ভূমিধসসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

40

রাঙামাটিতে ভারী বর্ষণে সদরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ভূমিধস ও বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। জেলার কাপ্তাইয়ে পাহাড়ধসে মৃত্যু হয়েছে চারজনের। এ ছাড়া পাহাড়ি ঢলে প্রাণ গেছে তিনজনের। তবে সরকারি তালিকায় একজনের মৃত্যু উল্লেখ করা হয়েছে। একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক (রুটিন দায়িত্ব) এসএম শফি কামাল জানান, গত শনিবার কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা থানার রাইখালী ইউনিয়নের কারিগর পাড়ায় পাহাড়ধসে প্রাণ হারিয়েছেন অটল বড়–য়া (৫২) ও শৈহ্লা উ মারমা (৪৫)। এর আগে ৮ জুলাই একই উপজেলার কলাবাগান এলাকার মালি কলোনিতে ঘরে পাহাড়ধসে তাহমিনা বেগম (২৫) ও সূর্য্য মল্লিক (৩) নামে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তাছাড়া নানিয়ারচরে পাহাড়ি ঢলে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়াও ৯ জুলাই লংগদুতে পাহাড়ি ঢলে মো. রুবেল (২৭) নামে এক বোটচালক এবং ১০ জুলাই বরকলের ভুষণছড়া ইউনিয়নের অজ্যেংছড়ি এলাকায় বিজুরাম চাকমা (৬৭) নামে এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। বর্তমানে পাহাড়ধস সহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন বন্যার আতঙ্কে ভুগছেন।
গতকাল সোমবারের এক প্রতিবেদনে জেলা প্রশাসক (রুটিন দায়িত্ব) এসএম শফি কামাল জানান, ৬ জুলাই হতে অতি বর্ষণের কারণে ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যায় রাঙামাটিতে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। তবে পরিস্থিতি বর্তমানে উন্নতির দিকে। জেলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ২৮ হাজার ৪৫২ জন। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে জেলার কাপ্তাই, নানিয়ারচর, কাউখালী, বাঘাইছড়ি, রাজস্থলীসহ কয়েক উপজেলায় আমন বীজতলা, মৌসুমী শাক-সবজি, ফলফলাদি ও জুম ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি, নানিয়ারচরসহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। জেলায় মোট দুই শতাধিক আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আশ্রিতরা নিজ বাড়িঘরে ফেরা শুরু করেছেন। আশ্রয়কেন্দ্র সহ দুর্গত লোকজনের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। রাঙামাটি শহরে ১১ কেন্দ্রে ২৭০ পরিবারের প্রায় এক হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছেন।
এক সরকারি প্রতিবেদনে রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক পবন কুমার চাকমা জানান, এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে রাঙামাটি জেলার ১০ উপজেলায় ৬৪৫০ হেক্টর আউশ ধান, ৩৮৮ হেক্টর রোপা আমন বীজতলা ও ২৪৭৫ হেক্টর সবজির ফসল ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে ভারি বর্ষণে রাঙামাটির বিভিন্ন সড়কে পাহাড়ধসে ও দেবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে ভারি যান চলাচল করতে পারছে না। রাঙামাটি-বান্দরবান এবং রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এক সপ্তাহেও সচল হতে পারেনি। এসব সড়কে জরুরি মেরামত ও সংস্কার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
অপরদিকে সারা দেশের ন্যায় বন্যা পরিস্থিতি জানতে গতকাল সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মন্ত্রি পরিষদের (ভারপ্রাপ্ত) সচিব শেখ মজিবুর রহমান যুক্ত হয়ে কথা বলেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এসএম শফি কামালের সাথে। সচিব বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। সরকার সর্বদা জনগণের পাশে আছে।
ভিডিও কনফারেন্সে জেলার বিভিন্ন কর্মকর্তা কর্মচারিসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।