প্রতি মাসে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয়ের নীতিমালা হচ্ছে

27

ঢাকা প্রতিনিধি

বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে সরকার চাইলে যেকোনও সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম সমন্বয় করতে পারবে। এমন বিধান যুক্ত করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) আইন-২০২৩ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করা হলে অনুমোদন পায়।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন প্রস্তাব অনুমোদনের বিষয়ে জানান।
এটি সংসদে পাস হলে বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার চাইলে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানির দাম পুনঃনির্ধারণ বা সমন্বয় করতে পারবে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) পাশাপাশি সরকার নিজেও এগুলোর দাম বাড়াতে-কমাতে পারবে।
সচিব বলেন, ইতোমধ্যেই এটি রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছে। ওই সময় জাতীয় সংসদের অধিবেশন চলমান না থাকায় আইনে কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। এখন সংসদের অধিবেশন চালু রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী সংসদে উত্থাপন করার জন্য মন্ত্রিসভায় আইনটি অনুমোদন করে নেওয়া হলো।
‘বিশেষ পরিস্থিতিতে’ জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম সরাসরি বাড়ানো কিংবা কমানোর ক্ষমতা কমিশনের পাশাপাশি সরকারের হাতে রাখতে ইতোমধ্যে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি হয়েছে। নিয়ম মাফিক গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদকে এ বিষয়ে অবহিতও করা হয়েছে।
আইনের যুক্ত করা নতুন ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, ভর্তুকি সমন্বয়ের লক্ষ্যে, জনস্বার্থে, কৃষি, শিল্প, সার, ব্যবসা-বাণিজ্য ও গৃহস্থালী কাজের চাহিদা অনুযায়ী এনার্জির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এর উৎপাদন বৃদ্ধি, সঞ্চালন, পরিবহন ও বিপণনের নিমিত্ত দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে বিদ্যুৎ উৎপাদন, এনার্জি সঞ্চালন, মজুতকরণ, বিপণন, সরবরাহ, বিতরণ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনঃনির্ধারণ বা সমন্বয় করিতে পারবে।
এদিকে গতকাল রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে সংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিদ্যুৎ,জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইনের সংশোধনী সংসদে পাসের আনুষ্ঠানিকতা সারা হলেই প্রতি মাসে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ে নীতিমালা হবে।
তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে প্রতি মাসে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও তেলের দাম সমন্বয় করা হয়। বাংলাদেশেও ‘বিশেষ পরিস্থিতিতে’ এ পণ্যগুলোর দাম সমন্বয় করা হবে।
বর্তমানে গ্যাস বিদ্যুতের মূল্য পরিবর্তন বা সমন্বয় করতে হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ও সংস্থাগুলোকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে আবেদন করতে হয়। সেই আবেদনের যথার্ততা যাচাই ও গণশুনানি করে কমিশনই ন্যায্যমূল্য ঠিক করে দেয়।
এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আইনটা নিয়ে আসা হয়েছে, সেটা হচ্ছে, ক্ষেত্র বিশেষে সরকার যাতে মূল্য সমন্বয় করতে পারে সেজন্য। আমরা আইনটা সংশোধন করতে যাচ্ছি, বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রতি মাসে যেন একটা অ্যাডজাস্টমেন্টে যেতে পারি। পাশের দেশেও নিয়মিত এনার্জির দাম সমন্বয় করে, এর সঙ্গে বিদ্যুতের দামও সমন্বয় করে। এখন সারা বিশ্বে একটা মন্দা অবস্থা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। জ্বালানির দাম বেড়ে গিয়েছিল। ইতোমধ্যে বিদ্যুতের উৎপাদন পর্যায়ে মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। এখন খুচরা পর্যায়ে বিইআরসি কী করে সেটা দেখার বিষয়। তারাই নতুন দাম ঘোষণা দেবেন।
বিশ্বে জ্বালানির দাম অনেক বেশি হলেও দেশে ভর্তুকি দিয়ে এখনও কমিয়ে রাখা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার হয়তো কিছু ভর্তুকি দেবে। তবে সেটা এত বেশি না। পাশের দেশ ভারতে গ্যাসের মূল্য প্রতি ইউনিট ৩২ টাকার বেশি, আর আমাদের দেশে ১২ টাকার মত। আমরা এখানে ভর্তুকি দিচ্ছি।
জ্বালানি সাশ্রয়ে গত বছর বেশ কিছু নির্দেশনা পালন করা হয়। এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এতে ঢাকা শহরে ১৭ শতাংশ বিদ্যুৎ ব্যবহার কমেছে ওই সময়। নতুন একাধিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসছে, তবু আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমে লোডশেডিং হবে কি না; জানতে চাইলে তিনি বলেন, মনে হয় না আগের মতো হবে। বিদ্যুতের ভালো সরবরাহ থাকবে।
বিইআরসির শুনানিতে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বিতরণ সংস্থাগুলোর অভ্যন্তরীণ সিস্টেম লস দূর করে বিদ্যুতের বাড়তি দাম সমন্বয় করা সম্ভব। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নসরুল হামিদ বলেন, সিস্টেম লস এক সময় ৪৪ শতাংশ ছিল। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ২২ শতাংশ সিস্টেম লস ছিল। এখন আমাদের ৭ শতাংশের মত সিস্টেম লস। তাহলে অপচয়টা হচ্ছে কোথায়? এখন যেটা অপচয় হচ্ছে, সেটা গ্রাহক পর্যায়ে। অনেক সারাদিন বিদ্যুতের সুইচ চালু করে রাখছে। এসি চলছে। এগুলোর দিকে নজর রাখতে হবে।