পাহাড় ধসের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি

5

জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ পক্ষে বর্ষার মতো বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। যা এখনো থামেনি। কখনো লাগাতার আবার কখনো বিরামের পর বৃষ্টি ও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষাকালে অতিবৃষ্টি কিংবা লাগাতার বৃষ্টির মধ্যে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ধস একটি নিয়মিত দুর্যোগ। মাঝেমধ্যে পাহাড় ধসের ফলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলায় পাহাড়ের পাদদেশে অসংখ্য অবৈধ বস্তি ও কাঁচা-পাকা ঘর-বাড়ি নির্মিত হয়েছে। বর্ষাকালে এসকল বস্তি এবং বসতবাড়িতে বসবাস খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। পাহাড়ধসে জানমালের ব্যাপারে ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে নিকট অতীতে। রাঙামাটি ও চট্টগ্রাম শহরসংলগ্ন বিভিন্ন পাহাড়ধসজনিত হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। তারপরও ছিন্নমূল দরিদ্র-অসহায় মানুষ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে।
এক শ্রেণির অবৈধ দখলদার পাহাড়ের পাদদেশে কাঁচা-পাকা ঘর নির্মাণ এবং বস্তি স্থাপন করে ঘৃণ্য বাণিজ্যে লিপ্ত। সেখানে স্বল্প আয়ের মানুষ এবং গৃহহীন মানুষেরা কম ভাড়ায় বসবাস করতে দেখা যায়। আবার নদী সিকস্তি, ছিন্নমূল, দরিদ্র অসহায় বহু মানুষ পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন সরকারি পাহাড়ের পাদদেশে অবৈধ বাসগৃহ নির্মাণ করে বসবাস করছে। দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদন হতে জানা যায়- বান্দরবানে পাহাড়ের পাদদেশে লক্ষাধিক মানুষ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করছে। চট্টগ্রাম ও পার্বত্য জেলাসমূহের জেলা প্রশাসন বর্ষাকালে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নানাভাবে সতর্ক করে আসছে। মাইকিং করে সমূহ বিপদ হতে মানুষদের রক্ষা করতে জেলা প্রশাসনের আন্তরিকতার অভাব নেই।
দৈনিক পূর্বদেশ এর প্রতিবেদন হতে জানা যায়- পার্বত্য জেলা বান্দরবানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে লক্ষাধিক মানুষ। এই জেলার সাতটি উপজেলা ও ২টি পৌরসভা এবং ৩৩টি ইউনিয়নে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করেই পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে ঝুঁকিতে বসবাস করে আসছে এসকল মানুষ। তা ছাড়া চট্টগ্রামের পাহাড়সমূহের পাদদেশেও একই অবস্থা পরিলক্ষিত হয়।
দেশে অপরিকল্পিতভাবে পাহাড়কাটা, বৃক্ষনিধনের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও এক শ্রেণির মানুষ তা মানছে না। যার কারণে বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধসের দুর্ঘটনা বেশি পরিমাণে সংঘটিত হয়। দেখা যায়, যারা এসব এলাকায় বসবাস করে তারা বেশিরভাগ হতদরিদ্র মানুষ। তাদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার কার্যকর ব্যবস্থা ছাড়া পাহাড়ধসের ক্ষয়ক্ষতি এবং অপমৃত্যু হতে তাদের রক্ষা করা সম্ভব নয়। লাগাতার বৃষ্টির কারণে বর্তমানে পাহাড়ধস এড়ানো কোন অবস্থাতে সম্ভব নয়। সুতরাং জীবন ঝুঁকিতে বসবাসকারী এসকল হতদরিদ্র মানুষকে বাঁচানোর জন্য সরকার ও প্রশাসনের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। শুধু মাইকিং এবং নোটিশ জারি করে দায়সারা হলে পাহাড়ধসের দুর্ঘটনা হতে সংশ্লিষ্ট লোকজনকে নিরাপদ রাখা সম্ভব হবে না। তাদের বর্ষা মৌসুমে থাকার বিকল্প ব্যবস্থাসহ স্থায়ীভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করা জরুরি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে পাহাড়ের পাদদেশে জীবনঝুঁকিতে বসবাসকারী হতদরিদ্র মানুষের সমস্যা সমাধানে সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের এগিয়ে আসতে হবে আন্তরিকতার সাথে।