বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শনের মূল লক্ষ্য ছিল আদর্শ মানবসম্পদ গড়া

9

পূর্বদেশ ডেস্ক

শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিধ্বস্ত অবকাঠামো ও অর্থনীতি নিয়ে, বাঙালি জাতির উন্নতির জন্য আধুনিক শিক্ষা চালু করাই ছিল তখন অন্যতম চ্যালেঞ্জ। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জানতেন, ঘরে ঘরে আধুনিক শিক্ষা পৌঁছে দিতে না পারলে এ স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে। তাই দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আদর্শ মানবসম্পদ গড়ে তোলাই ছিল বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শনের মূল বিষয়। তিনি বিশ্বাস করতেন, শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার এবং ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে সবার জন্যই শিক্ষার সমান সুযোগ থাকা আবশ্যক।
বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন বক্তব্য, নীতি ও কর্মকাÐের মধ্যে শিক্ষা বিষয়ে তার চিন্তাধারা প্রতিফলিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে ড. কুদরাত-ই-খোদাকে প্রধান করে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেন, যার প্রধান কাজ ছিল চলমান শিক্ষাব্যবস্থাকে মূল্যায়ন করা এবং সত্যিকারের সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য যথাযথ শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলন। শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য শুরু থেকেই বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।
১৯৭২ সালের ৩০ মার্চ, চট্টগ্রামে শিক্ষক ও লেখকদের এক সমাবেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, মানুষকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে না পারলে সমাজ থেকে দারিদ্র্য এবং বৈষম্য দূর করা যাবে না। গ্রামীণ মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে প্রত্যেক শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের কিছু দিন করে গ্রামাঞ্চলে কাটানোর পরামর্শ দেন তিনি।
১৯৭৩ সালের ২০ মার্চ, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-এর প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু বলেন, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের দুইশ বছরের ও পাকিস্তানের ২৫ বছরে গড়ে ওঠা শিক্ষাব্যবস্থা শুধু কেরানি তৈরি করেছে, মানুষ তৈরি করেনি। এজন্য তিনি এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর জোর দেন, যার মাধ্যমে আদর্শ নাগরিক গড়ে তোলা যাবে এবং যার মাধ্যমে স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণে সহায়তা করবে।
তিনি বৈদেশিক নির্ভরশীলতার বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক করে দেন এবং এটিকে টেকসই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেন। বিদেশের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের ওপর জোর দেন।
এছাড়া নারীর উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ১৯৭৩ সালের জানুয়ারি মাসে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত নারীদের অবৈতনিক শিক্ষা চালু করার যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ জারি করে স্বায়ত্তশাসন প্রদানের মাধ্যমে, দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীন চিন্তা ও মত প্রকাশের স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধু এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, যার মাধ্যমে মানুষকে সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। একটি যথাযথ শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশের সুষম ও টেকসই আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করাই ছিল বঙ্গবন্ধুর মূল উদ্দেশ্য।