বাঙালি পুলিশ সদস্যরা তালাবদ্ধ অস্ত্রাগার ভেঙে হাতে তুলে নেন অস্ত্র

6

পূর্বদেশ ডেস্ক

ভেস্তে যায় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমঝোতা বৈঠক। বাঙালি জাতি নিশ্চিত হয়, আলোচনা নয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই ছিনিয়ে আনতে হবে মহার্ঘ স্বাধীনতা। একাত্তরের এ দিন বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠেও উচ্চারিত হয়-আমরা আর মুখ বুঝে সহ্য করব না। এবার আঘাত এলে হানা হবে পাল্টা আঘাত। সে লক্ষ্যে প্রতিটি বাঙালিকে প্রস্তুত হওয়ার আহবান জানান তিনি। একাত্তরের এ দিনটিও ছিল আন্দোলনমুখর, উত্তাল। দেশের সবকিছু চলছে বঙ্গবন্ধুর অঙ্গুলি হেলনে। কিন্তু বাঙালি জাতি সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত বুঝতে পারেনি আর কয়েক ঘণ্টা পর নেমে আসবে অমানিষার অন্ধকার। বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পরই গণহত্যার হুকুম দিয়ে বাংলাদেশের মাটি ত্যাগ করে পাকিস্তানে ফিরে যান প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। বঙ্গবন্ধুও কয়েকদফা বৈঠক করেন দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে। আর রাতেই বাঙালি জাতির স্বাধীনতার স্বপ্ন আন্দোলনকে চিরদিনের মতো স্তব্ধ করে দিতে পাক হানাদাররা চালায় নির্মম হত্যাযজ্ঞ। সেই রাতের আক্রমণের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না বাঙালিরা। একাত্তরের অগ্নিঝরা এ দিনে বাঙালি জাতি তথা বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছিল ইতিহাসের জঘন্যতম নৃশংসতা। গণহত্যার নীলনক্সা অপারেশন সার্চলাইট নামে পাকিস্তানী দানবরা মেতে ওঠে নির্বিচারে স্বাধীনতাকামী বাঙালি নিধনযজ্ঞে। এ রাতেই বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্মমুহূর্তটি প্রত্যক্ষ করেছিল বিশ্ববাসী। ঢাকাসহ দেশের অনেক স্থানে মাত্র এক রাতেই হানাদাররা হত্যা করেছিল হাজার হাজার ঘুমন্ত বাঙালিকে। কিন্তু ওই ভয়ঙ্কর রাতে বসে থাকেনি বীর বাঙালিরা। মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষী হয়ে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রথম সম্মুখসমরে পুলিশ বাহিনীর অস্ত্রগুলো গর্জে উঠেছিল আজ থেকে ৫২ বছর আগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যাযজ্ঞের পর পাক হানাদাররা আঘাত হানে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে। ব্যারাক থেকে বাঙালি পুলিশ সদস্যরা তালাবদ্ধ অস্ত্রাগার ভেঙ্গে হাতে তুলে নেন অস্ত্র ও গুলি। গড়ে তুলে সশস্ত্র প্রতিরোধ। দু’পক্ষের মধ্যে চলে প্রচন্ড গোলাগুলি। কিন্তু পাক বাহিনীর অত্যাধুনিক মেশিনগান, মর্টার ও হেলিকপ্টার গানশিপের প্রচন্ড আক্রমণে পুলিশ বাহিনী বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেনি।