বিস্ফোরণে আহতদের রক্ত দিতে অভাবনীয় সাড়া

8

নিজস্ব প্রতিবেদক

শীতাকুন্ডে অগ্নিকান্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার মুহুর্তেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবী মানুষরা এগিয়ে আসতে শুরু করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, গণমাধ্যম ও ব্যক্তি পর্যায়ে ‘অগ্নিদগ্ধদের রক্তের প্রয়োজন’- এমন সংবাদ পেয়ে রক্ত দিতে ছুটে আসেন অসংখ্য মানুষ। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ রক্ত দিতে জমায়েত হয় চমেকের ব্লাড ব্যাংকে। বিভিন্ন রক্তদাতা সংগঠন-প্রতিষ্ঠানও এই তালিকায় যুক্ত হয়। রাত থেকে রক্ত দিতে ইচ্ছুক মানুষদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হলেও তারা পরিস্থিতি বিবেচনায় শেষ মুহুর্তে হলেও রক্ত দিয়েছেন। যারা রক্ত দিতে পারেননি তাদের মোবাইল নম্বর রেখে ফিরিয়ে দিতেও হয়েছে। তবে প্রতিমূহুর্তে রক্তের প্রয়োজন হওয়ায় রক্তদাতাদের অধিকাংশই হাসপাতাল এলাকা ছেড়ে যাননি। রাতভর সেখানে অপেক্ষা করে রক্তের প্রয়োজন পড়লেই ফোন পেয়ে কিংবা রক্তদাতার সন্ধানে চিৎকার শুনে রক্ত দিতে দেখা গেছে অগণিত মানুষকে। বিস্ফোরণে আহতদের রক্ত দিতে এমন অবারিত সাড়ায় সকল মহল থেকে চট্টগ্রামের মানুষের প্রশংসা করা হচ্ছে।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও অগ্নিদগ্ধদের প্রয়োজনীয় রক্তের যোগান দিতে ব্লাড ব্যাংকের সামনে ভিড় করেন। তবে গতকাল রবিবার দুপুর পর্যন্ত ব্লাড ব্যাংকে প্রয়োজননের তুলনায় অতিরিক্ত রক্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হলেও নেগেটিভ গ্রুপের রক্তদাতাদের রক্ত নেয়া অব্যাহত রাখা হয়। কারণ আহতের অধিকাংশেরই রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ।
‘অগ্নিদগ্ধ আহতদের রক্ত প্রয়োজন, এগিয়ে আসুন’- সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন তথ্য দেখে রাতেই চমেকে ছুটে আসেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রক্ত দিয়ে অন্যদের জীবন বাঁচাতে শত শত শিক্ষার্থী ভিড় করে ব্লাড ব্যাংকের সামনে। বাসে আবার কেউ এসেছেন ট্রাকে করেও। রাতে যানবাহনের সংকট থাকায় যে যেভাবে সম্ভব হয়েছে, সেভাবে মানবতার ডাকে সাড়া দিতে এগিয়ে এসেছেন ব্লাড ব্যাংকে।
আহত অগ্নিদগ্ধদের যখন একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামানো হচ্ছে তখন স্বেচ্ছাসেবীরা বাড়িয়ে দেন সহযোগিতার হাত। রোগী বাড়ার সাথে সাথে রক্তের প্রয়োজনীয়তাও বেড়ে যায়। প্রতিটি মুহুর্তের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার হতে থাকে। এগিয়ে আসতে থাকে মানবিক মানুষগুলো। রক্ত দিতে এগিয়ে আসেন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, ছাত্রদল ও যুবদলের অনেক নেতা-কর্মীরাও।
রক্ত দিতে আসা চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের আহবায়ক সাইফুল আলম বলেন, রাতে ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মী রক্ত দিয়েছেন। সকাল থেকে আমাদের কয়েকশ নেতাকর্মী রক্ত দিয়েছে। তবে দুপুরের পর থেকে যারা রক্ত দিতে এসেছেন তাদের যোগাযোগের নম্বর রেখে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। শুধু নেগেটিভ গ্রুপের রক্তদাতাদের রক্ত নিচ্ছে। তাই ছাত্রদলের পক্ষ থেকে একটি সেল গঠন করে রক্তদাতাদের তথ্য সংগ্রহ করে রাখা হচ্ছে। অগ্নিদগ্ধদের রক্তের প্রয়োজন হলে ০১৭১৫৭২৫৭০১ অথবা ০১৭৮৩৩৩৩৩৪৮ নম্বরে যোগাযোগ করলে রক্তের সংস্থান আমরা করে দিব।
দূর-দূরান্ত থেকেও রক্ত দিতে ছুটে এসেছেন অনেক মানবিক মানুষ। নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের প্রয়োজনীয়তা বেশি দেখে লোহাগাড়া থেকে ভোরে চমেকে ছুটে আসেন নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, রক্তের অভাবে একজন মানুষের মৃত্যু হবে সেটা মেনি নিতে পারি না। বিস্ফোরণের খবর রাতেই শুনেছি, ভোরে ছুটে এসেছি। রক্ত দিয়ে অগ্নিদগ্ধ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। দুঃসময়ে মানুষের পাশে থাকতে পারাটাই বড় পাওয়া।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাতেই শতাধিক শিক্ষার্থী রক্ত দিতে ছুটে আসেন। চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি আহতদের সাধ্যমত সহযোগিতা করার। শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রক্ত দিতে এগিয়ে আসেন।