প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রেখেই উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত রাখা জরুরি

19

 

বর্তমানে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড চলছে। বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ধারাবাহিকভাবে সরকার থাকার কারণে দেশের সর্বক্ষেত্রে উন্নয়ন কর্মকান্ড এগিয়ে যাচ্ছে। সড়ক যোগাযোগ, সেতু-কালভার্ট, রেল যোগাযোগ, শিল্প-কারখানা, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, পদ্মাসেতু এবং বঙ্গবন্ধু টানেলের মতো বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে দেশে। দেশের অর্থনীতিকে বিশ্বমানের করে গড়ে তোলার জন্য দেশের যোগাযোগ, শিক্ষা, চিকিৎসা, শিল্প-বাণিজ্যসহ সর্বক্ষেত্রে আরো উন্নতি ও পরিবর্তন প্রয়োজন। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষে আমাদেরকে কৃষি-শিল্প-বাণিজ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসাক্ষেত্রে আরো দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হবে। কিন্তু দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা যদি দেশের প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করে আমাদের উন্নয়ন কর্মকান্ড এগিয়ে নিয়ে যাই, তা হলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় আমাদের তাবৎ উন্নয়নকে ধ্বংস করে দিবে। আমরা যদি ধানিজমি ভরাট করে যত্রতত্র ঘর-বাড়ি, মিল-কারখানা, ব্যবসাকেন্দ্র ইত্যাদি তৈরি করি তাহলে দেশের কৃষি উন্নয়ন ব্যাহত হবে। তখন আমাদের কৃষিজাত দ্রব্যের চাহিদা মিটাতে বিদেশ নির্ভরতা বেড়ে যাবে। পাহাড় ও বনজ সম্পদ নষ্ট করে উন্নয়ন করলেও দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হবে। নদী-নালা-খাল-বিল-ঝিল ভরাট করে উন্নয়ন করলেও প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটবে। দেশের প্রকৃতি এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রেখে আমাদেরকে উন্নয়নের মহাসড়ক পাড়ি দিতে হবে। প্রকৃতি স্বাভাবিকভাবে জনস্বাস্থ্য এবং মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার রক্ষক। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে পাহাড়, নদী, সমুদ্র, হাওর বাওর, ঝর্ণা, লেক, সমতলভূমি সবকিছুর প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করা সরকার ও দেশের সর্বস্তরের মানুষের কর্তব্য। কৃত্রিম অক্সিজেনের উপর ভর করে দেশের মানুষের পক্ষে জীবনপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখা কোন অবস্থাতেই সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে দেশের মানুষের জন্য পাহাড় ও বৃক্ষের স্বাভাবিক প্রকৃতি অক্ষুণ্ন রেখে অধিক পরিমাণে গাছ লাগিয়ে প্রাকৃতিক অক্সিজেন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে। পরিবেশ ধ্বংস করে দেশের উন্নয়ন হবে দেশের মানুষের জন্য আত্মঘাতি। বিপুল জনসংখ্যার এদেশে আমাদের মানচিত্র বৃদ্ধির সম্ভাবনা তেমন নেই। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে এমনিতে দেশে অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, বজ্রপাত, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সুনামির ঝুঁকি রয়েছে। তার উপর প্রকৃতি ধ্বংস করে উন্নয়ন দেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি আরো বাড়বে। জলবায়ু বিপর্যয় এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে এমনিতে আমাদের দেশ খাদের কিনারে অবস্থান করছে। তার উপর দেশের অপরিকল্পিত উন্নয়ন দেশটাকে মারাত্মক পরিস্থিতির মুখোমুখি নিয়ে দাঁড় করাবে।
দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে সমৃদ্ধ অঞ্চল চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম শহরে যে পরিমাণ চিকিৎসা সুযোগ থাকা প্রয়োজন তা নেই। এখানে বহু বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রয়োজন। হাসপাতাল নির্মাণের মতো চট্টগ্রামে সরকারি বেসরকারি বহু সুন্দর সুন্দর জায়গা রয়েছে। তৎমধ্যে চট্টগ্রাম শহর ও শহরতলীতে বহু স্থানে বিশেষায়িত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল নির্মাণ করা যায়। চট্টগ্রাম শহরের প্রাণ কেন্দ্রে একটি হাজি ক্যাম্প অকেজো পড়ে রয়েছে। সেই হাজি ক্যাম্পটি যেকোন বেসরকারি কর্তৃপক্ষকে দিয়ে সরকার মানসম্মত একটি হাসপাতাল নির্মাণ করাতে পারে। তাছাড়া সিআরবিতে একটি রেলওয়ের হাসপাতাল রয়েছে। সেই হাসপাতালকেও সক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা সরকার করতে পারে। সিআরবি চট্টগ্রামের একটি বিশেষ প্রাকৃতিক পরিবেশ সমৃদ্ধ স্থান। সিআরবির প্রকৃতি ধ্বংস করে বেসরকারি সংস্থার ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের প্রয়োজন নেই। যে কারণে চট্টগ্রামের বুদ্ধিজীবী মহল, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ, কবি-সাহিত্যিকসহ সর্বস্তরের চট্টগ্রামবাসী সিআরবিতে ৫০০ শয্যার বেসরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের তীব্র বিরোধিতা করছে। রেলওয়ের জায়গা সিআরবি চট্টগ্রামবাসীর কাছে প্রাকৃতিক হাসপাতালের মতোই মূল্যবান। সাংস্কৃতিক কর্মকাÐ ছাড়াও এখানে মানুষ বিশুদ্ধ বাতাসের শ্বাস নেয়ার জন্য প্রায় সমবেত হতে দেখা যায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ স্বাভাবিক রাখার পক্ষে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করে তাঁর বক্তব্যে সমগ্র বিশ্ববাসীকে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন। দেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের পরিবেশ বিনষ্ট করবে এমন সত্য স্বীকার করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্প্রসারণ না করার কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। চট্টগ্রামের সিআরবি’র প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সিআরবিতে যে বেসরকারি হাসপাতাল তৈরির অনুমোদন দিয়েছেন তা বাতিল করে চট্টগ্রামের অন্যত্র সরিয়ে নিবেন এমন আশা চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনসহ সমগ্র চট্টগ্রামবাসীর। হাসপাতাল নির্মাণ তথা উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রকৃতি ও পরিবেশকে অক্ষুণ্ন রাখা দেশ, সরকার ও দেশবাসীর স্বার্থে একান্ত জরুরি।