মুনিরীয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে আ. লীগ

138

রাউজানে আওয়ামী লীগ নেতা মোজাম্মেল হক ও মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল আনোয়ারের উপর হামলার ঘটনায় অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত রাখলেও মিছিল সমাবেশ অব্যাহত রেখেছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতবৃন্দ। গতকাল সোমবার উপজেলার দলীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অবস্থান করতে দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড়। এতে অনেকে মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটির নানা অপকর্ম তুলে ধরে স্ট্যাটাস দেন। গত রবিবার উপজেলার দলীয় কার্যালয় থেকে কাগতিয়া মাদ্রাসা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে গেলে সেখানে থাকা মুনিরীয়ার সমর্থকরা পালিয়ে যান। এসময় কাগতিয়ার পীর মুনির উল্লাহকে নিয়ে বিভিন্ন স্লোগানসহ আস্তানা গুড়িয়ে দেয়ারও হুমকি দেয়া হয়। মিছিল থেকে মুনিরীয়ার অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ ও অর্থের তদন্তে দুদকের প্রতি দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।
এসময় নেতৃবৃন্দ বলেন, তরিকা পালনে কাউকে বাধ্য করা, তরিকার নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম রাউজানের মাটিতে কোন অবস্থাতেই সহ্য করা হবে না। প্রয়োজনে তাদের আস্তানা গুড়িয়ে দেওয়া হবে। হামলাকারীদের বহিষ্কারে মুনিরীয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগতও জানান তারা। তবে এ ঘটনার জন্য প্রকাশ্য তাদের প্রধানকে ক্ষমা চাইতে হবে।
কাগতিয়া বাজারে আয়োজিত এ প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী। উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র বশির উদ্দিন খানের পরিচালনায় এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও পৌর প্যানেল মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ, রাউজান সদর ইউপি চেয়ারম্যান বিএম জসিম উদ্দিন হিরু, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান লায়ন সাহাবুদ্দিন আরিফ, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, পৌর কাউন্সিলর জানে আলম জনি, সাইফুল ইসলাম চৌধুরী রানা, উপজেলা যুবলীগের সহ সভাপতি সুমন দে, আবদুল লতিফ, আহসান হাবিব চৌধুরী, আলমগীর আলী, আবু সালেক।
এদিকে ঘটনার পর থেকে মুনিরীয়া যুব তবলীগের বিবৃতি-প্রতিবাদসমূহের বিষয়ে এক বিবৃতি প্রদান করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বশির উদ্দিন খান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জমির উদ্দিন পারভেজ। এতে বলা হয়, হামলার পর থেকেই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন নেতৃবৃন্দ এ ঘটনার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। এমনকি প্রশাসনের অনুরোধে শান্তিপূর্ণ অবরোধও স্থগিত করা হয়। মুনিরীয়ার কার্যক্রম সম্পর্কে শুধু আওয়ামী লীগ নয়, এলাকার সর্বস্তরের মানুষই জানেন। তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে এলাকায় অনেক লোকের প্রাণহানী ও অঙ্গহানি ঘটেছে। অথচ মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি এসব কার্যক্রমকে আওয়ামী লীগের নামধারীর সন্ত্রাসী কার্যক্রম উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছে, যা শাখ দিয়ে মাছ ডাকার মত। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, তাদের এসব মিথ্যা বিবৃতি প্রত্যাহার না করলে তারা কঠোর অবস্থানে যাবেন।
রাউজানে আওয়ামী লীগ ও মুনিরীয়ার মধ্যকার বিরোধ কোনমতেই না থামায় এলাকার মুনিরীয়া যুব তবলীগ সমর্থকদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে। অন্যদিকে দিনদিন প্রতিবাদমুখী হয়ে উঠছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি মুনিরীয়ার কর্মী সমর্থকদের অপকর্ম কোন মতেই এলাকায় করতে দেয়া হবে না। তারা জামায়াত ইসলামীর এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, সাধারণ জনগণও তাদের অপকর্মের প্রতিবাদে মুখর।
গত শনিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের দেয়া ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শেষ হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত প্রশাসন ঘটনার ব্যাপারে কোন কঠোর পদক্ষেপ না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন নেতৃবৃন্দ। এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর এলাকার মাসুদ, আবু মোসলেম ও মনছুর আলম নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়েরের পর মোহাম্মদপুরের পীর মাওলানা হাফেজ নুরুল আবছার ও একই এলাকার রিকশাচালক শাহ আলমও আলাদা মামলা দায়ের করেন মুনিরীয়ার বিরুদ্ধে।
রাউজান থানার ওসি মো. কেপায়েত উল্লাহ বলেন, ঘটনার পরপর দায়ী তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়াও মোহাম্মদপুরে হামলার শিকার মাওলানা হাফেজ নুরুল আবছার ও রিকশাচালক শাহ আলম নামের দুই ব্যক্তি পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশ ও মানববন্ধন : রাউজানে মুনিরীয়া যুব তাবলীগ কমিটির কর্মী কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল আনোয়ারের উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে দুই শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা রাউজান মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি সৌধের সামনে রাউজান উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি ও সমাবেশ করে দায়ী মুনিরীয়া যুব তাবলীগ কর্মীদের গ্রেপ্তারে আল্টিমেটাম দেন। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রশাসন আসামিদের গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হলে জাতীয়ভাবে সারাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে বলে মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়। সমাবেশে রাউজান মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল কমান্ডার আবু জাফর চৌধুরী বলেন, ১৯৭১ সালে মুনিরীয়া যুব তাবলীগ কমিটির প্রধান কার্যালয় কাগতিয়া আলিয়া মাদ্রাসা রাজাকারের আস্তানা ছিল। সে সময় এখানে স্বাধীনতার পক্ষের লোকজনকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হতো। এমনকি মুসা খান নামের এক মুক্তিযোদ্ধা এই মাদ্রাসায় রাজাকারদের গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন। তিনি বলেন, তাদের সে আচরণ এখনো রয়ে গেছে। তাই স্বাধীনতার পরেও মুক্তিযোদ্ধার উপর আক্রমণ করতে তারা দ্বিধা করছে না। এসময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার তোফায়েল আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা ও ইউপি চেয়ারম্যান এম আব্বাস উদ্দিন আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা ও ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম।