মিরসরাইয়ে হবে দৃষ্টিনন্দন প্রবেশদ্বার ‘ওয়েলকাম টু চট্টগ্রাম’

77

রাহুল দাশ নয়ন

চট্টগ্রামে আছে প্রকৃতির ছোঁয়া। পাহাড়, নদীর অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পূর্ণতা পেয়েছে চট্টগ্রাম। এবার সেই সৌন্দর্য চট্টগ্রামের প্রবেমুখেই কৃত্রিমতায় ফুটিয়ে তুলতে যাচ্ছে জেলা পরিষদ। চট্টগ্রামের মানচিত্রে ইংরেজি হরফে লিখা থাকবে ‘ওয়েলকাম টু চট্টগ্রাম’। সুউচ্চ পাহাড়ের পাদদেশে নদীর অববাহিকা। যেখানে পাল তুলে চলছে সাম্পান। যেন এক পলকেই চোখ আটকাবে চট্টগ্রামে। যাত্রীদের বিশ্রামের জন্য রাখা হয়েছে সুন্দর যাত্রী ছাউনি। মিরসরাইয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বাম পাশেই দৃষ্টিনন্দন এমন রেপ্লিকায় প্রবেশদ্বারটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পটিসহ আগামী দুই বছরে ৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে গুরুত্বপূর্ণ আটটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। চট্টগ্রামের জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান প্রশাসক মো. আব্দুস সালাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ এখন স্বাবলম্বী। নিজস্ব আয়ে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যেটি দশ বছর আগেও সম্ভব ছিল না। ইতোমধ্যে জেলা পরিষদ ভবনসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ চলছে। আরও আটটি নতুন প্রকল্পের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে মিরসরাইয়ে নির্মাণ করা হবে দৃষ্টিনন্দন প্রবেশদ্বার। এটি নির্মাণে পুরো চট্টগ্রামের প্রকৃতিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ গড়ার অভিযাত্রায় সামিল হয়ে বলিষ্ঠভাবে কাজ করছে জেলা পরিষদ। যার সুফল জেলা পরিষদের মাধ্যমে চট্টগ্রামবাসী পাচ্ছে।’
জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, ৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন আটটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার নির্মাণ, এক কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে চেয়ারম্যান বাংলো, চার কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে অফিসার্স ডরমেটরি, ৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে হাটহাজারীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ হোসেন বীর প্রতীক জেলা পরিষদ মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্স নির্মাণ, আট কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কুমিরা ফেরিঘাট পুনঃনির্মাণ, দুই কোটি ৩৯ লক্ষ টাকায় বাঁশখালীর চানপুর ডাকবাংলো সংলগ্ন নাটমুড়া মৌজার নিজস্ব ভূমিতে মার্কেট নির্মাণ, এক কোটি ৭২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে হাটহাজারী কাচারি সড়ক এলাকায় জেলা পরিষদ মার্কেট নির্মাণ, তিন কোটি ২৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ফটিকছড়ি নারায়নহাটস্থ জুজখোলা মৌজায় জেলা পরিষদ কমিউনিটি সেন্টার কাম মার্কেট নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী শাব্বির ইকবাল পূর্বদেশকে বলেন, ‘জেলা পরিষদের মালিকানাধীন যমুনা ও মেঘনা রেস্টহাউজ দুটি ভেঙ্গে চেয়ারম্যান বাংলো ও ডরমেটরি করা হবে। মিরসরাইয়ের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে নির্মাণ করা হবে দৃষ্টিনন্দন প্রবেশদ্বার। যেটিতে ফুটিয়ে তোলা হবে চট্টগ্রামের বিশেষত্ব। আয়বর্ধক প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা জেলা পরিষদের আয় বাড়াতে তৎপর। প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলো অনুমোদন হলেই দরপত্র কার্যক্রমের মধ্যদিয়ে দ্রæত কাজ শুরু করা হবে। অত্যন্ত অপ্রতুল জনবল দিয়েও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে।’
বর্তমানে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের নিজস্ব ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। প্রায় ৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই বেইজমেন্টসহ ১৬তলা বিশিষ্ট ভবনটির কাজ প্রায় ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে সেটির কাজ শেষ হবে। একইভাবে স›দ্বীপের গুপ্তছড়ায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে জেটিঘাট নির্মাণ করা হচ্ছে। যেটির কাজও ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এর আগে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের জন্য ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল অনন্য এক অধ্যায়। মার্কেট নির্মাণ, জায়গা উদ্ধার, দখলদারদের লিজের আওতায় এনে নিজস্ব আয় বাড়ানো হয়েছে। ২০০৯ সালে জেলা পরিষদের নিজস্ব আয় ১২ কোটি টাকা থাকলেও ২০২০-২১ অর্থ বছরে তা ১১৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ২৭ কোটি টাকার বাজেট এখন ৩৪৯ কোটি টাকা। ৯০ শতাংশ নিজস্ব আয়ে প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। গত ১২ বছরে ২১৭টি রাস্তা, ৬৫টি কালভার্ট, ড্রেন-গাইডওয়াল এক হাজার ৫৩২টি, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ৫৮টি, শহীদ মিনার ১০৮টি, গৃহহীনদের জন্য ঘর ৬০টি, মানবসম্পদ উন্নয়নে সেলাই, কাটিং, ব্লক, এমব্রয়ডারি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে দুই হাজার ৩৬০ জন নারী ও এক হাজার ৫৩৭ জন পুরুষকে। গরীব ও মেধাবী শিক্ষা বৃত্তি পেয়েছে পাঁচ হাজার ৫৩১ জন। ৫০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা দেয়ার পাশাপাশি এক হাজার ৯৬০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। দুই হাজার ৩১৮ জন দুস্থ ও অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা পরিষদ। দুর্যোগকালীন সময়ে গত এক বছরেই ২০ হাজার পরিবারকে সহায়তা দেয়া হয়েছে।