পর্যটকদের ফেলা বর্জ্যে দূষণের শিকার হালদা

77

দেশের একমাত্র মিঠা পানির প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী এখন নান্দনিক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে রূপ লাভ করেছে। সম্প্রতি এ নদীর ভাঙনরোধে ১২ কিলোমিটার জুড়ে হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে বেড়িবাঁধ। যা হয়ে ওঠেছে পর্যটকদের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম।
প্রতিদিন শত শত পর্যটক ঘুরতে আসছেন। কিন্তু তারা (পর্যটক) বিভিন্ন খাবারের অবশিষ্ট অংশ নদীতে ফেলছে। ফলে নদী দূষণের পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে হালদা ও এর আশপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ।
সরেজমিন দেখা গেছে, নদীর পাড়ে প্রতিদিন শত শত পর্যটক আসেন। বিশেষ করে বিকালে নদীর মুগ্ধ করা রূপ ও নদীর অন্যতম জলজ প্রাণি শুশুক দেখতে আসা মানুষের ভিড় বেশি হয় উত্তর মাদার্শার রামদাস চৌধুরী হাটের হালদা পাড়ে। পর্যটকদের জন্য ইতিমধ্যে নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অন্তত ১৫-২০টি খাবারের দোকান। এসব দোকান থেকে পর্যটকরা ক্রয় করেন খাবার। কিন্তু বর্জ্য সংগ্রহের জন্য কোন ডাস্টবিন নেই। তাই পর্যটকরা খাবারের উচ্ছিষ্ট, প্লাস্টিকের বোতল, প্যাকেট এবং পলিথিন হালদা নদীতে ফেলছেন। এতে দূষিত হচ্ছে হালদা নদী ও প্রাকৃতিক পরিবশে।
হালদা রক্ষা কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম মুন্না বলেন, প্রতিদিন পর্যটকদের ফেলা প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্য মা মাছ ও শুশুক বা ডলফিনের চরম ক্ষতি ডেকে আনছে। হালদাকে দূষণ থেকে বাঁচাতে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। না হয় চরম ক্ষতির মুখে পড়বে হালদা। মাছ, শুশুক বা ডলফিন মারা যাচ্ছে। আমাদের সচেতন হতে হবে। নদীতে ময়লা ফেলা বন্ধ করতে হবে।
এদিকে গতকাল বুধবার হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুহুল আমিন হালদা নদীর পর্যটন স্পটটি পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া তিনি উত্তর মাদার্শা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মঞ্জুর হোসেন চৌধুরী মাসুদ ও স্থানীয়দের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন।
এ সময় হালদা নদীর দূষণরোধ ও পরিবেশ রক্ষায় বেশকিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সিদ্ধান্তগুলো হল- হালদা পাড়ে ইউনিয়ন পরিষদের ছাড়পত্র ব্যতীত কোন ধরনের ভ্রাম্যমাণ খাবার দোকান বা টং দোকান বসানো যাবে না। ইউনিয়ন পরিষদের ছাড়পত্র ধার্যকৃত খাজনা পরিশোধ পূর্বক সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের নির্দেশনা মোতাবেক দোকান স্থাপন করা যেতে পারে। দোকান স্থাপন বাবদ আদায়কৃত খাজনা দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ শুধুমাত্র দূষণরোধে হালদা পাড়ে ডাস্টবিন বা ময়লার ঝুড়ি স্থাপন, পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগ ও নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দিতে পারবে। এছাড়া হালদা দূষণরোধে উপজেলা প্রশাসনের অনুমতিক্রমে যেকোনো পদক্ষেপ প্রহণ করতে হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউএনও রুহুল আমিন জানান, হালদার বেড়িবাঁধ এলাকায় ভ্রাম্যমাণ খাবার দোকান, টং স্থাপন করা হয়েছে। এসব দোকানের বর্জ্য হালদা নদীতে ফেলার কারণে নদীর পরিবেশ ও মাছের প্রজননক্ষেত্র নষ্ট হচ্ছে। তাই হালদা রক্ষায় কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। এতে হালদা দূষণমুক্ত হবে।