মাঠ, দিঘি ও উন্মুক্তস্থানে সৌন্দর্যবর্ধন করবে চসিক

35

ওয়াসিম আহমেদ
ফুটপাত দখল করে দোকান। বিজ্ঞাপন প্রচার ও লাগোয়া দোকানের ক্রেতার বসার স্থান তৈরি করতে করা হয়েছে অপ্রয়োজনীয় যাত্রী ছাউনি। আশপাশে কিছু গাছপালা লাগিয়ে দাবি তোলা হয় সৌন্দর্য্যবর্ধনের। সিটি কর্পোরেশনের সৌন্দর্য্যবর্ধন বলতে এমনই দৃশ্যপট দেখে আসছে নগরবাসী। সৌন্দর্য্যবর্ধনের নামে সড়ক-ফুটপাতে বাণিজ্য পাতার কর্মকাÐে আলোচনার চেয়ে সমালোচনা ও নিন্দার ভাগিদার হয়েছে সংস্থাটির।
এবার কলংক মুছতে ১০টি ঐতিহ্যবাহী উদ্যান ও খেলার মাঠ, পাঁচটি জলাধার ও দীঘি, নয়টি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে অবাণিজ্যিক সৌন্দর্য্যবর্ধন করার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কপোরেশন।
এ ছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে উন্মুক্ত স্থানে শিশু-কিশোর সুস্থ মানসিক বিকাশের উপযোগী করে বিনোদন স্পট ও প্লে-গ্রাউন্ড তৈরি করা হবে। এ জন্য একটি প্রকল্প তৈরির প্রস্তুতি চলছে বলে নিশ্চিত করেন সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
নগরীর ষোলশহরে অবস্থিত বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রামের মালিকানাধীন সুবিশাল মাঠ। সুযোগ-সুবিধা ও চর্চার অভাবে মাঠজুড়ে খেলার সেই আয়োজন এখন বিলুপ্তপ্রায়। আশপাশের অনেকে সেখানে গবাদিপশু চরান। সেই মাঠটিকে পুনঃউজ্জ্বীবিত করতে সবুজ চত্ত¡র, হাঁটার পথ, সাইকেল লেন, বসার বেঞ্চ, শিশুদের রাইড, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, শৌচাগার, আলোকায়নসহ অন্যান্য সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করা হবে। ভূমির মালিকানা অক্ষুণ রেখেই ওই মাঠে অবাণিজ্যিক সৌন্দর্য্যবর্ধনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় চসিক। তাই গত ১৭ নভেম্বর সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদুল আলম পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে অনাপত্তি চেয়ে চিঠি দেন। একইভাবে চর চাক্তাই স্কুল মাঠ, ফিরোজ শাহ ঈদগাঁ মাঠ, রেলওয়ের শহীদ শাহজাহান মাঠ, পলোগ্রাউন্ড কলোনি মাঠ, হালিশহর এস ক্লাব মাঠ, হালিশহর বহুরূপী খেলার মাঠ, হালিশহর হাউজিং স্টেট মাঠ, হালিশহর শিশু পার্ক, হালিশহর এইচ মাঠ, শেখ রাসেল পার্ক, বিডিআর মাঠ, কর্ণফুলী মেরিনার্স পার্ক সৌন্দর্য্যবর্ধন ও খেলাধুলার প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সিটি কর্পোরেশন।
এ ছাড়া রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন জোড় ডেবা, আগ্রাবাদ ডেবা, ভেলোয়ার দীঘি, বহদ্দার বাড়ি পুকুর, বহদ্দার বাড়ি মসজিদ পুকুরে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ তৈরি করা হবে। কোনো ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা থাকবে না এসব সৌন্দর্য্যবর্ধিত এলাকায়। একইভাবে ৩৯নং ওয়ার্ডের বক্স আলী রোড, পোস্তারপাড় থেকে দেওয়ানহাট, ৯নং ওয়ার্ডে ফিরোজ শাহ মিনার, আউটার স্টেডিয়াম, সিআরবি হিল, বাটালিহিল, জালালাবাদ পাহাড়, ঠাÐাছড়ি এলাকায় প্রতিবেশ ও পরিবেশের উন্নয়ন করা হবে বলে জানিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। ইতোমধ্যে এসব ভূমির মালিকানাধীন রেলওয়ে, বন্দর, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে অনাপত্তি চেয়ে চিঠি দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। অনাপত্তি পেলে প্রকল্প প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবে সংস্থাটি।
চসিকের নগর পরিকল্পনা শাখা সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে ৪৫টি প্রতিষ্ঠানকে আউটসোর্সিংয়ের আওতায় সৌন্দর্য্যবর্ধনের অনুমতি দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। এখানে দুয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাজ ছাড়া বাকি সবার সৌন্দর্য্যবর্ধনে ফুটপাত দখল করে দোকান বসানোর কৌশলই প্রতিফলিত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অধীনে ৭৫টি যাত্রী ছাউনি রয়েছে। এসব যাত্রী ছাউনিতে যাত্রী না থাকলেও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন ও লাগোয়া দোকানোর ক্রেতা বসার ব্যবস্থা থাকছে বরাবরের মত। এমনটি টেক্সটাইল, তারাগেট ও শেরশাহ এলাকায় গাছ কেটে ২২৫টি দোকানের বরাদ্দ দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। এ নিয়ে সচেতন মহলে বিতর্কের সৃষ্টি হলে বরাবরই অনড় থেকেছে চসিক। সাবেক মেয়র ও প্রশাসকের আমালে এসব বরাদ্দ হলেও নীতিমালা তৈরি করছেন মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
অবাণিজ্যিক সৌন্দর্য্যবর্ধন নিয়ে সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী পূর্বদেশকে জানান, গত কয়েক বছর সিটি কর্পোরেশনের কর্মকাÐের কারণে সৌন্দর্য্যবর্ধন মানে মানুষ মনে করছে ফুটপাত বরাদ্দ দেওয়া আর খাবার দোকান বসানোর কৌশলই হলো সৌন্দর্য্যবর্ধন। আমি সে ধারণা বদলে দিতে চাই। কোনো নির্দিষ্ট এলাকাকে সৌন্দর্য্যবর্ধন করা হবে সেখানে কোনো ব্যবসায়িক চিন্তা থাকবে না। নগরবাসীর বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার জন্য, অলস দিনে বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরে আসার জন্য নগরীর বিভিন্ন জায়গায় সৌন্দর্য্যবর্ধন করা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে খোলা জায়গায় খেলার মাঠ ও সুস্থ পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া হবে। আগ্রাবাদের ডেবা, জোড়দীঘি, আমাদের ফতেয়াবাদে লেকভিউ, রেলওয়ের শিশুপার্কের পাশের মাঠ, বাকলিয়া স্টেডিয়াম, তার পাশের জায়গায় শিশুপার্কসহ বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা নিয়েছি। এ নিয়ে রেলওয়ে ও বন্দরের সাথে কথা বলেছি। তারা জায়গা দিবে আমরা সৌন্দর্য্যবর্ধন ও সময় কাটানোর পরিবেশ তৈরি করে দিব। কোনো ব্যবসায়িক প্রতিফলন সেখানে ঘটবে না। ঢাকার হাতিরঝিল যারা করেছে, তাদের দিয়ে সৌন্দর্য্যবর্ধনের ডিজাইন তৈরি করা হচ্ছে। পরিত্যক্ত দীঘি ও স্পটগুলোকে মানুষের প্রাণের সঞ্চার করাতে চাই।