বারইপাড়া খালখনন প্রকল্প ঝুলে আছে ৮ বছর

35

খননযন্ত্রের (এস্কেভেটর) চালকের আসনে বসে নতুন খাল খননের উদ্বোধন করেছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তা আজ থেকে প্রায় দেড় বছর আগের কথা।
নগরীর চাক্তাই খালের বহদ্দারহাটের বারইপাড়া অংশ থেকে শুরু হওয়া এ খাল বলিরহাট হয়ে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে মিশে যাওয়ার কথা। সাবেক মেয়র সেই যে মাটি তুলে খননকাজের উদ্বোধন করেছিলেন সেটাই শেষ। আর কারও হাত পড়েনি এ খালে। এ কারণে টানা বৃষ্টিতে মাটির স্তূপ হয়ে থাকা এ খাল গতকালও স্থানীয়দের যন্ত্রণার কারণ হল। ২০১৪ সালের জুনে ‘বহদ্দারহাট বারইপাড়া হতে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন খাল খনন’ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়। ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকায় বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্পের বর্তমানে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৭৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল; দীর্ঘ ৮ বছরেও খাল খনন করতে পারেনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। প্রথম সংশোধনীতেও অবাস্তবায়নযোগ্য হওয়ায় দ্বিতীয় দফা সংশোধনীতে যাচ্ছে প্রকল্পটি। আজ সোমবার প্রকল্পটি পরিকল্পনায় মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় পর্যালোচনা করা হবে। সংশোধনীর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উঠবে প্রকল্পটি।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরহাদুল আলম পূর্বদেশকে জানান, আমি মাত্রই প্রকল্পটির পরিচালকের দায়িত্ব নিয়েছি। ভূমি অধিগ্রহণের পাঁচটি ‘এলএ’ মামলার তিনটি নিষ্পত্তির পথে। বাকি দুইটি নিয়ে আগামী সপ্তাহে জেলা প্রশাসনের সাথে মিটিং রয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণে গতি এসেছে মন্তব্য করেন তিনি। এ ছাড়া প্রকল্পটি দ্বিতীয় সংশোধনীর জন্য একনেক সভায় উঠবে। এর আগে সোমবার (আজ) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় প্রকল্পটির সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করা হবে। এমনটা জানান প্রকল্পটির পরিচালক ফরহাদুল আলম।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ড্রেনেজ মহাপরিকল্পনায় তিনটি নতুন খাল খননের সুপারিশ করেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। ২০১০ সালে নতুন একটি খাল খননের প্রকল্প গ্রহণ করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। ২০১৪ সালে ২৪ জুন ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকায় নগরীর বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদীয় সংযোগ খালের প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। তবে এ সময়ের মধ্যে ব্যয় তিনগুণ বেড়ে হয়েছে ১২৫৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। তিনদফা মেয়াদ বাড়ানোর পরও দ্বিতীয় বারের সংশোধনীতে ১১৮ কোটি ৭০ লাখ ব্যয় বাড়িয়ে প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন শতভাগ জিওবি (সরকারি অর্থ) অর্থায়নে প্রকল্পটির সংশোধনী চাইলেও ৯৫ ভাগ জিওবি অর্থায়নের সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এসবের চূড়ান্ত ফয়সালা হবে প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব একনেক সভায় উঠলে।
এদিকে গত বছরের ২৮ জানুয়ারি নগরীর ওয়াইজ পাড়া এলাকায় স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছিল প্রকল্পটির। এর আগে গত বছরের নভেম্বর মাসে ৬ জন ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়া এ ঠিকাদার নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে অনেকে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সিটি করপোরেশন মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রেরণ করে। তারমধ্যে বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্পের অগ্রগতি দেখানো হয় ৭৩ শতাংশ। অথচ উদ্বোধনের পর থেকে খাল খননের কোনো ভৌত অগ্রগতি হয়নি বলে জানা গেছে। অনুমোদিত ভ‚মি এলাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নে ১৪টি অংশে ভাগ করে গত বছর দরপত্র আহব্বান করে চসিক। এর মধ্যে ৬টি অংশে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়। অথচ কেন্দ্রীয় ভূমি অধিগ্রহণ কমিটি অনুমোদন দিলেও তা অধিগ্রহণ করে সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দেয়নি জেলা প্রশাসন। এমনকি ভ‚মি মালিকরা ক্ষতিপূরণও পান নি। তাই অধিগ্রহণ ছাড়াই ঠিকাদার নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।