বাঁকখালীর তীরে ২ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

8

কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন। উচ্চ আদালতের নির্দেশে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে নদীর কস্তুরাঘাট অংশে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদপ্তর, বন বিভাগ, বিআইডবিøউটিএ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন দপ্তর।
সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। পাশাপাশি প্যারাবন কেটে দখল করে ঘিরে রাখা টিনের ঘের ও চারপাশের কয়েকশ খুঁটি তুলে ফেলা হয়। এদিকে দুপুর দুইটার দিকে উচ্ছেদ অভিযানের ভিডিওচিত্র ধারণ ও ছবি তুলতে গিয়ে দখলদারদের হামলার শিকার হন কয়েকজন সাংবাদিক। ১০/১২ জনের একটি দল লাঠি হাতে সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে আসেন ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এছাড়া সাংবাদিকদের মারধর ও ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ারও চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে দখলদার আবদুল খালেক সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
হামলার শিকার সাংবাদিকরা বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ভিডিও চিত্র ধারণ ও ছবি তুলতে গেলে দখলদার ও তাদের লোকজন সাংবাদিকদের গালমন্দ শুরু করেন। এ সময় বিডিনিউজ’র জেলা প্রতিনিধি শংকর বড়ুয়া রুমি, আজকের পত্রিকার মাইন উদ্দিন শাহেদ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের তৌফিকুল ইসলাম লিপুসহ কয়েকজন ক্যামেরা পার্সনকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন তারা। এ ঘটনার নেতৃত্ব দেন আবদুল খালেক চেয়ারম্যান ও তার ছেলে। পরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এরপর ফিরে যাওয়ার সময় এক ব্যক্তি পিস্তল হাতে সাংবাদিকদের হুমকি দেন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান বলেন, এখানে একটি নদীবন্দর করার জন্য সরকারের প্রজ্ঞাপন রয়েছে। বিআইডবিøউটিএকে জমি বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য হাইকোর্টের রায় রয়েছে। এর পরিপ্রক্ষিতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়। সম্পূর্ণ দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। এখানে অনেকভাবে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। অনেকেই আইনজীবী এনে উচ্ছেদে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশে এ উচ্ছেদ। সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, বাঁকখালী নদীর তীরে দখলের মহোৎসব চলছে পাঁচ বছর ধরে। নদীর তীরে ছয়শ হেক্টর প্যারাবন নিধন করে একে একে চলছে স্থাপনা নির্মাণের কাজ। শুধু দুই মাসের ব্যবধানে নদীর তীরের শত হেক্টর জমি দখলের পর চলছে স্থাপনা নির্মাণ। খুরুশকুলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে কস্তুরাঘাট পয়েন্টে বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে সেতু। এ সেতুর পাশাপাশি সংযোগ সড়ক তৈরি হওয়ায় সড়কের দুই পাশে প্যারাবন ধ্বংস করে নদী দখলের মহোৎসবে মেতে ওঠেছে প্রভাবশালী চক্র।
পরিবেশবাদীরা বলেন, দেরিতে হলেও বাঁকখালী নদী দখল উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করায় প্রশাসন সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে অভিযানে পুরো জায়গা উদ্ধার করে নদীকে ফিরিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় দখলদারচক্র সুযোগ নেবে এবং অভিযান নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি করবে।