পিতার দাবি ডেঙ্গু চিকিৎসকের দাবি শ্বাসকষ্ট!

44

হাটহাজারীতে রোগীর মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। নিহতের পিতা বলছে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে তার মেয়ে শারমিন আকতারের (২১) মৃত্যু হয়েছে। তবে চিকিৎসক বলছে ডেঙ্গু রোগে নয়, বরং নিউমোনিয়া জনিত রোগে শ্বাস কষ্টে তার মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম শহরে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। নিহত শারমিন ফতেপুর ইউনিয়নের ভাবনিপুর সৈয়দ কোম্পানির বাড়ির মো. লিটনের স্ত্রী। তার ২টি পুত্র সন্তানও রয়েছে।
নিহতের পিতা মো. শরীফ কন্টেকটার জানান, সপ্তাহখানেক আগে আমার মেয়ে জ্বরে আক্রান্ত হয়। গত সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় জ্বর নিয়ে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করি। পরীক্ষার মাধ্যমে ওই হাসপাতালের চিকিৎসক নেজাম শারমিনের
ডেঙ্গু হয়েছে বলে জানান।
বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ওই হাসপতাল কর্তৃপক্ষ তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। বিকাল ৩ টার দিকে চট্টগ্রাম শহরে নেওয়ার পথে আমার মেয়ের মৃত্যু হয়।
তবে চিকিৎসক ডাক্তার নেজাম মুঠোফোনে জানান, ডেঙ্গু রোগে নয়, নিউমোনিয়া জনিত রোগে শ্বাসকষ্টে তার মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার রাতে আমি ওই রোগীকে দেখে একটি এক্স-রে করতে বলি। পরবর্তীতে রির্পোট দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীকে চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেই।
এদিকে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনজন ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা চলছে বলে জানান হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার মাইমুন রিদোয়ান। তিনি জানান, আজ (মঙ্গলবার) মেখল ইউনিয়নের ইছাপুর এলাকার মো. শফির পুত্র মো. রবিউল (২০) নামে এক যুবক হাসপতালে ভর্তি হয়েছে। যার অবস্থা আশঙ্কাজনক। এছাড়া গত শুক্রবার ধলই ইউনিয়নের মুনিয়া পুকুর পাড় এলাকার তৌহিদুল আলম এর পুত্র মো. সাকিব (২২) এবং রবিবার একই ইউনিয়নের শামসুল আলম চৌধুরীর পুত্র মো. মাসুম (৩০) হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগ নিয়ে ভর্তি হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এ এস এম ইমতিয়াজ হোসেন জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা হাটহাজারী উপজেলার অধিবাসী হলেও বিভিন্ন সময় তাদের প্রয়োজনে ঢাকা গিয়ে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে হাটহাজারীতে বসবাসকারী এমন কোন ব্যাক্তি ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার কোনো খবর তার কাছে জানা নেই বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ জুলাই (রবিবার) বিকালে হাটহাজারী পৌরসভার বাসস্টেশনস্থ একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার দুইজন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করেছিল। এরা হলেন উপজেলার মেখল ইউনিয়নের হুজুরের বাড়ির মৃত মো. ওমর চৌধুরী বাড়ির ব্যাংকার মো. তাহেরুল আনোয়ার (৫৩) ও পাশ্ববর্তী রাউজান উপজেলার গহিরা এলাকার কোতয়ালী ঘোনা এলাকার সোনা মিয়া মিস্ত্রীর নতুন বাড়ির মো. জাফরের পুত্র মো. জাবেদ (২১)।
তারা উভয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল (চমেক) কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ১৬নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিল। এছাড়া ৩০ জুলাই (মঙ্গলবার) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে নতুন করে রিমু আক্তার (৩০) নামে এক গৃহবধূকে ডেঙ্গু রোগী হিসেবে শনাক্ত করেছিল পৌর এলাকার উক্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি। এসব রোগীদের কর্মস্থল ঢাকায় হওয়ায় তারা সেখানে বসবাস করত।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, এ বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু প্রবলভাবে দেখা যাচ্ছে। বিগত সময়ে এতোটা প্রকোপ ছিল না। এডিস মশার প্রজনন ক্ষমতা চক্রাকার হারে বাড়ার কারণে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক্তন চিপ মেডিকেল অফিসার ডা. মো. তফজ্জল হোসেন বলেন, বর্ষা মৌসুমে এডিস মশার বিস্তার সবচেয়ে বেশি ঘটে। জুন-আগস্ট মাস এজন্য সবচেয়ে উপযোগী। কারণ এ সময় থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হয়। পরিষ্কার পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তারের বেশি সুযোগ পায়। তাই তিন দিনের বেশি কোথাও পানি জমে থাকতে দেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে আমাদের সকলকে খুব বেশি সচেতন থাকতে হবে।