বাবার পেনশনের ৩০ লাখ টাকা নিয়ে ছেলে-মেয়েদের টানাটানি

45

কর্ণফুলী প্রতিনিধি

বাবার পেনশনের ৩০ লাখ টাকা নিয়ে গেছে মেয়ে। এরই মাঝে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে গত শনিবার বিকালে মারা যান পদ্মা অয়েলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনির আহমদ (৬৫)। তাঁর মৃত্যুর পর যথা নিয়মে লাশ দফনের বদলে ফ্রিজিং গাড়িতে রেখে দেয়া হয়েছে বাড়ির উঠানে। এভাবেই কেটে গেছে দুইদিন।
মৃত্যুবরণ করা মনির আহমদের ছেলে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের দাবি, নগরীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় ক্যান্সার আক্রান্ত বাবাকে থেরাপি দেয়ার কথা বলে আনোয়ারার চৌমুহনীস্থ একটি ব্যাংকে নিয়ে যায় তার বোন বিবি আক্তার। সেখান থেকে চিকিৎসার খরচের নামে ৩০ লাখ টাকা তুলে নেয়া হয়। বিষয়টি জানতে পারি আমরা।এরই মাঝে গত শনিবার বাবার মৃত্যু হয়। কিন্তু আমাদের বোন বাবার পেনশনের সেই ৩০ লাখ টাকা নিয়ে গেছেন, বাবার মৃত্যুর খবর পেয়েও এখনও আসেনি।
স্থানীয়রা জানান, লাশ দাফনের বদলে টাকার বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ছেলেরা লাশ দাফন করবেন না বলে জানাচ্ছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কেরানির বাড়িতে। গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় সবশেষ খবরে জানা যায়, মৃতের লাশ ফ্রিজিং গাড়িতে বাড়ির উঠানেই পড়ে রয়েছে। সমস্যার সমাধানে স্থানীয় লোকজন ব্যর্থ হলে কর্ণফুলী থানার পুলিশও সেখানে যায়। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।
আজ সোমবার মৃতের আরেক ছেলে বিদেশ থেকে বাড়িতে ফেরার কথা রয়েছে। তিনি বাড়ি ফেরার পর এবং ব্যাংক থেকে মৃতের মেয়ে বাবাকে নিয়ে টাকা তুলেছিল কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার পর লাশ দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ও কর্ণফুলী থানার ওসি দুলাল মাহমুদ।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন জানান, মৃত মনির আহমদ পদ্মা অয়েল কোম্পানিতে চাকরি করতেন। ২০১৭ সালে অবসরকালে তিনি পেনশনের প্রায় ৫০ লাখ টাকা পান। এরমধ্যেই তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে তাকে নগরীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে হাসপাতালে দেখভালের জন্য সাথে ছিলেন মৃতের স্ত্রী দিলুয়ারা বেগম। সেখানে চিকিসাধীন অবস্থায় মাকে হাসপাতালে রেখে গত ১৩ ডিসেম্বর বাইরে থেরাপি দেয়ার কথা বলে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালের বাইরে নিয়ে যায় মৃত মনির আহমদের মেয়ে ও নাতি। পরে শোনা যায় মেয়ে ও নাতি থেরাপি নয়, টাকা তুলে নেয়ার জন্য তাকে নিয়ে যান ব্যাংকে। এরই মাঝে মনির আহমদের মৃত্যু হলে তার রেখে যাওয়া টাকার ভাগাভাগি নিয়ে দ্ব›দ্ব শুরু হয় ভাই-বোনের মধ্যে। এ বিষয়ে সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত লাশ দাফন করতে দিচ্ছেন না মনির আহমদের ছেলেরা।
ইউপি সদস্য আরো জানান, টাকা তুলে নেয়ার বিষয়টি মেয়ে স্বীকার করেনি। পরে সিদ্ধান্ত হয় সোমবার ব্যাংকে গিয়ে টাকা তোলার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া এবং সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সিদ্ধান্ত নেয়ার। এটি নিশ্চিত হলেই মৃত মনির সাহেবকে দাফনের সিদ্ধান্ত হবে। সেই সাথে প্রবাসে থাকা মৃতের আরেক সন্তানও দেশে আসার কথা রয়েছে। সে পর্যন্ত মৃতের লাশ বাড়ির উঠানেই ফ্রিজিং করা থাকবে।
মৃতের সন্তান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর জানান, ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেয়ার বিষয়টি আমাদের বোন স্বীকার করছেন না। ওই টাকার উপর সকলের হক রয়েছে। বোন স্বীকার না করায় কাল (সোমবার) সকালে ব্যাংকে গিয়ে নিশ্চিত হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া বেলা ১২ টার দিকে তার ভাই মোহাম্মদ আলমগীর দেশে আসার কথা রয়েছে। সে এলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
তবে অভিযুক্ত বিবি আক্তার জানান, আমার নামে কোনো একাউন্ট নেই। আমার একাউন্টে বাবার কোনো টাকা স্থানান্তর হয়নি বা আমি টাকা নেইনি।
কর্ণফুলী থানার ওসি দুলাল মাহমুদ জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় প্রবাসে থাকা আরেক ছেলে সোমবার দেশে এলে মৃতের লাশ দাফন করা হবে।