পর্যটন খাতকে প্রাধান্য দেওয়ার প্রস্তাব মেয়রের

23

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, পাহাড়-সমুদ্র বেষ্টিত বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। অনিন্দ্যসুন্দর এ নগরীকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। আগামী ২০ থেকে ২৫ বছরে এ সুযোগ কাজে লাগাতে না পারলে নগরী ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে। তাই চট্টগ্রামকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে কি কি করা যায় সেগুলো মহাপরিকল্পনায় রাখতে হবে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় মাস্টার প্ল্যান (২০২০-২০৪১) বাস্তবায়নে চসিক কাউন্সিলরদের সমন্বয়ে অংশীজন সভার আয়োজন করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র এসব কথা বলেন। সভায় আগামী জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত সরবরাহের অনুরোধের জবাবে আরো বিশদ আলোচনার সুযোগ চেয়েছে চসিক। এসময় মহাপরিকল্পনার প্রাথমিক তথ্য সংরক্ষণ, পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয়ের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন পরিকল্পনা প্রণয়ন কমিটির টিম লিডার ড. আহসানুল কবির।
সভায় নগরীর বাস্তবসম্মত মহাপরিকল্পনা গড়ে তুলতে দু’টি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সিডিএ’র পক্ষ থেকে। এর মধ্যে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, ওয়ার্ড সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখা প্রতিনিধিদের (চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষাবিদ) সমন্বয়ে একটি গ্রুপ তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সিডিএ’র পক্ষ থেকে। দ্বিতীয় প্রস্তাবটি হলো নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডকে ১০ জোনে ভাগ করে অংশীজন সভার আয়োজন করা। এতে দুই থেকে তিনটি করে ওয়ার্ডকে সমন্বিত করে একটি করে জোন গড়ে তোলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এসব জোনের আপডেট তথ্য জানানোর প্রস্তাব করা হয় সিডিএ’র পক্ষ থেকে।
কিন্তু এ প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে চসিক কাউন্সিলরা বলেছেন, এক এক ওয়ার্ডের সমস্যার ধরন ভিন্ন। আবার পাশাপাশি ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে সড়ক সংযোগ, খালের পানি প্রবাহ সংযোগসহ বিভিন্ন বিষয় সংযুক্ত। তাই তাড়াহুড়ো করে চসিক কাউন্সিলরদের পক্ষ থেকে মহাপরিকল্পনার জন্য প্রস্তাবনা দেওয়া হলে তাতে ভুলভ্রান্তি হওয়ার সুযোগ থাকতে পারে। এতে করে ভবিষ্যতে মাস্টার প্ল্যান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাবে। তাই সমস্যা সমাধানে ওয়ার্ডভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন অংশীজন সভা আয়োজনের অনুরোধ জানায় চসিক।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, বিশেষ অতিথি ছিলেন সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ। চসিক কাউন্সিলরদের প্রস্তাবনায় সমর্থন জানিয়ে প্রধান নির্বাহী শহীদুল আলম বলেন, একটি শহরে ১৫ থেকে ২০ বছর পর পর মাস্টার প্ল্যান করা হয়। কাজেই সময় নিয়ে পরিকল্পনার সুযোগ দিতে হবে। জোনভিত্তিক নয়, প্রয়োজনে প্রতিটি ওয়ার্ডের প্রতিনিধিদের সাথে আলাদা করে বসতে হবে। সমস্যা ও সমাধানগুলো নখদর্পণে চিহিৃত করতে হবে। নগরীতে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সিডিএ-চসিকের দায়িত্বশীলদের সমন্বয় করে কাজ করার আহবান জানান সিডিএ চেয়ারম্যান ও চসিক মেয়র।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম বলেন, নগরীর মাস্টার প্ল্যান তৈরি করতে গেলে চসিক কাউন্সিলরদের মতামত অপরিহার্য। এই লক্ষ্য নিয়ে আজকের এই অংশীজন সভা। প্রত্যেক ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক অংশীজন সভা করা হবে। এ সভায় প্রত্যেক শ্রেণী পেশার মানুষের মতামত গ্রহণ করা হবে। এ মাস্টার প্ল্যান ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
শুধুমাত্র পরিকল্পনা করলেই একটি নগরী পরিকল্পিত হয়ে উঠে না মন্তব্য করে সভায় মেয়র বলেন, ‘এ শহরে পাহাড় ছিল, আমরা আবাস গড়ে পাহাড় নষ্ট করেছি। নদী ছিল, দখল-ভরাট করে জলাবদ্ধতাকে আশীর্বাদ জানিয়েছি। বলতে বাধ্য হচ্ছি, জলাবদ্ধতার প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে পরিকল্পিত উপায়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। শীতকালে খালের কাজ করলে কেন রাস্তায় পানি উঠবে। আমরা রিটেনিং ওয়াল চাই না, খাল যত গভীর হবে পানি তত সহজে যাবে। আগামী মার্চের মধ্যে পানি চলাচল স্বাভাবিক না হলে একগলা পানি হবে বর্ষায়। তাই মাস্টার প্লানে পাহাড়, খেলার মাঠ, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও সিএস জরিপ অনুসারে খাল রক্ষার রূপরেখা থাকা উচিত।’