পূর্বদেশ এর বর্ষপূর্তি আজ

58

নিজস্ব প্রতিবেদক
বৈশ্বিক অতিমারি করোনা ভাইরাস মোকাবেলার মধ্যেই পেরিয়ে গেল আরও একটি বছর। দেশের পূর্বদিগন্তে এতদঞ্চলের পাঠকদের সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ খবর এবং উন্নয়ন-অগ্রগতি, সাহিত্য-সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বৈচিত্র্যময় বিষয়ে বিশ্লেষণধর্মী লেখায় সমৃদ্ধ বিশ্বাসযোগ্য একটি সংবাদপত্র উপহার দেয়ার কঠিনতম প্রতিশ্রæতি ও প্রত্যয় নিয়ে ‘ম্যাজিক ডেট’ ১২.১২.১২ তে ‘দৈনিক পূর্বদেশ’ নামে যে নতুন সূর্যের উদয় হয়েছিল, আজ ১২ ডিসেম্বর তা দশ বছরে পা রাখতে যাচ্ছে। সময়ের হিসাবে আজ রবিবার দৈনিক পূর্বদেশ- এর দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
দেশের সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার হিসেবে পরিচিত হাজার বছরের ঐতিহ্য ও ইতিহাসে অনন্য অবদান রাখা বীর প্রসবিনী চট্টগ্রামে মুক্তবুদ্ধি ও সৃজনশীলতার চর্চার ধারবাহিকতায় একদা আমরা যে পথচলা শুরু করেছিলাম, দেখতে দেখতেই তা পার করল নয়টি বছর। দশম বছরে এ পা রাখার শুভলগ্নে তাই আমরা সর্বপ্রথম সশ্রদ্ধ অভিবাদন ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই দৈনিক পূর্বদেশ- এর সম্মানিত অগণিত পাঠকদেরকে। আমাদের কণ্টকাকীর্ণ চলার পথে প্রতিনিয়ত অসামান্য প্রেরণা যুগিয়ে যাওয়া এতদঞ্চলের সংবাদপত্র পাঠক ছাড়াও এজেন্ট, হকার, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের যুগপৎভাবে দশম বর্ষে পদার্পণ এবং আরও বেশি দায়িত্ববান ষ পৃষ্ঠা ৭, কলাম ১.
ষ প্রথম পৃষ্ঠার পর
হওয়ার সংকল্প গ্রহণের এই আনন্দঘন মুহূর্তে শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বাঙালি জাতির বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে পূর্বদিগন্তের সংবাদপত্রের জগতে আবির্ভাব হতে পারার গর্ব ও অহংকার আমাদের অতিমাত্রায় উজ্জীবিত করে। দশম বর্ষে পদার্পণে গতকাল শনিবার মধ্যরাত ১২টা এক মিনিটে পত্রিকার কার্যালয়ে পূর্বদেশ কর্মীদের নিয়ে কেক কাটেন সম্পাদক মুজিবুর রহমান। একইসাথে সংক্ষিপ্ত পরিসরে দোয়া মাহফিলেরও আয়োজন করা হয়।
অনগ্রসর জনপদ বাঁশখালীর নাপোড়ার বাসিন্দা আলহাজ নজির আহমদ মাস্টার। শিক্ষকতার মহান পেশায় আলোকিত মানুষ গড়ার পাশাপাশি আলোকময় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাকেই যিনি নিজের জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর হাত ধরেই বাঁশখালীর দুর্গম অজ-পাড়ায় গড়ে উঠেছে অজ¯্র স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা। কর্মময় জীবনে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার অসামান্য তাড়না অনুভব করতেন যে কর্মযোগী; সেই কর্মগুণেই ‘মাস্টার’ শব্দটি কখন যে নিজের নামের অংশ করে নিয়েছেন তা নিজেও জানতেন না। বাঁশখালী ছাপিয়ে চট্টগ্রামের মানুষের মুখে যিনি ‘নজির আহমদ মাস্টার’ নামে সমধিক পরিচিতি লাভ করেছেন, সেই আলোকিত মানুষটির হাতেই পূর্বদিগন্তের সংবাদপত্র জগতে জন্ম নিয়েছিল আজকের পাঠকপ্রিয় দৈনিক পূর্বদেশ। অন্তর্লোকে পাড়ি জমালেও তিনি তাঁর কর্মগুণেই আমাদের মাঝে আছেন, থাকবেন অনন্তকাল। আজকের দিনে আমরা পরম শ্রদ্ধাভরে তাঁকে স্মরণ করছি।
গতিময় পথচলার নয় বছরে পূর্বদেশ চট্টগ্রামকে কী দিতে পেরেছে, যা দেয়ার প্রতিশ্রæতি বা সংকল্প ছিল তার কতটুকুই বা পূরণ করতে পেরেছে? প্রতিদিন সাতসকালে পাঠককে সত্য তথ্যনির্ভর ও বস্তুনিষ্ঠ তরতাজা সংবাদটুকু কী দিতে পেরেছে? পূর্বদেশ পাঠ করে পাঠক কী আদৌ কখনও উপকৃত হয়েছেন বা তৃপ্তিবোধ করেছেন? এরকম নানা প্রশ্ন প্রকৃতপক্ষে আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে করছি। আর নির্মোহভাবে সেসব প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টা করছি। আমরা সতর্ক হই। সাবধানে পা ফেলি। বাধা-বিপত্তি ও ঘাত-প্রতিঘাত ডিঙিয়ে যাই। তাই বেড়ে উঠার এই সময়ে আমাদের সাফল্য-ব্যর্থতা মূল্যায়ন করার ভার নিতান্তই পাঠকের। তারাই আমাদের মহামান্য বিচারক। বিরাজমান বৈশ্বিক নানা সঙ্কটের পাশাপাশি দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা পরিবর্তনের সাথী হয়েই আমরা অসংকোচ আর অশুভ শক্তিকে কেবলই সত্য ও সাহসের সাথে মোকাবেলা করার চেষ্টা করছি। কথায় বলা হয়- প্রয়োজন কোনও বাধা মানে না। আসলেই কী তাই? আমরা প্রতিনিয়ত প্রয়োজন মনে করি ভাল-মন্দ সবধরনের সত্য ও সঠিক তথ্য পাঠককে জানাতে। পাঠকের তথ্য জানার অধিকার নিশ্চিত করা আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নেতিবাচক আর ইতিবাচক-দুটোকেই আমরা তুলে ধরছি এবং ধরতে চাই পাঠকের কাছে। এর মধ্য দিয়েই আমরা সংবাদপত্র পাঠকের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি শ্রেণি-বৈষম্যহীন আর ভালোবাসায় ভরপুর উন্নত স্বদেশ বিনির্মাণের সহযাত্রী হয়ে এগিয়ে চলেছি।
মানবজীবনে শিশুকালকে সবচেয়ে ‘ভাল সময়’ বলে বিবেচনা করা হয়। নিষ্পাপ, নির্লোভ, কৌতুহলোদ্দীপ্ত আর আনন্দমুখরতায় পরিপূর্ণ থাকে বলেই শিশুকাল হয় স্বপ্নময়। পূর্বদেশও সময়ের অংকে এখনও তার শৈশবেই হামাগুড়ি দিচ্ছে। নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় সারিয়ে শুভবোধের স্বপ্ন দেখা, সাথে পাঠকদেরও স্বপ্ন দেখানোর চেষ্টা করে চলেছে। স্বপ্নহীন জীবন যেরকম অচল-অর্থহীন, তেমনি সৃজনশীলতার চর্চা ছাড়া সৃষ্টিও মূল্যহীন। পাঠককে সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখানোর পাশাপাশি খবরের ভেতরের খবর জানানোর আমাদের অন্তর্গত এই অদম্য তাড়না অব্যাহত রাখতে চাই আপনাদের উপর ভরসা করে। আমরা বিশ্বাস করি, এতদঞ্চলের সচেতন পাঠকমাত্রই আমাদেরকে কখনওই নিরাশ করবেন না।
পরিশেষে, আবারও আপনাদের মানে পাঠকদের কাছেই আমরা আশ্রয় খুঁজতে চাই। আমাদের উপর আপনারা যে বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপন করেছেন, তা যেন আগামীতেও অটুট রাখতে পারি পরম করুণাময়ের কাছে সেই সাহস, ধৈর্য এবং শক্তির প্রার্থনা করি। একুশ শতকের বিশ্বে তথ্য-প্রযুক্তির অবাধ প্রসারের তুমুল গতিময় সময়ে তারুণ্যের জয়গান মানবসভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অনন্য উচ্চতায়। আমরাও সেই সম্ভাবনাময় যাত্রার অংশীদার হতে চাই। সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার ও বীর প্রসবিনীর পরিচয়কে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়কে আমরা হৃদয়ে ধারণ করি। সেজন্য আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার আপনাদেরকে। আপনাদের সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া পূর্বদেশ পরিবার এক কদমও এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে না। তাই দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই মাহেন্দ্রক্ষণে সবাইকে আবারও জানাই নিরন্তর শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।