ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ৭.৮১ শতাংশ

9

ডলার সংকটে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপে থাকার মধ্যে ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে রপ্তানি আয় পাঁচ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেলেও তৃতীয় মাস ফেব্রুয়ারিতে এ মাইলফলক ছুঁতে পারেনি; তবে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ। গতকাল রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের সবশেষ তথ্য প্রকাশ করেছে।
এতে দেখা যায়, সদ্য শেষ হওয়া ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি আয় এসেছে ৪৬৩ কোটি ডলারের। ২০২১-২২ অর্থবছরের ফেব্রæয়ারিতে যা ছিল ৪২৯ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবৃদ্ধি হলেও গত মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে আয়। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারিতে ৪৮০ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য ঠিক করেছিল ইপিবি। এ হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কম এসেছে ৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে পশ্চিমা বিশ্বে পোশাকের চাহিদা কমে গেছে এবং দেশে পোশাক তৈরির ক্রয়াদেশ কমে গেছে বলে রপ্তানিকারকরা বারবার বলে আসলেও রপ্তানির ইতিবাচক ধারা বজায় থাকতে দেখা গেছে।
দেশে নতুন করে দামি পোশাক পণ্য তৈরির সক্ষমতা অর্জন হওয়া এবং কাঁচামালের মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে পোশাকের দাম বাড়ায় ডলারের হিসাবে পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধির পথে রয়েছে বলে রপ্তানিকারকদের ব্যাখ্যা।
এদিকে গত ফেব্রæয়ারিতে এর আগের মাস জানুয়ারির চেয়ে ৫০ কোটি ৬৩ লাখ ডলার কম রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। জানুয়ারিতে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫১৩ কোটি ৬২ লাখ ডলার। পঞ্জিকার হিসাবে গত মাস ছিল ২৮ দিনের। এ কারণে আয় এমনিতেই কম হবে।
তবে গড় হিসাব ধরলে জানুয়ারিতে দৈনিক আয় ১৬ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের মত হয়েছিল আর ফেব্রুয়ারিতে তা ছিল ১৬ দশমিক ৫৩ কোটি ডলার। এ হিসাবে সবশেষ দুই মাসের রপ্তানি আয় দেশে আসার গতি প্রায় কাছাকাছিই ছিল। সবশেষ তিন মাসের রপ্তানি আয়ের মধ্যে ডিসেম্বরে ৫৩৬ কোটি ৫২ লাখ ডলার আয় আসে রপ্তানি থেকে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। অপরদিকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি প্রথম আট মাসে মোট তিন হাজার ৭০৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলানায় ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। আগের আট মাসে রপ্তানি থেকে এসেছিল তিন হাজার ৩৮৪ কোটি ৩৪ লাখ ডলার।
২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রথমবারের মত সেবা ছাড়া শুধু পণ্য রপ্তানি থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয় আসে; মোট রপ্তানি হয় পাঁচ হাজার ২০৮ কোটি ২৬ লাখ ডলারের পণ্য যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি আট মাসে বরাবরের মত রপ্তানি আয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে তৈরি পোশাক খাত। প্রধান এ খাতের নিট ও উভেন পণ্য মিলিয়ে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি রয়েছে। আলোচিত আট মাসে মোট তিন হাজার ১৩৬ কোটি ডলারের পোশাক পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
ফেব্রুয়ারি শেষে সামগ্রিক রপ্তানি চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছর শেষে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয় এমন খাতগুলোর মধ্যে কৃষিপণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং হোম টেক্সটাইল খাতের আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কমেছে।
আগের অর্থবছরের প্রথম আট মাসে কৃষিপণ্য খাতে ৮৫ কোটি ৩২ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হলেও চলতি অর্থবছরের এই সময়ের মধ্যে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৬২ কোটি ৩১ লাখ ডলার। অর্থাৎ ২৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ পিছিয়ে গেছে রপ্তানি। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে এ খাত থেকে ১১৬ কোটি ২২ লাখ ডলারের রপ্তানি আয় এসেছিল।
একইভাবে আগের অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ৭৯ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হলেও এবার বিদেশে গেছে ৬১ কোটি ডলারের পণ্য। এ হিসাবে রপ্তানি ২৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ পিছিয়েছে। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মোট ১১২ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের পাটপণ্য রপ্তানি হয়েছিল।
একইভাবে হোম টেক্সটাইল খাতের আয় ২২ দশমিক ৫৩ শতাংশ পিছিয়ে গেছে। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ৯৯ কোটি ৩৭ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হলেও চলতি অর্থবছরের আট মাসে রপ্তানি হয়েছে ৭৬ কোটি ৯৮ লাখ ডলারের পণ্য।
তবে এক বিলিয়ন ক্যাটাগরিতে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের অবস্থান কিছুটা ভালো। আগের অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ৭৮ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হলেও চলতি অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৮৩ কোটি ২৩ লাখ ডলারের পণ্য। ফলে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে এগিয়ে আছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের খাত। গত অর্থবছরে মোট ১২৪ কোটি ৫১ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল এ খাত থেকে।