বিএনপির অনীহা, মন্তব্য নেই আওয়ামী লীগের

11

ঢাকা প্রতিনিধি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ভোট হবে কাগজের ব্যালট পেপার ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে-সোমবার নির্বাচন কমিশনের এমন ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর নেতারা বলেছেন, ইসির নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তাদের মূল লক্ষ্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার। নির্বাচন যে পদ্ধতিতেই হোক, এ সরকারের অধীনে তারা নির্বাচনে যাবেন না। তারা আরও বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালট বাক্স থাকবে খুশির কথা; কিন্তু ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা যেন সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারেন, সেই পরিবেশ সৃষ্টির জন্যই প্রয়োজন তত্ত¡াবধায়ক সরকার।
অপরদিকে জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনেই ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহারের দাবি থাকলেও ইসির নতুন সিদ্ধান্তে আপত্তি জানাচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা সোমবার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন এবং স্বাধীনভাবেই তারা যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। ফলে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা কোনো মন্তব্য করবেন না। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের ইভিএম থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা। সোমবার রাজধানীর লেডিস ক্লাবে রাজনীতিবিদদের সৌজন্যে ইফতার মাহফিলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচন কমিশন বলেছে, ইভিএম নয়, জাতীয় নির্বাচন হবে ব্যালটে। এ বিষয়ে আমাদের এতটুকুও আগ্রহ নেই। নির্বাচনের সময় কোন সরকার থাকবে, সেটি হলো জাতীয় সংকট। এটাই প্রধান সংকট। আমরা অনেক রাজনৈতিক দল একমত হয়েছি যে, আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যাব না। সংসদ বিলুপ্ত করে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। ওই সরকার ও ইসির অধীনে নির্বাচন হবে। এর বাইরে কিছু গ্রহণযোগ্য হবে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই দেশের গণতান্ত্রীকামী মানুষ, সংগঠন, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকরা হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। মিথ্যা মামলা দিয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধা দেওয়া হচ্ছে। সারা দেশে আজ শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, দেশের সবাই প্রথম থেকে ইভিএমের কারচুপির মেশিন সম্পর্কে আপত্তি জানিয়ে আসছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনাররা তাদের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফল ঘটিয়েছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে। তারা পুনরায় ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য অনেক ধরনের ষড়যন্ত্র করবে। আমরা যারা বিরোধী দলে, তারা এ বিষয়ে সজাগ আছি।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বেশকিছু দাবি করেছি। এর মধ্যে একটি হলো ব্যালটে নির্বাচন। আরেকটি হলো নিরপেক্ষ তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। এখন নির্বাচন কমিশন ব্যালট বাক্সে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, একটা অবাস্তব পরিকল্পনা নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও সরকার এগোনোর চেষ্টা করছে। ইভিএম ব্যবস্থা বাতিল করা তাদের সেই ভুলটা স্পষ্ট করে দিল। আমরা এ সম্পর্কে আগে থেকেই বলে আসছিলাম। আমাদের কথাই সঠিক প্রমাণিত হয়েছে।
আ. লীগ ও শরিকদের প্রতিক্রিয়া
জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনেই কাগজের ব্যালেটে ভোটগ্রহণে ইসির নতুন সিদ্ধান্তে আপত্তি না জানালেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দল হিসাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আধুনিক ও যুগোপযোগী প্রযুক্তিনির্ভর পদ্ধতি ইভিএম তাদের দাবি ছিল। তারা এ দাবি থেকে সরে গেছে, সেটা এখনো বলা যাবে না। তবে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন এবং স্বাধীনভাবেই তারা যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। ফলে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা কোনো মন্তব্য করবেন না। তবে বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরামে আলাপ-আলোচনা শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্তের কথা জানাবে আওয়ামী লীগ।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক তথ্য ও স¤প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা দেশকে ডিজিটাল করতে পেরেছি। বহু নাগরিক সেবা ও সুবিধা এখন ডিজিটাল। তবে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। কী পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের আছে। নির্বাচন কমিশনের নতুন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আমাদের দল দলীয়ভাবে আলাপ-আলোচনা করে জানাবে। তিনি আরও বলেন, আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ইভিএম কেনা আর মেরামতের জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে যে বাজেট চাওয়া হয়েছে, সেটি এক বিলিয়ন ডলারের বেশি। আজকের পরিস্থিতিতে এই এক বিলিয়ন ডলার খরচ করার যৌক্তিকতা আছে কি না, তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। তারা যে সিদ্ধান্তই নিক না কেন, সে ব্যাপারে আমাদের করার কিছুই নেই। কারণ স্বাধীনভাবে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তাদের রয়েছে।
আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, রাজনৈতিক দল হিসাবে ইভিএম ব্যবহারের মাধ্যমে নির্বাচন আওয়ামী লীগের দাবি ছিল। কারণ, আধুনিক ও যুগোপযোগী প্রযুক্তিগত পদ্ধতি হলো ইভিএমে ভোট। প্রযুক্তির সঙ্গে, যুগের সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। এ কারণেই আমাদের এ দাবি ছিল। আমরা আমাদের দাবি থেকে যে সরে এসেছি, সেটাও নয়। দলীয় ফোরামে আলোচনার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ইসির ইভিএম থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এটা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছিল। আমরা বলেছি, জনগণের আস্থা অর্জন না করে ইভিএম প্রদ্ধতিতে যাওয়া উচিত নয়। এখন যে কারণেই হোক তারা (নির্বাচন কমিশন) ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে এসেছে। আমরা এটাকে স্বাগত জানাই।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, ইভিএমে নির্বাচন করতে হলে ৩০০ আসনেই করতে হবে। কিছু আসনে ইভিএম আর কিছু আসনে ব্যালটে ভোট করলে দুই ধরনের নির্বাচনি ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তখন সুষ্ঠু ভোট নিয়ে প্রশ্ন থেকে যেতে পারে। তবে নির্বাচন কমিশন ৩০০ আসনেই ব্যালটে ভোট করতে চাওয়ায় সে আশঙ্কা আর থাকলো না। আমরা ইসির নতুন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।