ফের মাথাচাড়া দিয়েছে কিশোর গ্যাংগুলো

43

নগরজুড়ে ‘বড় ভাই’ ‘ছোট ভাই’য়ের দোর্দÐ প্রতাপ। প্রতিটি এলাকা এমনকি অলি-গলিতেও তাদের দাপট। বড় ভাই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা। তার শেল্টারেই ছোট ভাইয়েরা খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসাসহ সবধরনের অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। ছোট ভাইদের বয়স সর্বোচ্চ ১৮। এর বেশি বয়সীর সংখ্যা খুব কম। তারা এলাকায় গ্যাংও সৃষ্টি করেছে। তাদের ভয়ে লোকজন তটস্থ থাকে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে কথা কাটাকাটির জের ধরে মোবারক হোসেন (২০) নামে এক তরুণকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায়ও জড়িত এলাকার ছোট ভাইয়েরা। গ্রেপ্তার করা হয়েছে মো. রুবেল (১৮) ও মো. হৃদয় (১৭) নামে দু’কিশোরকে। তারাও এলাকার এক বড় ভাইয়ের শেল্টারে অপরাধ করে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।
নালাপাড়ায় ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাসকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকাÐে জড়িতদের কয়েকজন ধরাও পড়ে। তাদের স্বীকারোক্তি এবং পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসে এক ‘বড় ভাই’য়ের নির্দেশে ছোট ভাইয়েরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। সে বড় ভাই রাজনৈতিক দলের নেতা। তার শেল্টার আরো বড়। তাই তাকে ছোঁয়াও যায়নি এখনো পর্যন্ত।
চলতি বছরের ১০ মে মুরাদপুরে সহপাঠীকে গালমন্দ করায় ক্ষুব্ধ হয়ে মোস্তাক আহমদ নামে এক ব্যক্তিকে খুন করে কিশোর দল। এ দলের সাতজনকে গ্রেপ্তার করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। তাদের সকলের বয়স ১৮ এর কম। এলাকার বড় ভাই তুহিনের নির্দেশে এ হত্যাকান্ড বলে তারা আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়।
গত বছরের জানুয়ারিতে জামালখানে ছুরিকাঘাতে খুন হয় কলেজিয়েট স্কুলের মেধবি ছাত্র আদনান ইসফার (১৫)। ওই হত্যাকান্ডের পর গ্রেপ্তার হয় আরমান, সাব্বির, মুনতাসির, মহিম ও আবু সাঈদ। তারা সকলে কিশোর। গ্রেপ্তারকৃতরা খুনের কথা স্বীকারও করে। স্বীকারোক্তিতে তারা জানিয়েছিল, আদনান ইসফারকে প্রকাশ্যে মাথায় গুলি করে হত্যা করেছিল সাব্বির নামে এক কিশোর।
এ ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে নগর পুলিশ। ওই সময় পুলিশ কমিশনার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রতিটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘ভাইদের’ গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে। সিএমপি’র ১৬ থানা এলাকায় পুলিশ তালিকা তৈরির কাজে নেমে পড়েছিল। নগরীতে ৫ শতাধিক ছোট ভাইয়ের তালিকাও তৈরি করেছিল। অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ২০ থেকে ৩০ জন কিশোর অপরাধীকে। কিন্তু কয়েকমাস না যেতেই ঝিমিয়ে পড়ে পুলিশের অভিযান। কারণ হিসেবে জানা গেছে, ছোট ভাইয়েরা রাজনৈতিক বড় ভাইয়ের শেল্টারে থাকায় পুলিশের অভিযান বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এসব ছোট ভাইয়েরা রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মসূচিতেও সক্রিয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব ছোট ভাইয়েরা ভয়ংকর সব অপরাধে লিপ্ত। খুন, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, চুরি, জমি দখলসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা তারা করছে না। এমনকি ভাড়াটে খুনি হিসেবেও তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও বড় ভাইয়েরা যা নির্দেশ দেন তা পালন করা তাদের জন্য বাধ্যতামূলক।
জানা যায়, নগরীর ঘাটফরহাদবেগ, স্টেশন রোড, বিআরটিসি মোড়, কদমতলী, চকবাজার, মেডিকেল হোস্টেল, শিল্পকলা একাডেমি, সিআরবি, খুলশি, ফয়েস লেক, ডেবারপার, চান্দগাঁও শমসেরপাড়া, বহদ্দারহাট, নন্দনকানন, বিশ্বকলোনি, ফরিদের পাড়া, আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনি, সিডিএ, ছোটপুল, হালিশহর, বন্দর কলোনি ও পতেঙ্গার এলাকায় তাদের অবস্থান। এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা তাদের বড় ভাই।
কিশোর-তরুণের দল নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে। ওই এলাকায় খুন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ অপকর্ম করে বেড়ায়। তাদের হাতে থাকে অবৈধ অস্ত্র। মাদক ব্যবসায়ও জড়িত তারা। এছাড়া এক স্থান থেকে আরেক স্থানে মাদক বহনও করে তারা। চাঁদাবাজিতেও লিপ্ত এসব কিশোররা। এসব কিশোর গ্যাং মেয়েদের ভ্যানিটি ব্যাগ ও মোবাইল ছিনতাইয়ের অধিকাংশ ঘটনায় জড়িত। নিজ এলাকা ছাড়িয়ে অনেক সময় তারা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে নানা অপরাধ কর্মকাÐ চালিয়ে থাকে।
পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, কিশোর গ্রæপ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ছে তারা। পুলিশও তাদের উপর নজরদারি করছে। যারাই অপরাধে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বড় ভাই-ছোট ভাই নয়, অপরাধী অপরাধীই। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। ইতিমধ্যে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জানা যায়, কিশোর-তরুণদের অপরাধ রোধে র‌্যাব-পুলিশ সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে। তালিকা ধরে অভিযান চালানো হচ্ছে।
কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, এসব কথিত ছোট ভাই-বড় ভাই আমাদের জন্য নতুন এক যন্ত্রণা। বিভিন্ন এলাকায় তাদের অবস্থান। তিনি বলেন, আমরা অনেকের অবস্থান চিহ্নিত করতে পেরেছি। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।