ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

26

টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, রিয়াজউদ্দীন বাজার ও টেরিবাজারের অর্ধশতাধিক মার্কেটের বিভিন্ন দোকানে পানি ঢুকছে। এতে চরম দুর্ভোগের পাশাপশি কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। বর্ষা মৌসুম ঘিরে এ ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহব্বান ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, জলাবদ্ধতার কারণে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকারি বাজারে শত শত কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হচ্ছে। বর্ষা মৌসুম ঘিরে ব্যবসায়ীরা এবারো শঙ্কিত। কারণ সিডিএ’র তত্ত্বাবধানে এবং সেনাবাহিনীর অধীনে বাস্তবায়নাধীন নগরীর পাঁচটি খালের মুখে স্লুইস গেট নির্মাণের কাজ এখনো শেষ হয়নি। যার কারণে পাঁচটি খালই এখন মূলত ময়লা-আবর্জনার স্ত‚পে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। খালের মুখগুলো কখন উন্মুক্ত করা হবে তা নিয়ে নেই কারো মাথাব্যাথা। ফলে এবারও ব্যবসায়ীদের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাই দ্রুত সময়ে কাজ শেষ করে খালের মুখের বাঁধ খুলে দেওয়ার কথা জানান তারা।
জানা যায়, রবিবার সকাল থেকে মাঝারি মাত্রায় বৃষ্টি শুরু হয়ে ছিল। সকাল ৯টার দিকে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। এতে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি উঠে যায়। ভারী বৃষ্টিতে অনেক এলাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এসময় ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তর পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের পুরো এলাকা ও চাক্তাইয়ের কিছু কিছু এলাকায় পানি উঠে। পানিতে গোডাউনে রাখা অনেক মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, রবিবারের বৃষ্টিতে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে প্রায় ১০ কোটি টাকার মালামালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আগামীতে বৃষ্টিপাত বেশি হলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। বর্ষা আসার আগে এ ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা জানান তারা।
একইভাবে সকালে ভারী বৃষ্টিতে রিয়াজউদ্দীন বাজার ও টেরিবাজারের ৩০টি মার্কেটের দুই শতাধিক দোকানে পানি উঠে। এতে দুর্ভোগের পাশাপশি ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে বৃষ্টিপাতে বহদ্দারহাট এলাকা হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে যায়। এসময় এই এলাকার পাঁচতলা স্বজন সুপার মার্কেট ও হক সুপার মার্কেটের নিচ তলার প্রায় শতাধিক দোকানে পানি ঢুকে ক্ষয়ক্ষতি হয়। এছাড়া বৃষ্টিতে নগরীর মুরাদপুর, দুই নাম্বার গেইট, আগ্রাবাদ, হালিশহর, বাকলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার নিচ তলার দোকানে পানি ঢুকে ক্ষতি হয়।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি বলেন, বৃষ্টির কারণে খাতুনগঞ্জ পুরো এলাকায় পানি উঠছে। আর চাক্তাই এলাকার কিছু কিছু নিচু জায়গায় পানি উঠেছে। এতে ব্যবসায়ীদের প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, এখনো ভারী বর্ষণ শুরু হয়নি। এর আগে চাক্তাই খালের মুখে স্লুইস গেটের নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করে খালের মুখের বাঁধ অপসারণ করার ব্যবস্থা করা হোক। এতে বর্ষাকালীন সময়ে শত শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবেন ব্যবসায়ীরা।
আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, বৃষ্টিতে সকাল থেকে বিভিন্ন মার্কেটে পানি উঠে। গোডাউনে রাখা অনেক মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। দুই মাস আগে থেকে ভারী বর্ষণে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে এমন আশংকার কথা বলে আসছি। আর যেকোন সময় বর্ষণে এসব এলাকা তলিয়ে যেতে পারে। তাই দ্রæত সময়ের মধ্যে চাক্তাই খালের মুখের বাঁধ অপসারণ করে দেওয়া হোক।
টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান বলেন, সকালে ব্যবসায়ীরা দোকান খোলার আগে দেখতে পান গলির মুখ ডুবে দোকানে পানি ঢুকেছে। জনতা বাই লেইন নালা পরিষ্কার না করায় টেরিবাজারের জনতা মার্কেট, ছমদিয়া মার্কেট, শাহবাগ মার্কেট, খাজা মার্কেট, শাহ আমানত মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, বদরপুকুর পাড়, মক্কা প্লাজা, মা ম্যানশন, কবির মার্কেটের শতাধিক দোকানে পানি ঢুকেছে। এমনিতে করোনাকালীন লকডাউনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। আবার বর্ষার পানিতে এভাবে ক্ষতির দায় সংশ্লিষ্টরা এড়িয়ে যেতে পারেন না। এবারের বর্ষায় পানির ক্ষয়ক্ষতি থেকে মুক্তি চান ব্যবসায়ীরা।
তামাকুমন্ডি লেইন বণিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, বৃষ্টির কারণে তিনপুলের মাথা থেকে আমতল পর্যন্ত হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায়। এতে গোলাম রসূল মার্কেট, মোহাম্মদীয়া প্লাজা, করিম সুপার মার্কেট, মিউনিসিপ্যাল মার্কেটসহ ১৫ থেকে ২০ মার্কেটে পানি ঢুকে। এ কারণে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সঠিক সময়ে নালাগুলো পরিষ্কার করা হলে ব্যবসায়ীদের এমন ক্ষতি হতো না।
বহদ্দারহাট হক সুপার মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক বলেন, বৃষ্টির কারণে সকাল সাড়ে ১১টায় মার্কেটের ভিতরে ৩ ফুট পানি উঠেছে। এতে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই এলাকার আশপাশের নালা পরিষ্কার নয় এবং নালার মুখে বাঁধ দেওয়ার কারণে পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নালার পানি যাচ্ছে রাস্তার উপর দিয়ে। নালার মুখের বাঁধ অপসারণের আহŸান জানান তিনি।