ভাঙনের সুরে বিষণ্ণ বইমেলা

20

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত অমর একুশে বইমেলার আজ শেষ দিন। ২১ দিনব্যাপী লেখক-পাঠক-প্রকাশকের মিলনমেলায় বিদায়ের সুর। এবারের মেলায় শুরুর দিকে পাঠক-দর্শনার্থীর উপস্থিতি কম থাকলেও শেষের দিকে উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। পাঠক-দর্শনার্থীর পদচারণায় উৎসবে রূপ নিয়েছিলো মেলা। নানা আয়োজনে ভরপুর ছিল এবারের বইমেলা। দেখতে দেখতে প্রাণের বইমেলায় বেজে উঠল বিদায়ের সুর। পরের বছর আবার নতুন রূপে হাজির হবে এই মেলা।
মেলার প্রতিদিনের অনুষ্ঠানের মধ্যে গতকাল সোমবার ছিল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী উৎসব। বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৈচিত্রপূর্ণ সংস্কৃতি এ দেশের অমূল্য সম্পদ বলে মন্তব্য করেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সমাজ বিজ্ঞানী প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন। গতকাল সোমবার বিকেলে অমর একুশে বইমেলা মঞ্চে নৃ-গোষ্ঠী উৎসবের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক নানা উপাদান এসব জাতিগোষ্ঠীর সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। জাতীয় উন্নয়নের জন্যই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতির বিকাশে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দরকার। দেশের সংখ্যাগুরু মানুষের উচিত সংখ্যায় কম মানুষের সংস্কৃতির বিকাশে এগিয়ে আসা। ভাষা যদি না থাকে, তবে সংস্কৃতি বিলুপ্ত হবে। তাই প্রয়োজন বাংলাদেশের অনেক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতির সঠিক লালন। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র সংস্কৃতির বিকাশে সা¤প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতা বড় অন্তরায়। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও জাতিসত্ত্বা সমূহের অধিবাসীদের মধ্যে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চংগ্যা, ম্রো, লুসাই, বোম, পাংখোয়া, খুমি, চাক, খেয়াং প্রভৃতি উপজাতি রয়েছে। অসা¤প্রদায়িক সংস্কৃতির উপাদান মানুষে মানুষে বিভাজন রুখতে পারে। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর আন্তরিকতা ও উদারতার ধারা অব্যাহত ছিল। এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর শাসনামলেই পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বৈদেশিক বৃত্তি মঞ্জুর করা হয়।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ১৯৯৬ সাল থেকে একটি নীতিমালার আলোকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে ‘বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা (পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত)’ শীর্ষক কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু হয় এবং কর্মস‚চিটি চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের আশা-আকাক্ষা ও প্রত্যাশা পূরণে সর্বদা সচেষ্ট। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম অঙ্গীকার হচ্ছে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১৭টি লক্ষ্য থেকে কোনো জাতিগোষ্ঠীই বাদ পড়বে না।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক ড. আজাদ বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজুরী চৌধুরী, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পুরস্কারপ্রাপ্ত গুণীজন মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা, নাবিক ও প্রবাসী কল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক সুমন বড়ুয়া, বিশিষ্ট কলামিস্ট ড. মাসুম চৌধুরী ও কাউন্সিলর পুলক খাস্তগীর। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বইমেলা কমিটির আহŸায়ক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু। এসময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা কর্মকর্তা উজালা রাণী চাকমা। উৎসবে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের উপজাতীয় নৃত্য ও কণ্ঠ শিল্পীরা অংশগ্রহণ করেন।

অমর একুশে বইমেলার পর্দা নামছে আজ : অমর একুশে বইমেলার পর্দা নামছে আজ মঙ্গলবার। এ উপলক্ষে বিকাল ৪টায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বিশেষ অতিথি থাকবেন একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী সুবর্ণা মুস্তাফা। সভাপতিত্ব করবেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
সমাপনী অনুষ্ঠানে বইমেলা মঞ্চে চিত্রাঙ্কনসহ সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ, অমর একুশে বইমেলা ২০২৩-এ অংশগ্রহণকারী ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রকাশকদের মাঝে সনদ প্রদান এবং সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ স্টলকে পুরস্কার প্রদান করবেন প্রধান অতিথি তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।