মায়ের কঠিন শাসনে সন্তানের মৃত্যু

66

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীর আকবর শাহ থানার বিশ্ব কলোনি এলাকায় মামার দোকান থেকে টাকা চুরির অভিযোগে মা কিশোর বয়সী ছেলে মো. হাছানকে (১৪) বাসায় ডেকে এনে মারধর করেন। মারধরের একপর্যায়ে লোহার খাটের সঙ্গে মাথায় আঘাত পেয়ে তার মৃত্যু হয়। এরপর ঘটনা ধামাচাপা দিতে হাছানের মা ও মামা মিলে আত্মহত্যার গল্প প্রচার করেন। তাতে তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। ধরা পড়ে যান পুলিশের হাতে। গত সোমবার রাতে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পর পুলিশ হাছানের মা কুলসুম বেগম (৩৮) ও মামা ফারুক ইসলামকে (২৪) গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ জানায়, বাসায় মায়ের মারধরের এক পর্যায়ে লোহার খাটের সাথে সজোরে ধাক্কা খায় কিশোর হাছান। এতে মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ঘটনার পর মা কুলসুম বেগম তাড়াতাড়ি ডেকে পাঠান মামা ফারুক ইসলামকে। তারপর দু’জন মিলে প্রকৃত ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে ছেলের লাশ বাসার চালে রডের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। প্রচার চালানো হয় আত্মহত্যা বলে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এ ঘটনা স্বীকার করার পর গত মঙ্গলবার বিকেলে মহানগর হাকিম শরীফুল ইসলামের আদালতে দেয়া জবানবন্দিতেও এ তথ্য উল্লেখ করেছেন মা কুলসুম বেগম।
আকবর শাহ থানার ওসি ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, চুরি করার কারণে ছেলেকে শাসন করতে গিয়ে মারধর করেন মা। এতে ছেলের মৃত্যু হয়। ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল না। তবে মারধরের ঘটনা ধামাচাপা দিতে আত্মহত্যার ঘটনা সাজানো হয়।
প্রতিবেশীদের বরাত দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, কিশোর হাছান মায়ের সঙ্গে আকবর শাহ থানার বিশ্ব কলোনি এলাকায় থাকত। বাবা বেলাল উদ্দিনের দুই স্ত্রী। হাছানের মা কুলসুম বেগম হলেন প্রথম স্ত্রী। দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে বেলাল পাহাড়তলী থানার ওয়্যারলেস কলোনি এলাকায় বসবাস করেন। দাম্পত্য কলহের জেরে স্বামীর কাছ থেকে আলাদা থাকেন কুলসুম। হাছান নগরীতে চলাচল করা একটি বাসে চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করত। টাকা চুরির অভিযোগে বছরখানেক আগে তাকে ওই কাজ থেকে বাদ দেয়া হয়। কুলসুমের এক ভাই নুরনবী বিশ্ব কলোনিতে একটি কুলিং কর্নার চালান। বাস চালকের সহকারীর চাকরি চলে যাওয়ার পর কুলসুম বেগম অনুরোধ করে মামা নুরনবীর কুলিং কর্নারে কিশোর ছেলে হাছানকে দৈনিক দেড়শ’ টাকা মজুরিতে কাজ পাইয়ে দেন। গত সোমবার কুলসুমের কাছে অভিযোগ আসে, তার ভাই নুরনবীর দোকান থেকে মানিব্যাগ ও নগদ এক হাজার টাকা চুরি করেছে হাছান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ছেলে হাছানকে বাসায় মারধর শুরু করেন কুলসুম। একপর্যায়ে ছেলেটি লোহার খাটের সঙ্গে মাথায় আঘাত পায়। পরে স্থানীয় একজন চিকিৎসককে ডেকে আনা হলে তিনি তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর ঘটনা ধামাচাপা দিতে কুলসুম বেগম বাসার কাছে থাকা তার ভাই ফারুক ইসলামকে ডেকে আনেন। দু’জন পরস্পর যোগসাজশ করে হাছান আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করতে বাসার চালে রডের সঙ্গে ছেলের লাশ ঝুলিয়ে রাখেন। হাছানের বাবা বেলাল গত মঙ্গলবার আকবর শাহ থানা পুলিশকে বিষয়টি জানায়। পুলিশ ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে সত্যতা পেয়ে কুলসুম ও তার ভাই ফারুককে গ্রেপ্তার করে।