বহিরাগতদের দৌরাত্ম্যে রাতের শাটল ভয়ংকর

18

চবি প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাটল ট্রেনের গায়ে জার্মান শিল্পী লুকাস জিলিঞ্জার গ্রাফিতি আঁকার পর থেকে দেশব্যাপি আলোচনায় আছে এটি। বিচিত্র চিত্রে সাজানো শাটল পেয়ে খুশি চবির শিক্ষার্থীরাও। বাহিরের সৌন্দর্য্য যেমনি উপভোগ্য ভেতরের পরিবেশ ঠিক তেমনি দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের জন্য। দিনদিন বাড়ছে নিরাপত্তাহীনতা।
এছাড়াও বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীর পরিবহনের জন্য নেই পর্যাপ্ত বগির ব্যবস্থাও। বগি যা আছে তাতেও নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা। একের পর এক ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা। চলন্ত ট্রেনে প্রায় সময়ই হামলা, ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া সম্প্রতি ছাত্রীদের উপর যৌন নিপিড়নের ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকবার।
সবর্শেষ গত শুক্রবার রাত পৌনে ১০ টার দিকে শহরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া শাটল ট্রেনে ১০-১২ জনের দ্বারা হামলার শিকার হন অভিজিৎ দাস নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাবেক শিক্ষার্থী। তিনি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন। হামলাকারীদের কয়েকজনকে চিহ্নিত করতে পেরেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তার অভিযোগ মতে হামলাকারীরা হলেন মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ ছাত্র তৌহিদ, একই শিক্ষাবর্ষের স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের ছাত্র আরমান ও পদার্থবিদ্যা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র শতাব্দী। বাকিদের শনাক্ত করতে না পারলেও তারা সকলেই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রæপ সিএফসির কর্মী বলে দাবি ভুক্তভোগী অভিজিৎ দাসের।
ভুক্তভোগী জানান, তার স্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নাম্বার গেইট এলাকার একটি বাসায় থাকেন তারা। গত বুধবার রাতে স্ত্রীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশনে বসেছিলেন অভিজিৎ। এমন সময় অভিযুক্তরা মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। তখনও মদের বোতল তাদের হাতে ছিল। এসময় তার প্রতিবাদ করেন অভিজিৎ ও তার স্ত্রী। এক পর্যায়ে অভিযুক্ত শতাব্দী নামে ছেলেটি এসে ‘ভাই, আজ আমাদের আনন্দের দিন, একটু মজা করতেছি- বলে তাদের পক্ষ থেকে মাফ চেয়ে চলে যান।
এ ঘটনার জেরেই তার উপর হামলা করা হয়েছে বলে দাবি অভিজিতের।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি পূর্বদেশকে বলেন, শুক্রবার সাড়ে নয়টার শাটল ট্রেনটি দশ মিনিট দেরিতে ছাড়ে। আমি ওই ট্রেনে করে শহরে যাচ্ছিলাম। ট্রেন ছাড়ার পর আগের দিনের ঘটনার সাথে জড়িত ১০-১১ জন ছেলে আমার উপর হামলা করে। এসময় তারা লোহার রড ও শিকল দিয়ে আমাকে বেধড়ক মারধর করে। রাতের ট্রেন সাধারণত ফতেয়াবাদ স্টেশনে থামে না। কিন্তু আজকে ট্রেন ওখানে থামে। থামার পর ওরা নেমে যায়। এরপর আমি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছি।
তিনি বলেন, এ ঘটনার পর আজ (শনিবার) আমি লিখিত অভিযোগ দেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সাথে যোগাযোগ করলে হোয়াটসঅ্যাপে তা পাঠাতে বলা হয় আমাকে। আমি ইতোমধ্যে সহকারী প্রক্টর জিয়া স্যারের হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে লিখিত অভিযোগের কপি পাঠিয়েছি। ষোলশহর পুলিশ ফাঁড়িতেও বিষয়টি জানিয়ে রেখেছি। আগামিকাল (আজ) মামলার দিকে আগাব।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও সিএফসি গ্রæপের নেতা সাদাফ খাঁন বলেন, অভিযুক্তরা যদি শাখা ছাত্রলীগের পদধারী কেউ হয় তাহলে প্রমাণ হওয়া সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর যদি পদধারী না হয় তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর এস এ এম জিয়াউল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। প্রক্টরিয়াল বডি এটা নিয়ে কাজ করছে। আমরা ষোলশহর রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়িকেও বিষয়টি জানিয়েছি। আগামিকাল (আজ) ভুক্তভোগীকে আমরা আসতে বলেছি। পাশাপাশি অভিযুক্তদেরও ডাকা হবে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগেও গত ২৮ জুন সকালে শাটল ট্রেনে ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হন এক ছাত্রী। নগরীর বটতলী রেলস্টেশনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বাদী হয়ে রেলওয়ে থানায় মামলা দায়ের করলে বাবুল হোসেন (৪৫) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গত ২৪ এপ্রিল চলন্ত শাটল ট্রেনে মোবাইল ছিনতাইয়ের শিকার হন নন্দিতা দাস নামে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রী। ওইদিন সকাল ৮ টায় বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেন কদমতলী মোড় অতিক্রম করার সময় এ ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকারীর পিছু নিতে ট্রেন থেকে লাফ দিয়ে আহত হন ওই ছাত্রী।
এছাড়াও পাথর নিক্ষেপসহ আরো নানা অপ্রীতিকর ঘটনা কিছুদিন পর পর ঘটতেই থাকে চবির শাটল ট্রেনে। এসব ঘটনার কোনো স্থায়ী সমাধান এখনও দিতে পারেনি প্রশাসন।
সরেজমিনে দেখা যায়, শাটল ট্রেনে পরপর কয়েকজন ছাত্রী হেনস্তা ও একাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটার পর প্রতিটি বগিতে একজন করে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। এর কিছুদিন পরেই পুলিশ সদস্যদের সরিয়ে নেয়া হয়। যার কারণে আবারো নিরাপত্তাহীনতার আতংক তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
এ বিষয়ে জানার জন্য চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) অফিসিয়াল মোবাইল নাম্বারে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।