বাঁশখালীতে এসিল্যান্ড আতঙ্কে ভূমি দালালেরা

48

নিজস্ব প্রতিবেদক

দলিলুর রহমানের বয়স ৭০। ভ‚মি অফিসে স্ত্রীর নামে একটি জায়গার নামজারি করতে গিয়ে সিদ্দিক নামে এক দালালের খপ্পরে পড়েন। পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে সেই দালালের সাথে নামজারি করার চুক্তি করেন তিনি। কিন্তু দালাল নির্ধারিত সময়ে নামজারি করতে না পেরে কালক্ষেপণ করতে থাকে। ভোগান্তির শিকার ব্যক্তি সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) অফিসে গিয়ে নালিশ দিলে কৌশলে সিদ্দিককে ধরা হয়। গত ৮ সেপ্টেম্বর সিদ্দিকের কাছ থেকে চুক্তির পাঁচ হাজার টাকা উদ্ধার করে সিদ্দিককে ভ‚মি অফিসে ঢুকতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এভাবেই গত তিনমাসে ১৯ জন দালালকে দন্ড দেয়ার পাশাপাশি মুচলেকা নিয়েছেন সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) খোন্দকার মো. মাহমুদুল হাসান।
সর্বশেষ গতকাল ভ‚মি অফিসে গিয়ে দালালির উদ্দেশ্যে সরকারি নথি ঘাটাঘাটি করার সময় তিনজনকে হাতেনাতে ধরেন এসিল্যান্ড। তারা হলেন পূর্ব চাম্বল ইউনিয়নের নুরুল হোসেনের ছেলে মো. ইমরান, সরল ইউনিয়নের একরাম আলীর ছেলে আবুল বশর, পশ্চিম চাম্বলের মরহুম মোনাফ আলীর ছেলে আমির উদ্দিন। তাদেরকে দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ১৮৮ ধারায় জরিমানা করা হয় ও মুচলেকা নিয়ে সতর্ক করা হয়।বাঁশখালীর সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খোন্দকার মো. মাহমুদুল হাসান পূর্বদেশকে বলেন, ‘জনগণের দুর্ভোগ কমাতেই সরকার আমাদেরকে পদায়ন করেছে। কিন্তু আমরা দেখলাম দুর্ভোগ হওয়ার পেছনের অন্যতম কারণই হচ্ছে দালাল। যে কারণে আমি বাঁশখালী ভ‚মি অফিসে যোগদানের পরপরই দালালমুক্ত করতে কাজ শুরু করি। সেবা নিতে আসা অনেকেই হয়রানির অভিযোগ করেন। আমরা তাদের কথা শুনে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমি চাই কারো অভিযোগ থাকলে সরাসরি আমার সাথে কথা বলুক। আমি তাদের সমস্যা সমাধান করার পাশাপাশি ভোগান্তির কারণ হয়ে ওঠা দালালদের দন্ড দিচ্ছি। ভূমি অফিসে নিষিদ্ধ করে মুচলেকা নিচ্ছি। জনস্বার্থে ও হয়রানিমুক্ত ভূমি সেবা নিশ্চিতকরণে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে’।
ভূমি অফিস সূত্র জানায়, গত তিনমাসে কালীপুর ইউনিয়নের শাহ আলমের ছেলে মো. ইমরান, গন্ডামারার মৃত মোবারক আলীর ছেলে মো. আমির উদ্দিন, উত্তর জলদীর মো. সাহেদের ছেলে রিদুয়ান, শীলক‚পের আবুল হাসানের ছেলে মো. গিয়াস উদ্দিন, দক্ষিণ জলদীর রনজিত সুশীলের ছেলে শুভ সুশীল, জালিয়াঘাটার মৃত আমির হামজার ছেলে আব্দুল মতলব, কালীপুরের আবদুল্লাহ’র ছেলে হেলাল আহমদ, কোকদন্ডীর ভেট্টা মিয়ার ছেলে মো. রিপন, গুনাগরীর নুর আলমের ছেলে সেলিম, গুনাগরীর ফজল করিমের ছেলে বশির আহমদ, পূর্ব চাম্বলের নুরুল হাসানের ছেলে ইমরান হোসেন, গুনাগরীর শাহিন পারভেজের ছেলে মহিরুল কাদের জাবেদ, গুনাগরীর সজল গুহের ছেলে প্রণব গুহ, সরলের আব্দুল করিমের ছেলে জমির উদ্দিন, বৈলছড়ির নুরুল ইসলামের ছেলে আজিম উদ্দিন, সরল ইউনিয়নের একরাম আলীর ছেলে আবুল বশর, পশ্চিম চাম্বলের মরহুম মোনাফ আলীর ছেলে আমির উদ্দিন ও সিদ্দিককে জরিমানা ও দন্ড দেয়া হয়।
স্থানীয়রা বলেন, কালীপুর রেজেস্ট্রি অফিসকেন্দ্রিক একটি চক্র ভূমি অফিসে নিয়মিত দালালি করে আসছে। ভূমি অফিসের কয়েকজন কর্মচারীর সাথে সখ্যতা রেখে তারা এ কাজ করতো। তাদের হাতে ভ‚মি অফিসের গুরুত্বপূর্ণ নথিও পৌঁছে যেতো। ইতোমধ্যে এসিল্যান্ডের হাতে আটক হওয়া দালালদের বড় অংশটিই কালীপুর ইউনিয়নের। এছাড়াও সারা বাঁশখালীর বিভিন্ন ইউনিয়নের একটি চক্র ভূমি অফিসে দালালি করে। তবে এই এসিল্যান্ড গত সাড়ে তিনমাস আগে যোগদানের পর থেকে দালাল প্রতিরোধে কাজ করে সুনাম অর্জন করেছেন। দালাল প্রতিরোধ ও সেবা প্রদানে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন তিনি। দালালদের মধ্যে এখন এসিল্যান্ড আতঙ্ক বিরাজ করছে। দালালদের এ চক্রটি দালালিতে সুবিধা করতে না পেরে এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছে। তবে ভ‚মি অফিসের কর্মচারীরা দ্রুত সেবা প্রদানের কথা বলে কয়েকজন ব্যক্তিকে নিজেদের সহযোগি হিসেবে রেখে দালালিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। ভূমি অফিসে কর্মচারীর বেশে থাকা এই বহিরাগতদের বের করে দেয়া হলে ভূমি অফিসের সুনাম বৃদ্ধি পাবে। এই বহিরাগতরা ভূমি অফিসকে ব্যবহার করে প্রচুর টাকা মালিক হয়েছে। গড়েছেন অট্টালিকা- এমন অভিমত ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের।
ভূমি অফিসে সেবা নিতে যাওয়া চাম্বলের শাকের উল্লাহ বলেন, ‘বাঁশখালীর এসিল্যান্ড অনেক ভালো কাজ করছেন। এখন ভূমি অফিসে দালাল চোখে পড়ে না। যে কেউ গিয়ে এসিল্যান্ডের সাথে কথা বলে সেবা পাচ্ছেন। দালাল না ধরে এসিল্যান্ডের কাজে গেলেই সেবা মিলছে। তবে কর্মচারীদের কাজের ক্ষেত্রে আরও বেশি উদারতার পরিচয় দিতে হবে’।