মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী

61

রাজনীতিক। মওলানা ভাসানী নামে সমধিক পরিচিত। তিনি ছিলেন একজন স্ব-শিক্ষিত ব্যক্তি। তাঁর জীবন ছিল গ্রাম ভিত্তিক, মতবাদ উগ্র এবং ঔপনিবেশিক রীতিনীতির প্রতি আস্থাহীন। ১৮৮০ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার ধনপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন হাজী শরাফত আলী খান। স্থানীয় স্কুল ও মাদ্রাসায় কয়েক বছর অধ্যয়ন ছাড়া তাঁর বিশেষ কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। তিনি কর্মজীবন শুরু করেন টাঙ্গাইলের কাগমারিতে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে। পরে তিনি ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট এলাকার কালা গ্রামে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। ১৯৪৮ সালের গোড়ার দিকে মওলানা ভাসানী পূর্ব বাংলায় আসেন, কিন্তু প্রাদেশিক মুসলিম লীগের নেতৃত্ব থেকে তাঁকে দূরে রাখা হয়। তিনি দক্ষিণ টাঙ্গাইল এলাকার উপ-নির্বাচনে মুসলিম লীগ প্রার্থী এবং করটিয়ার জমিদার খুররম খান পন্নীকে পরাজিত করেন। কিন্তু প্রাদেশিক গভর্নর অসদুপায়ের অভিযোগ এনে নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করেন এবং সকল প্রার্থীকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অযোগ্য বলে ঘোষণা করেন। ১৯৪৯ সালে পন্নীর ওপর থেকে এ বাধা তুলে নেওয়া হয়, কিন্তু ভাসানীর ওপর তা বলবৎ থাকে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মওলানা ভাসানী ভারতে চলে যান। ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি ঢাকায় ফিরে তিনি সর্বপ্রথম যে দাবিটি তোলেন তা হলো বাংলাদেশ ভূখন্ড থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অপসারণ। ঐ বছর ২৫ ফেব্রæয়ারি তিনি হককথা নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রকাশনা শুরু করেন। অচিরেই পত্রিকাটির প্রচার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। পত্রিকাটি অল্পদিন পরেই নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মওলানা দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইন-শৃঙখলা পরিস্থিতির অবনতি এবং খাদ্য সংকটের প্রতিবাদে অনশন শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি হুকুমত-ই-রববানী তরিকার প্রতিষ্ঠা করেন এবং আওয়ামী লীগ সরকার এবং ভারত-সোভিয়েতের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেন।
১৯৭৪ সালের এপ্রিল মাসে ছয়টি দল নিয়ে মওলানার নেতৃত্বে একটি যুক্তফ্রন্ট গঠন করা হয়। এ ফ্রন্ট ভারত-বাংলাদেশ সীমানা চুক্তি অবিলম্বে রদ এবং বিরোধী দলের বিরুদ্ধে নির্যাতনমূলক কর্মকান্ড বন্ধ করার দাবি জানায়। ৩০ জুন মওলানাকে গ্রেপ্তার করে টাঙ্গাইল জেলার সন্তোষে স্বীয় বাসভবনে গৃহবন্দী করা হয়। মওলানা ভাসানী ফারাক্কা চুক্তিকে বাংলাদেশের স্বার্থের পরিপন্থি বলে মনে করেন। তিনি ১৯৭৬ সালের ১৬ মে রাজশাহী থেকে ফারাক্কা অভিমুখে এক লং মার্চে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৬ সালের ২ অক্টোবর তিনি খোদায়ী খিদমতগার নামে একটি নতুন সংগঠন গড়ে তোলেন এবং সন্তোষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি সন্তোষে একটি কারিগরি শিক্ষা কলেজ, মেয়েদের একটি স্কুল এবং একটি শিশু কেন্দ্র স্থাপন করেন। তিনি পাঁচবিবিতে নজরুল ইসলাম কলেজ এবং কাগমারিতে মওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। আসামে তিনি ইতোপূর্বে ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন। ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। সূত্র: বাংলাপিডিয়া