প্রাথমিক শিক্ষকদের যেভাবে অনলাইনে বদলি

16

পূর্বদেশ ডেস্ক

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বদলির কাজটি হবে পুরোপুরি অনলাইনে। নির্ধারিত একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে নির্ধারিত আইডি ব্যবহার করে শিক্ষকদের বদলির জন্য আবেদন করতে হবে। এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ওই শিক্ষক বদলির যোগ্য কি না বা কোন বিদ্যালয়ে বদলি হবেন, তা নির্ধারণ হবে।
নতুন এই পদ্ধতিতে বদলি প্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদনটি করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনিও ওই সফটওয়্যার ব্যবহার করেই যাচাই করে দেবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি সেটি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার (ডিপিইও) কাছে। ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠিয়ে দেবেন আবার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির বিষয়ে আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
তিন ধাপের এই যাচাইয়ে প্রত্যেক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তিন দিন করে সময় পাবেন। এই তিন দিনের মধ্যে যাচাই করে নিষ্পত্তি না করলে সেটি স্বয়ংক্রিয় ভাবেই যাচাইয়ের জন্য নিয়োজিত পরবর্তী ব্যক্তির কাছে চলে যাবে। তখন নিষ্পত্তি না করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। বুধবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে এই বদলি শুরু করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। এদিন শুধু পরীক্ষামূলকভাবে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে নতুন পদ্ধতিতে ১৮টি বিদ্যালয়ে শূন্য পদে বদলি করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নতুন এই পদ্ধতিতে আগামী মাস (আগস্ট) থেকে সারা দেশে বদলির কাজ শুরু করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
তবে ঢাকাসহ ১১টি মহানগরে বদলির এই কার্যক্রম আপাতত বন্ধ থাকবে। মহানগরের ক্ষেত্রে পৃথক ব্যবস্থা করা হবে। তাই মহানগরের বাইরে কর্মরত কোনো শিক্ষকের মহানগরে বদলি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। উল্লেখ্য, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। তবে বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
বর্তমানে সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। এগুলোতে মোট শিক্ষক আছেন প্রায় পৌনে ৪ লাখ। এখন নতুন করে আরও ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। করোনার সংক্রমণজনিত পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলির কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এখন সেই কার্যক্রম আবার শুরু হলো। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, বদলিকে কেন্দ্র করে মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর এবং উপজেলা পর্যায়ে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো। নানা জায়গা থেকে বদলির জন্য সুপারিশ, যোগাযোগ, অনুরোধ, আবেদন, সাক্ষাৎ এগুলো ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এতে শিক্ষকেরা ঠিকমতো বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে পারতেন না, পাঠদান কার্যক্রম বিঘিœত হতো। এ জন্য তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির সহায়তায় সফটওয়্যার তৈরি করে বদলির কাজটি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর ফলে শিক্ষকদের আর এখানে-সেখানে বদলির জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না, কারও কাছেও যেতে হবে না। এর আগে গত ৩০ জুন গাজীপুরের কালিয়াকৈরে এই কার্যক্রমের পরীক্ষামূলক (পাইলটিং) উদ্বোধন করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। পরীক্ষামূলকভাবে ১৫ জুলাই পর্যন্ত যেসব শিক্ষক ওই উপজেলায় বদলির আবেদন করেছিলেন, তাদেরই বদলির আওতায় আনা হয়েছে। যার মাধ্যমে গতকাল বদলি করা হয়েছে।