মার্চ

26

আজ উত্তাল মার্চের দ্বিতীয় দিন। ১৯৭১ সালে এদিনে সারা বাংলাদেশ ছিল আন্দোলনমুখর। আগের দিন ১ মার্চ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার পর মুহূর্তের মধ্যে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২ মার্চ হরতালের ডাক দেন। এতে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানায় বাঙালি। চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ সারাদেশে হরতাল পালিত হয়।
দল, মত, পথ ও পেশা ভুলে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারাদেশ এক ও অভিন্ন হয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে। সব দোকানপাট, ব্যবসাকেন্দ্র, যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। সরকারি-বেসরকারি স্বায়ত্তশাসিত কোন প্রতিষ্ঠানেই কর্মচারীরা কাজে যোগ দেননি। হাজার হাজার মানুষ লাঠি হাতে রাজপথে নেমে আসেন।
চট্টগ্রামে হরতাল চলাকালে বিকেলে লালদীঘি মাঠে আওয়ামী লীগের জনসমাবেশ হয়। এতে পাকিস্তানের পতাকা পোড়ানো হয়। সমাবেশ শেষে সারা শহরে মিছিল করা হয়। স্বাধীনতাকামীদের হুংকারে কেঁপে উঠে দ্যুলোক-ভ্যূলোক। এছাড়া রাজধানী ঢাকা মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগ ও ডাকসুর আহব্বানে বিশাল ছাত্র সমাবেশ হয়।
এদিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় লাখো ছাত্র জনতার সামনে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করা হয়। ছাত্রলীগের এক নেতা একটি বাঁশের মাথায় পতাকাটি বেঁধে মিছিল নিয়ে আসেন সমাবেশে। এরপর তিনি পতাকাটি ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় ৪ নেতা নুরে আলম সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ ও আবদুল কুদ্দুস মাখনের হাতে তুলে দেন। আর পতাকাটি উত্তোলন করেন রব।
বিকেলে বায়তুল মোকাররম ও পল্টনে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে সন্ধ্যার পর অনেকটা হঠাৎ করেই ঢাকা শহরে রাত তিনটা থেকে ৩ মার্চ সকাল সাতটা পর্যন্ত কারফিউ জারি করে পাকিস্তানি সামরিক সরকার। আন্দোলনরত সাধারণ মানুষ তা প্রত্যাখ্যান করে। রাজপথে তাদের জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে রাতের ঢাকা মুখর হয়ে উঠে। ওই রাতেই বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে পাকিস্তানি সেনারা।