মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভরতা কমাতে চায় সিটি করপোরেশনসমূহ

37

নিজস্ব প্রতিবেদক

কাগজে-কলমে স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হলেও সবকিছুর জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয় সিটি করপোরেশনগুলোকে। এতে কাজের গতি ও বাস্তবায়নের গতি ধীর হয়ে যাচ্ছে। এমনকি আয়বর্ধক প্রকল্প হাতে নিলেও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন জটিলতায় আলোর মুখ দেখে না।
তাই মন্ত্রণালয়ের প্রতি নির্ভরতা কমিয়ে সিটি করপোরেশেনগুলোর গতি বাড়ানো নিয়ে মতবিনিময় করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র। দেশের বাকি সিটি করপোরেশনের মেয়রদের সাথে বৈঠক করে বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিমত জানানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
পূর্বদেশকে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। গতকাল নিজ কার্যালয়ে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সাথে মতবিনিময় করেন তিনি। এ সময় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, ‘চসিকের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগের বিষয়টি আমার অনেক ভালো লেগেছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিয়ে চসিক মেয়রের যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তা সত্যিই প্রশংসনীয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অভিজ্ঞতাকে আমি সিলেটের উন্নয়নে কাজে লাগাবো।’
চসিক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য লড়ছেন তা বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশনগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশেষ করে নিজস্ব আয় দিয়ে ব্যয় নির্বাহের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আর্থিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্মার্ট হতে হবে। চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরপরই নগরীর ক্রমবর্ধমান জনগণের জন্য সেবার মান বাড়াতে প্রযুক্তিনির্ভর বিনিয়োগে জোর দিচ্ছি। বিশেষ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরে কাজ করছি। পাশাপাশি কর আদায় প্রক্রিয়াকে ডিজিটালাইজ করার মাধ্যমে কর আদায়ের পরিমাণ বাড়িয়ে চসিককে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করছি।
মেয়র আরও বলেন, দেশে একমাত্র চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করে যাচ্ছে। সুশিক্ষা আর সুস্বাস্থ্য অর্জন ছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। এজন্য চট্টগ্রামের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পাবার অধিকার বাস্তবায়নে লড়ছি। বর্তমানে চসিকের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৬৫ হাজার শিক্ষার্থী পড়ছেন আর চসিক পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গত বছর সাড়ে আট লক্ষ নাগরিক চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন।
এসময় উপিস্থিত ছিলেন চসিক প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, কউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ (মঞ্জু), হাসান মুরাদ বিপ্লব, আবদুস সালাম মাসুম, চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার, মেয়রের একান্ত সচিব মাহাম্মদ আবুল হাশেম, স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মনীষা মহাজন, রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ, শিক্ষা কর্মকর্তা উজালা রানী চাকমা, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম, তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ, নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন, উপ-সচিব আশেক রসুল চৌধুরী (টিপু), স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ইমাম হোসেন রানা, জনসংযোগ ও প্রটোকল কর্মকর্তা আজিজ আহমদসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
বিশেষজ্ঞদের মতে সিটি করপোরেশন গুরুত্বপূর্ণ স্বায়ত্ত¡শাসনের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হলেও আর্থিকসহ নানা ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার কারণে নিজ উদ্যোগে সিটি করপোরেশনসমূহ নগর ও নাগরিক চাহিদার অনেক ক্ষেত্রে কর্মকান্ড পরিচালনা করতে পারে না। নগরের বিভিন্ন সেবা সংস্থাসমূহে কাজে সমন্বয় সাধনের জটিলতা, প্রকল্প ও ব্যয় বরাদ্দ অনুমোদনে মন্ত্রণালয় নির্ভরতার কারণে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তাঁর উপলদ্ধির জায়গা থেকে ‘সিটি গভর্নমেন্ট’ ধারণা ব্যক্ত করেছিলেন। পরবর্তী তাঁর উত্তরসূরীদের অনেকেই এবং সারাদেশের মেয়রদের অনেকেই এ বিষয়টি নিয়ে বিভিন্নভাবে কথা বলেছেন।