পরিবেশ অধিদপ্তরকে আরো কঠোর হতে হবে

6

রাজধানী ঢাকার বায়ু দূষণ নিয়ে বেশ কয়েকবছর ধরে মাতামাতি কম হয়নি। পরিবেশ অধিদপ্তরের বেশ কিছু তৎপরতা লক্ষ করা গেলেও তা মৌসুমি বায়ুর মত কিছুদিন পর পর আাসে আর যায়। বাস্তবে পরিবেশ বা বায়ু দূষণরোধে কার্যকর কোন কিছুই হয় না। আমরা শুনে আসছি ২০২৩ সালে বায়ুদূষণে দেশ হিসাবে শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। আর নগর হিসাবে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ নগর ছিল রাজধানী ঢাকা। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক এক গবেষণায় সেই সত্যতা পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের ‘বৈশ্বিক বায়ু মান প্রতিবেদন ২০২৩’-এ এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বায়ুদূষণের অন্যতম উপাদান পিএম ২.৫ বা অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার উপাদান ধরে এ বায়ুর মান নির্ণয় করা হয়েছে। জানা যায়, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার (পিএম ২.৫) উপস্থিতি ছিল ৭৯ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রাম। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বেঁধে দেওয়া মানদন্ডের চেয়ে অন্তত ১৬ গুণ বেশি। কাজেই পরিস্থিতির উন্নয়নে কর্তৃপক্ষের জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
বায়ুদূষণে ঢাকা নগরী গত কয়েক বছরে বারবার বিশ্বের শীর্ষস্থানে থাকলেও পরিস্থিতির উন্নয়নে কর্তৃপক্ষের জোরালো ভূমিকা দৃশ্যমান নয়। ফলে প্রতিবছর ঢাকার বায়ুদূষণ আগের বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। একসময় রাজধানীসহ সারা দেশের বায়ুদূষণের জন্য দায়ী করা হতো ইটভাটার ধোঁয়াকে। পরে সে জায়গা দখল করে নেয় যানবাহন, শিল্প-কলকারখানার ধোঁয়া। বর্তমানে বর্জ্য পোড়ানোর ধোঁয়া এক বড় সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে চট্টগ্রামেও ভয়াবহ বায়ূ দূষণের কথা উঠে এসেছে। অস্বাস্থ্যকর এ বায়ু দূষণে জনজীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতি আর অনিয়মের কারণে চট্টগ্রাম ও রাজধানীসহ সারা দেশে কালো ধোঁয়া সৃষ্টিকারী যানবাহন অবাধে চলাচল করছে। কাজেই সর্ষের ভেতরের ভূত তাড়াতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া না হলে দেশের বায়ুর মানের উন্নতি হবে কি না, এ বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। কয়েক বছর ধরে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প ও ছোট-বড় আবাসন প্রকল্পের নির্মাণযজ্ঞ বাড়িয়েছে দূষণ। দূষণ কমাতে সারা দেশে ব্যক্তিগত গাড়ি নিরুৎসাহিত করা দরকার। উন্নত গণপরিবহণব্যবস্থা গড়ে না উঠলে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমবে না। দেশে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে  বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের নজির দৃশ্যমান নয়। এ অবস্থায় বায়ুদূষণ ও অন্যান্য দূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে জনদুর্ভোগ আরও বাড়বে। দূষণ কমাতে ইলেকট্রিক যানবাহনের ওপর গুরুত্ব বাড়ানো যায় কি না, তা ভেবে দেখা দরকার।
বায়ুদূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন বয়স্ক, শিশু ও জটিল রোগে আক্রান্ত মানুষ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষ যত্নবান হতে হবে। দেশে পানিদূষণ ও অন্যান্য দূষণের বিষয়টিও বহুল আলোচিত। পানিদূষণের কারণে মারাত্মক দূষিত পদার্থ আমাদের খাদ্যচক্রে মিশে যাচ্ছে। ফলে মানুষ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সব ধরনের দূষণ রোধে কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে। তা না হলে মানুষ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হবে, যা দেশের টেকসই উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করবে।