভীস্পার এই হিসাবে প্রতি এক হাজার ব্যক্তির জন্য গড়ে ৩৩টি মোটরসাইকেল বরাদ্ধ হয়েছে। অবশ্য চারচাকা এই যানের মুনশিয়ানা আছে। ধারণা করা হয় বিশ্বে গাড়ি আছে প্রায় ৫৯ কোটি। প্রতি হাজারের গড় করলে অত্যন্ত মুখরভাবে ৯১ টি পরে।
গভীর মানবিয় আবেগের এই যানের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের আকাক্সক্ষার দ্রোপদী সত্তা রয়েছে। দেশে নিবন্ধিত ৫১ লাখ যান্ত্রিক যানবাহনের মধ্যে ৩৬ লাখই মোটরসাইকেল। মোট যানবাহনের শতকরা হিসাব করলে অপমান গাথা তথ্য চার ভাগের তিন ভাগই মোটরসাইকেল। গঠনগতভাবে অপক্ষোকৃত অনিরাপদ বাহন এই মোটরসাইকেল বাংলাদেশে ব্যাপক মিশ্রিতভাবে আশংকাজনক হারে চাহিদা বাড়ছে। মোটরসাইকেল, মোটরবাইক, বাইক যে নামেই অভিহিত করা হয় অতীত ভেঙে আসা ইতিহাসে কৌতুকপূর্ণভাবেই এর অবস্থান ফুটিয়ে তোলা হয়। সচরাচর একজন ব্যক্তি কর্তৃক এই যানবাহন চালানো হলেও এর পিছনে আরোহণ করা মোটর আরোহীর সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যানজট, জনজট ঠেলে দ্রুত গমনের সুবিধা নেয়ার কারণে আমাদের মতো বিশৃংখল উন্নয়নশীল দেশে এর চাহিদার প্রভাব বাড়ছে। সারা বিশ্বে প্রস্তুতকৃত মোট মোটরসাইকেলের ৫৮ শতাংশ-ই এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশসমূহে ব্যবহার করা হয়। যান চলাচলের ধারাবাহিকতার প্রতীক ভেবে দক্ষিণ এশিয়া ও এশীয় – প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলিই এর প্রধান ভোক্তা। নতুন নতুনরূপে আবিষ্কার করা নানা রং-রূপ-শক্তির এই বাহন ব্যবহারের শীর্ষে ভারত। উর্বরতা ও নবজীবনের প্রতীক হিসাবে এর পরের অবস্থান নিশ্চিত করেছে চীন।
নিউজিল্যান্ড, ইতালি, জার্মান, জাপানসহ উন্নত অনেক দেশেই এর আকর্ষণ দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে। আমেরিকা ব্রিটেন ফ্রান্স-তাঁদের অবশিষ্ট আকর্ষণের শেষ পরিণতি দেখিয়েছে। সমগ্র মোটরসাইকেল তুলে নিয়ে চালনা নিষিদ্ধ করছে। তাঁদের এই থ্যাবরা সিদ্ধান্তকে অনেক দেশই স্বাগত জানিয়েছে। তাঁরা গণপরিবহনের সক্ষমতা বাড়িয়ে মোটরসাইকেল ব্যবহারকে নিরুৎসাহীত করছে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই ভাবনা ভাবলে অনেকেই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠবে। তাঁরা চিৎকার চেঁচামেচি করে বলবে সমস্যা ভাবলেই সমস্যা। অযাচিত এই বাহনের আগমনের যৌক্তিকতা স্বয়ংবর সভার মতো তুলে ধরবে। যুক্তি আহŸানকারীদের চির অপমানিত করবে। তাঁদের উপস্থাপনার কৌশলের নিকট জাতীয় বৈরী আর বিশ্বাসঘাতক হিসাবে পুুনঃপুন প্রশ্নের সম্মুখীন করবে। এই আঙ্গিকের প্রতিবাদ করে অসুর শক্তির প্রতিক‚লতার কাছে টিকে থাকতে পারবে না। অথচ যারা চেনেন ও জানেন দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার মৃত্যু ও আহত হওয়ার ব্যথাদায়ক সংখ্যা দিন দিন আনুপাতিক হারে বাড়ছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি পরিচালিত জরিপে দেখা যায় দেশে মোট দুর্ঘটনার ৪৮ ভাগই নিরাসক্তির এই মোটরসাইকেল। এর মাত্রা ও তল বিবেচনা করলে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৮ জনই সেয়ানে সেয়ানে লড়া মোটরসাইকেল যাত্রী। কেঁদে-কঁকিয়ে আরো একটি বড় অংশ পঙ্গুত্ববরণ করছে। দুর্ঘটনার ধাক্কায় কুপোকাত হওয়া মোট জনগোষ্ঠীর ৯০ শতাংশ বয়সে তরুণ। মর্মে মর্মে অনুভব করলে দেখা যায় কর্মক্ষম এই তরুণরাই দেশের চালিকাশক্তি। মূল জনশক্তির স্পর্শ বিচ্যুত নয় তাঁরা। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী দেশে মোট যুব জনগোষ্ঠী প্রায় ৫ কোটি, মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ। জাতীয় যুবনীতিতে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীকেই যুব হিসাবে গড়ে তোলার জন্য সর্বতোভাবে সাহায্য রাষ্ট্রকেই করতে হয়। তাঁদের মধ্যে আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত করার লক্ষ্যে উৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হয়। যোগ্যতা-দক্ষতা-সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাই তাঁদের বিপথে যাওয়া রোধ করবে।
উন্নয়ন অগ্রযাত্রার চালিকাশক্তি এই যুব সমাজকে তড়িখড়ি করে কোন কাজে লাগানোর চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে বলেছে জনশক্তি বিশেষজ্ঞগণ। হাজারো বায়নাক্কা তাঁদের থাকতে পারে, তবে বিপদে যেতে প্রেরণা যোগায় এমন বায়না পূরণ না করার জন্যও বলা হয়েছে। মোটরসাইকেল বায়নার অন্যতম একটি ঘণ্টাধ্বনি। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা বিভাগ বলেছে দেশের জেলা উপজেলা শহর থেকে প্রত্যান্ত গ্রামীণ এলাকায় অনিবন্ধিত ১৫ লাখ মোটরসাইকেল চলাচল করে। উঠতি বয়সী তরুণরাই বেপরোয়া গতিতে এইসব মোটরসাইকেল চালিয়ে কখনো কাইজ্জ্যা-ফ্যাসাদে জড়িয়ে পড়ে। তাঁদের উপর অর্পিত দায়দায়িত্বের কথা বেমালুম ভুলে যায়। ঝুট-ঝামেলা পাকিয়ে সমাজ-সংস্কৃতির ঐতিহ্যের গালে জোরালোভাবে চপেটাঘাত করে। অথচ এই যুবরাই যুগে যুগে কালে কালে ইতিহাস সৃষ্টির সৃজনশীল কাজ করেছে। বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে উজ্জীবিত হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এদেশকে শোষণমুক্তির স্বপ্ন দেখেছিল। তাঁদের তেতে ওঠা জাগরণেই দেশ স্বাধীন ত্বরান্বিত হয়।
সরকারও যুবদের মেরুদন্ড যেন জেলি ফিসের মতো না হয় সেই দিকে সদা সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন। প্রণয়ন করেছেন জাতীয় যুবনীতি ২০১৭। জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির ব্যুরো অব পলিসি অ্যান্ড প্রোগ্রাম সাপোর্ট দেশের অর্থনীতিতে যুব সম্পৃক্তি বিশেষ প্রশংসা করেছেন। সরকারের ন্যাশনাল সার্ভিসের আওতায় দেশের অগ্রাধিকার প্রাপ্ত জেলাওয়ারি যুব প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ব্যবস্থা করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এই সমস্ত যুব প্রশিক্ষণ সার্থকভাবে সম্পন্নের ফলে ইউনিসেফ তাঁদের দৃষ্টি প্রসারিত করে। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে “চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভোলপমেন্ট ফর ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড” পুরষ্কারে ভ‚ষিত করে। জাতিসংঘের সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং তৎপরবর্তীতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যুব সমাজের অভ‚তপূর্ব সারা পেয়েছেন। সরকারের সকল প্রচেষ্টা যেন ব্যর্থতায় পর্যবসিত না হয় সেজন্য সতর্ক দৃষ্টি নিয়ে যুবসম্পৃতির অনুধারা সুস্পষ্টভাবে বিধৃত করা হয়েছে।
উন্নয়ন ঐতিহ্য অবগহনের আকাক্সক্ষা নিয়ে ‘ভিশন ২০২১, রূপকল্প ২০৪১ এবং ডেল্টা প্লান ২১০০ প্রণয়ন করা হয়েছে। এইসব পরিকল্পনা মানববীক্ষার সম্যক প্রতিফলন হলেও মূলত যুবরাই এর বাস্তবায়নের মূল চাবিকাঠি। মানব ভাবনার যথার্থ উৎসারণ ঘটিয়ে প্রণীত দেশসেবাধর্মী এইসব দূরদর্শী পরিকল্পনা দেশের মানুষের কাছে গভীর ঋণ ও দায়বদ্ধতার নিদর্শন। সূ²াতিসূ²ভাবে ভাবনার গভীরে গেলে বুঝা যায় সবই হয়েছে যুব ভাবনাকে নিয়ামক শক্তি ভেবে। অথচ এই যুব – তরুণরা দেশের সড়ক আইনের তোয়াক্কা না করে পরিবহন আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সড়ক, মহাসড়কে মোটরসাইকেল নিয়ে দাপিয়ে বেড়ায়। ফাঁকা রাস্তাঘাট পেলে নবনির্মিত উড়াল সড়কে গতির বেপরোয়া ভাব দেখায়।
ব্যক্তিগত দেশপ্রেম, অপ্রেম, প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি কিংবা আনন্দ- বেদনার মিশেলকে কিছুটা জঙ্গিপ্রবণ করে তুলে। আইন-শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর নাকের ডগায় এইসব ঝুঁকিপূর্ণ বাইক চালনা করে। অনিবার্য উত্তাপ জাগানো নব নব কাদয়া কৌশলের এই বাইক চালানো প্রদর্শন যথারীতি দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ২০২১ সালে মোট দুই হাজার ৭৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে। এতে মারা যায় সম্ভাবনাময় দুই হাজার ২১৪ জন তরুণ-যুবক। যা সড়ক দুর্ঘটনার মোট মৃত্যুর ৩৫ শতাংশ। অবশ্য এর পূর্বসূরি মোটরবাইক কর্তৃক জন্ম দেয়া দুর্ঘটনার পরিমাণ পর্যায়ক্রমিক কম ছিল। তাঁদের গবেষণায় জানানো হয়েছে আগের বছরের তুলনায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ৫০ শতাংশ বেড়েছে। মৃত্যু বেড়েছে ৫১ শতাংশ। দিনদিন এই পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবে বলেও আশঙ্কা করেছে। অবশ্য অকাট্য যুক্তিযুক্ত কিছু তথ্য-উপাত্ত ও হিসাব-নিকাশও প্রকাশ করেছে।
তাঁরা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে যে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা ও দুর্যোগের মধ্যেও বাংলাদেশে মোটরসাইকেলকে সহজলভ্য করা হয়েছে। ইঞ্জিনের সক্ষমতা প্রতিনিয়ত বাড়ানো হচ্ছে। মোটরসাইকেল ব্যবহারে নানারকমভাবে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ, বাণিজ্যিকভাবে দূরপাল্লার মোটরসাইকেল আগমনের মধ্য দিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই অন্যায় নীতির কাছে নতমস্তক কুর্ণিশ জানানো হচ্ছে।
ব্যবসায়িক মনোভাবের প্রাণবন্ত সংযুক্তি মোটরসাইকেল কাহিনীকে আরো জটিল করে তুলেছে। দেশের সড়কের মান-উপযোগী নকশা কিংবা গুণগতমান সম্পন্ন হেলমেট সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে কিনা এইসব যাচাইয়ের কোন ব্যবস্থা রাখা হয় নাই। গবেষণায় দেখা গেছে গুণগতমানসম্পন্ন হেলমেট সঠিকভাবে ব্যবহার করলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার ঝুঁকি ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব। আর মৃত্যুবরণের নির্ঘাত খবর ৪০ ভাগ পর্যন্ত কমে যায়। বিশ্বের অনেক দেশ এর ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করা হয়। অনেক দেশে মোটরসাইকেল তৈরির কলাকৌশলে অযাতিত হস্তক্ষেপ করে সড়ক দুর্ঘটনা বহুলাংশে কমিয়ে আনতে পেরেছে। মোটরসাইকেল তৈরি ও ব্যবহার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বিপরীতমুখী আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। ফলাফল কিশোর-তরুণ-যুব উঠতি বয়সীদের অনিশ্চিত যাত্রায় প্ররোচিত করা।
বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থেকে কিংবা খোদাভীরু হয়েও মহৎ অভিপ্রায়ে মোটরবাইক নিয়ন্ত্রণনীতি আলাদাভাবে প্রতিপালনের কোন ইঙ্গিত দেখা যায় না। মোটরসাইকেল চালনার স্বপ্নের অনিয়ন্ত্রিত নিয়মে জীবনের সব আনন্দ ভেসে যাক, তরুণরা অন্ধকারের হিমকুঠুরিতে নিপতিত হোক এই ভাবনাই কাজ করছে। বলা ভালো সস্তা-সহজলভ্য ইন্দ্রিয়ানুভ‚তিকে আবেগের স্রোতে ভাসানো এই বাইক কেবল আমাদের দেশে নয় পৃথিবীর অনেক দেশের কিশোর তরুণ-যুবকদের সংবেদনশীল জীবনের কোমল আলোছায়া ‘মোটরসাইকেল’। অনেকের অন্তর্ভেদী দৃষ্টি নিয়ে আত্মবিশ্বাসে, উচ্ছ¡াসে, জীবনের অন্তর্নিহিত দীপ্তিতে ভরপুর এই বাইক চালনা। এই চালনাকে সাবধানতার সাথে সচেতনভাবে আইন-কানুন মেনে আগ্রাসী চোখে না তাকিয়ে, লাবণ্যদ্যুতিতে উপভোগ করার জন্যেই সৃষ্টি বিশ্ব মোটরসাইকেল দিবস।
এই দিবসের বহ্নিশিখা শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালে। রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতায় জীবনের পরিপূর্ণ আনন্দ পেতে দৈববাণীর মতো গ্রহণ করে এই দিবস ভাবনা। অল্প সময়ে বিশ্বব্যাপী বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। কোমল উত্তাপ নিয়ে মোটরসাইকেলের গুণগ্রাহীরা সুখস্মৃতিমাখা গাঢ় প্রভাবে প্রভাবিত হয়। ভোরের আলোর মতো এক কোমলতা নিয়ে অনেক দেশ খুব দ্রুত এর স্বীকৃতি দেয়। মোটরসাইকেল নকশা, ধরণ, তৈরি, বিপণন, চালানো, প্রশিক্ষণ, কারিগরি দক্ষতা, নিরাপত্তা,বাণিজ্যিক প্রভাবের চিন্তায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয়। ঝুঁকিপূর্ণ দুঃসাহসীকতার ঐতিহ্যযুক্ত এই দিবস ভাবনার জীবন্ত গুঞ্জনে সূক্ষকম্পন সৃষ্টি হয় ২১ জুনকে ঘিরে। হাজারো স্বর্ণপ্রভ দিনগুলোকে ভাবনা তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। তীব্র আকর্ষণে নিখুঁত চোখে চ‚ড়ান্ত বিন্দু স্পর্শ করে এই দিন- কারণ পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের এই দিন। অসামান্য প্রতিভা দেখানো যুক্তিনির্ভর এই ভাবনাকেই সার্থকতার পথে আলোকিত করা হয়।
অন্য সব দেশের সাথে আমাদের দেশেও যেন এই দিবস আদর্শভাবে ভঙ্গিসর্বস্ব না হয়, ব্যবসায়িক মনোবৃত্তির ভয়াবহ বন্যতা প্রকাশ না পায়, কল্যাণকর ভাবনার এই দিবসের চিন্তাস্রোতে গরম ছাই না পড়ে, মোটরসাইকেল চালনার সাথে আদর্শিক সম্পর্কের উষ্ণতা তীব্রভাবে প্রভাব বিস্তার করে- আজকের দিনে কল্পনানির্ভর এই ভাবনা তাড়িত করে।

লেখক : প্রাবন্ধিক, সমাজকর্মী