ভেজাল বেশি দামও বেশি খাদ্যপণ্যে

22

নিজস্ব প্রতিবেদক

বর্তমান সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মূলভিত্তি নির্ধারণ করা হয়েছে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি। আর স্মার্ট সিটিজেন তৈরিতে নিরাপদ খাদ্য ও ভোক্তা অধিকার সুরক্ষিত না হলে বর্তমান সরকারের ঘোষিত রূপকল্প ২০৪১ কর্মসূচি সোনার বাংলা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কারণ খাদ্যে ভেজালের কারণে মেধাবী ও বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন নেতৃত্ব পাওয়া যাবে না। আবার খাদ্য-পণ্যের দাম অতিরিক্ত হলে মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং পুষ্টিহীনতার সম্মুখীন হবে। ফলে কর্মক্ষম জাতি পাওয়া সম্ভব হবে না। তাই নিরাপদ খাদ্য ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে ব্যবসায়ী, সরকারি দপ্তর ও ভোক্তাদের সমন্বিত উদ্যোগের ওপর জোর দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। শুধু আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। সকলের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সরকারি সেবা ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে আরও জনমুখী করা দরকার।
গতকাল সোমবার নগরীর আন্দরকিল্লা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কেবি আবদুস সাত্তার মিলনায়তনে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম এর উদ্যোগে নিরাপদ খাদ্য ও ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় অংশীজনের ভূমিকা বিষয়ক বিভাগীয় পরামর্শ সভায় বক্তারা উপরোক্ত মন্তব্য করেন।ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে পরামর্শ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। মুখ্য আলোচক ছিলেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. তৌহিদুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক বদিউল আলম ও চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন।
ক্যাব বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী ও ক্যাব যুব গ্রুপের সদস্য মিনা আক্তারের সঞ্চালনায় সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এর বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ ও জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা নাজমুস সুলতানা সীমা।
আলোচনায় অংশ নেন, সমাজ সেবা অধিদপ্তদরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহী নেওয়াজ, জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের ডা. শরমিন আক্তার, বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি ইলিয়াছ ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান বাবু, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি হাজী ছালামত আলী, দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি আলহাজ সালেহ আহমদ সুলেমান, চট্টগ্রাম ড্রিংকিং ওয়াটার ম্যানুফ্যাক্চার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফয়সল আবদুল্লাহ আদনান, ফুলকলি গ্রুপের মহা-ব্যবস্থাপক আলহাজ এমএ ছবুর প্রমুখ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু।
সভায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, পবিত্র মাহে রমজান আসন্ন। এই মাসে ব্যবসায়ী ও খাদ্য বিক্রেতারা ভেজাল ও মানহীন পণ্য বিক্রয়ে বিরত থাকবেন এবং পণ্যমূ সহনীয় মাত্রায় রাখবেন, এ প্রত্যাশা করি। দাম বাড়িয়ে ও মানহীন পণ্য বিক্রি করে মানুষের দুর্দশা বাড়ানো কোনো সুস্থ ও বিবেকবান মানুষের কাজ হতে পারে না। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন নগরবাসীর নাগরিক সুবিধা বাড়াতে প্রতিনিয়তই কাজ করছে নিরাপদ খাদ্য ও ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় ক্যাবসহ সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করবে। সাধারণ মানুষ যাতে স্বল্পমূল্যে পণ্য ক্রয় করতে পারেন, সে জন্য হলিডে মার্কেট ও ইফতারী মার্কেট তৈরীর চিন্তা করা হচ্ছে। নিরাপদ খাদ্য নগরী গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
খাদ্যে ভেজালকারীদের উদ্দেশে মেয়র বলেন, যাদের মাঝে পশুত্ব বিরাজ করে তারাই খাদ্যে ভেজাল মেশায়। নিজেরা চিন্তা করে না যে, দিন শেষে তারাও কিন্তু ভোক্তা। প্রশাসন সকল খাদ্য বিক্রেতাকে জরিমানা করে না। কিছু অসাধু দোকানি, যারা মানুষের সাথে প্রতারণা করে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হয়। মানুষ মাত্রই ভুল। আমরা সকলে ভুল করি। ভুলগুলো তো আমি নিজে দেখবো না, কারও না কারও ধরিয়ে দিতে হবে। সুতরাং, প্রশাসন মানুষের ভুলগুলো ধরিয়ে দিচ্ছে।
মুখ্য আলোচক অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সর্বসাধারণের মাঝে শিক্ষা ও সচেতনতা সৃষ্টিতে একযোগে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, যারা ব্যবসায়ী, খাদ্য উৎপাদক, যোগানদাতা ও আইন প্রয়োগকারী, দিন শেষে তারাও ভোক্তা। তাই ভোক্তা হিসাবে সচেতন হলেই তারা খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণ ও মানহীন খাবার বিক্রি করা অথবা অন্য ভোক্তার অধিকার খর্ব করতে পারেন না।
পরামর্শ সভায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সিটিকর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম চেম্বার, মেট্রোপলিটন, ওমেন চেম্বার, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, প্রাণী সম্পদ বিভাগ, মৎস্য, কৃষি সম্প্রসারণ, বিএসটিআই, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিভিল সার্জন, হোটেল ও রেস্তোরা মালিক সমিতি, দোকান মালিক সমিতি, চট্টগ্রাম সিটিকর্পোরেশন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ বাজার সমিতির প্রতিনিধি ও ক্যাব সদস্য/সদস্যাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।